সাতক্ষীরায় ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জিতিয়ে দিতে আশাশুনি থানার তৎকালীন ওসি গোলাম কবীর নৌকা প্রতীকের এক প্রার্থীর কাছ থেকে ২৬ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ জাকির হোসেন এই অভিযোগ করেন। এবিষয়ে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বলেও জানান।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাতক্ষীরা সদর থানার সদ্য বিদায়ী ওসি মোহাম্মদ গোলাম কবির।
আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন বলেন, আমি গত দুই টার্ম প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করি। গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমি ফের নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কারি। প্রতাপনগর ইউনিয়নটি দীর্ঘদিন ধরে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির হাতে ছিলো। সেসময় এখানে আওয়ামী লীগ একেবারেই কোনঠাসা অবস্থায় ছিল। জামায়াতের সন্ত্রাসী বাহিনী কর্তৃক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমানের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে সবকিছু পুড়িয়ে দেয়ার পর অস্তিত্ব সংকটে পড়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। আমি টানা দীর্ঘ ১০ বছর প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে জামায়াত-শিবির চক্র। তারা আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে।
শেখ জাকির হোসেন আরো বলেন, পঞ্চম ধাপে অনুষ্ঠিত গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আমাকে হারাতে স্বাধীনতা বিরোধীরা আবারো চক্রান্ত শুরু করলে উপায়ন্তর না পেয়ে আমি তৎকালিন আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম কবিরের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও সংখ্যলঘু সম্প্রদায়ের ভোটাররাসহ আওয়ামী লীগের ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে তিনি আমার কাছে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেন। সে অনুযায়ী আমি আমার স্ত্রীর বাবা’র বাড়ির সম্পত্তি বিক্রি ও ধার দেনা করে বিভিন্ন সময়ে সর্বমোট ২৬ লাখ ২০ হাজার টাকা ওসি মোহাম্মদ গোলাম কবিরকে প্রদান করি। কিন্তু নির্বাচনের দিন ওসি গোলাম কবির আমাকে কোন ভাবেই সহযোগিতা করা তো দূরের কথা সম্পূর্ন পরিকল্পিতভাবে ভোটে আমাকে হারিয়ে দেওয়া হয়। নির্বাচনের পরে তিনি সদর থানায় বদলি হয়ে আসেন। পরে সাতক্ষীরায় এসে তার সাথে দেখা করে টাকা ফেরত চাইলে তিনি কিছু টাকা ফেরত দিতে রাজি হয়ে আমাকে দুই লাখ টাকা অফার করেন। কিন্তু আমি দুই লাখ টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে সমুদয় টাকা ফেরতের দাবি করি। কিন্তু তিনি টাকা ফেরত না দিয়ে বিভিন্নভাবে তালবাহানা করতে থাকেন। তখন বাধ্য হয়ে আমি টাকা ফেরতের দাবিতে ওসি গোলাম কবিরের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।
তবে, পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) গোলাম কবির বলেন, নির্বাচন পরিচালনা করেন নির্বাচন কমিশনসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। আমাদের দায়িত্ব থাকে নির্বাচন কালিন সময় এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা। অন্য কিছু নয়। তিনি আরও বলেন, আমার সাথে শেখ জাকির হোসেনের কোন লেনদেন হয়নি। তিনি যে অভিযোগ করছেন তা সঠিক নয়।
খুলনা গেজেট/ টি আই