খুলনা, বাংলাদেশ | ২৯ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আজারবাইজানে কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলন শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ইউপি নির্বাচন এগিয়ে আনা সরকারের ইচ্ছের প্রতিফলন : মির্জা ফখরুল

গেজেট ডেস্ক

ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন এগিয়ে আনা ‘সরকারের ইচ্ছের প্রতিফলন’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তিনি দলের পক্ষ থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটের বিরোধিতার কথাও জানান।

আগামী ডিসেম্বরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এই মন্তব্য করেন। রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন শুধু সরকারের যে ইচ্ছে সেটাকে পালন করে। এই যে কিছুটা নিয়মভঙ্গ করে যেটা জানুয়ারিতে হওয়ার কথা, সেটা তারা ডিসেম্বরে করতে যাচ্ছে এটার একটা উদ্দেশ্য আছে। সরকারি দলকে সর্বময় ক্ষমতা দিতে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান আইন-২০২০ করা হচ্ছে।’

‘সেটা হচ্ছে- করোনার ভয়াবহতা নতুন করে দ্বিতীয় ধাপে এসেছে। এ সময়ে নির্বাচন করার অর্থ হচ্ছে জনগণের অংশগ্রহণ হবে না, জনগণ যাতে অংশগ্রহণ না করে সেটা তারা চাচ্ছে। পুরো নির্বাচনের সিস্টেমটা তারা নষ্ট করে ফেলেছে। আজকে নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে আমাদের ইচ্ছে করে না। আজকে দুঃখজনকভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন তারা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার অবস্থা তৈরি করেছে। তারই ফলশ্রুতিতে নির্বাচন কমিশনের এসব কথা।’

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিরোধিতা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ইভিএম গ্রহণযোগ্য নয়। এ দেশে এই মেশিন গ্রহণযোগ্য নয়। এটাতে দারুণভাবে ম্যানুপুলেশনের সুযোগ আছে। এর একটাই উদ্দেশ্য, একটা দলকে ক্ষমতায় রাখতে হবে, তার জন্য যা কিছু করা দরকার সেটাই তারা করছে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা জানি যে, এই নির্বাচন কমিশন কোনো কথাই শুনে না। তাদের দায়িত্ব সরকারের এজেন্ডাকে বাস্তবায়িত করা। সেই কাজই করে যাচ্ছে তাদের (নির্বাচন কমিশন) গঠনের পর থেকে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচনী আইনের তারা যে প্রস্তাব দিয়েছে- এটা অত্যন্ত অসৎ উদ্দেশ্যেই তারা করেছে।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন আইনের বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন প্রস্তাবিত আইনে অনেক মৌলিক বিধানই বদলে ফেলেছে। তারা যে নতুন আইনের প্রস্তাব করেছে, সেই আইনের একটা বড় অংশ… ধারা ৬৬ থেকে আরম্ভ করে প্রায় ৮৪ পর্যন্ত- এর কোনোটাই স্থানীয় সরকারের প্রচলিত যেসব আইন রয়ে গেছে তার কোনোটার মধ্যে নেই। এসব আছে বিধিমালার মধ্যে। কিন্তু প্রস্তাবে তো নির্বাচন কমিশন আগে বলে নাই যে, বিধিমালা থেকে এনে নতুন আইন করা হবে। কিন্তু বাস্তবে তারা সেটা করেছে। অর্থাৎ তারা যেটা বলেছে তারা সেখান থেকে সরে গেছে।’

‘আলাদা আলাদা আইনসমূহকে একীভূত করে একক আইন প্রণয়ন করা হলে ওই একীভূত আইন থেকে পৃথক পৃথক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জন্য সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধান খুঁজে খুঁজে বের করে বুঝা বা আয়ত্ত্বে আনা জটিল, কষ্টকর ও দুরূহ হয়ে পড়বে বিধায় কমিশনের এই উদ্যোগ অসঙ্গত ও পরিত্যাজ্য।’

এ সময় নতুন আইনের প্রস্তাবে রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারের মতো দীর্ঘদিনের পদবিগুলো বাংলাকরণের প্রস্তাব, ফেরারি আসামিদের নির্বাচন করতে না দেওয়া, প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগসমূহকে নতুন আইনে অন্তর্ভুক্ত না করা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক মনোনয়ন দেওয়া, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার নিয়োগের তালিকা বৈধ প্রার্থীদের দেওয়ার ব্যবস্থা না রাখা, ভোট গণনার সময়ে প্রার্থীদের এজেন্টদের না রাখা ইত্যাদি ব্যাপারে দলের আপত্তি তুলে ধরেন নজরুল ইসলাম খান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আমরা দাবি করছি, পৃথক পৃথক আইন থাকা সত্ত্বেও তাদের একীভূত করে চলমান করোনা সংকটকালে প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচনী আইন-২০২০ প্রণয়নের এই অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক উদ্যোগ থেকে কমিশন বিরত থাকবে। এটা আমরা আশা করছি।’

উপনির্বাচন প্রসঙ্গ

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ উপনির্বাচনের প্রচার চলছে। আমি দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করেছি, এটা নিয়ে মিডিয়ায় কোনো কাভারেজ হচ্ছে না। যার ফলে এখানে চরম অনিয়ম ঘটছে। এখানে নির্বাচন একটা প্রহসনে পরিণত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন একটা বশংবদ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে এটা প্রমাণ হচ্ছে।’

এই নির্বাচনের খবর প্রচারের জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, এমনিতেই নির্বাচন চলে গেছে, নির্বাচন প্রক্রিয়া ধ্বংস হয়ে গেছে। এর ওপর থেকে জনগণের আস্থা উঠে গেছে। এটা বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত করে ফেলতে পারে।

এ সময় জানানো হয়, নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আইনের বিষয়ে পর্যালোচনা করতে বিএনপি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে আহ্বায়ক করে নয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটি যে মতামত ও সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছে তা গত ৩১ অক্টোবরের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

পরে দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল এসব সুপারিশসহ দলের মহাসচিবের একটি চিঠি নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করেন।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!