একদিকে পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনৈতিক চেষ্টা যেমন চলছে, অন্যদিকে তেমনি থেমে নেই ইউক্রেনকে ঘিরে রাশিয়ার সমর সজ্জাও। নিজেদের সীমান্ত সংলগ্ন দেশটির তিন দিকেই শক্তি বাড়িয়েছে পুতিনের দেশটি।
গতকাল শনিবার ক্রমশ বাড়তে থাকা উত্তেজনার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একঘণ্টা ফোনালাপ করেছেন। সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়ানোর চেষ্টা থেকে হয়েছে সবশেষ এ আলাপ। খবর সিএনএন ও রয়টার্সের।
পশ্চিমা দেশগুলোর ‘যুদ্ধ শুরু হতে পারে’ এমন উদ্বেগের মধ্যেই ক্রিমিয়া উপদ্বীপের কাছে সমুদ্রে বড় ধরনের নৌ মহড়া করছে রাশিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, সম্প্রতি ইউক্রেন সীমান্তে লক্ষাধিক রুশ সেনা জড়ো হওয়ার খবরে খুব দ্রতই দখল অভিযান শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করতে শুরু করেছেন গোয়েন্দারা।
যুদ্ধ এড়ানোর লক্ষ্যে মরিয়া কূটনৈতিক চেষ্টার মধ্যে রাশিয়ার এমন সমর সজ্জাকে ইউক্রেনের জন্য আসন্ন হুমকি হিসেবে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকরা। তবে হামলা শুরু হলে কোন এলাকা থেকে শুরু হতে পারে সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে সিএনএন এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনের ওপর তিন দিক থেকে চাপ সৃষ্টি করেছে রাশিয়া।
এ প্রতিবেদনে ইউক্রেনের তিন দিকেই রাশিয়ার সামরিক সজ্জা বাড়ানোর তথ্য তুলে ধরে কোন দিক দিয়ে সম্ভাব্য আক্রমণের চেষ্টা হতে পারে সে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ দিক থেকে ক্রিমিয়ায়, দুই দেশের সীমান্তবর্তী রাশিয়ার অংশ এবং উত্তরে বেলারুশে সেনা শক্তি বাড়িয়ে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
ইউক্রেন এবং পশ্চিমা গোয়েন্দারা এ তিন এলাকাকে রণক্ষেত্র হিসেবে নজরে রাখছেন। এর প্রত্যেকটি এলাকাতেই রুশ সামরিক বাহিনীর অবস্থান পরিবর্তন চিহ্নিত করা হয়েছে।
রাশিয়া যেকোনো মুহূর্তে ইউক্রেনে আক্রমণ করে বসতে পারে—শক্তিধর পশ্চিমা দেশগুলো থেকে এমন হুঁশিয়ারি পেয়ে এক ডজনের বেশি দেশ তাদের নাগরিকদের ইউক্রেন ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। নাগরিকদের ফিরে আসতে বলা দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ রয়েছে। যদিও আক্রমণের ইচ্ছা থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে রাশিয়া, কিন্তু ইউক্রেনের সীমান্তে দেশটি এরই মধ্যে লাখখানেক সৈন্য মোতায়েন করেছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে শনিবার ফোন করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন—ইউক্রেনে আক্রমণ করলে চড়া মূল্য দিতে হবে রাশিয়াকে। অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলছেন—আক্রমণের যে হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে, তা আতঙ্ক তৈরি করতে পারে। এ আতঙ্ককে তিনি ‘শত্রুদের প্রিয় বন্ধু’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
আর, হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছে—যেকোনো সময় আক্রমণ হতে পারে। আকাশ থেকে বোমা মেরে আক্রমণ শুরু হতে পারে। এ ধরনের অভিযোগকে ‘উসকানিমূলক অনুমান’ বলছে রাশিয়া।
অগুরুত্বপূর্ণ কর্মীদের ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের মার্কিন দূতাবাস ছাড়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রোববার থেকে কনস্যুলার সংক্রান্ত কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে। যদিও জরুরি অবস্থা বিবেচনায় ‘পশ্চিমের শহর লিভিভে ছোট পরিসরে’ কনস্যুলার সার্ভিস চালু রাখা হবে।
কানাডার গণমাধ্যমের খবর—কানাডাও দূতাবাস কর্মীদের লিভিভে সরিয়ে আনছে। এ শহরটির সীমান্ত পোল্যান্ডের লাগোয়া। ইউক্রেনে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত মেলিন্ডা সিমন্স টুইট করেছেন, তিনি ও ‘কোর টিম’, অর্থাৎ একান্ত যাদের প্রয়োজন, কেবল তাঁরাই কিয়েভে অবস্থান করছেন।
রাশিয়া নিজেরাও কিছু পরিবর্তন আনছে। ‘কিয়েভ শাসক বা তৃতীয় কোনো দেশের উসকানি’র জন্য তারা ইউক্রেনে নিজেদের কূটনীতিকদের যতটা প্রয়োজন ততজন কর্মী রাখবে।
ইউক্রেনের বাইরে ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ১৫০ জনের একটি বাহিনী যুক্তরাষ্ট্র সরিয়ে আনছে। তারা বলছে, বাড়তি সতর্কতা হিসেবেই তাদের এ উদ্যোগ।
ডাচ মিডিয়ার দেওয়া তথ্য বলছে—ইউক্রেনে কোনো ফ্লাইট যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে ডাচ এয়ারলাইন্স—কেএলএম।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলছেন, যদি পশ্চিমা শক্তিগুলোর হাতে আসন্ন আক্রমণ নিয়ে কোনো সুনিশ্চিত প্রমাণ রয়েছে কি না, তিনি নিশ্চিত নন।
ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের সব তথ্যই মনে হচ্ছে গণমাধ্যমের কাছে আছে।’
‘আমরা ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত। আমরা জানি ঝুঁকি রয়েছে। যদি আপনার কাছে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ নিয়ে শতভাগ নির্ভরযোগ্য তথ্য থাকে, আমাদের জানাতে পারেন’, যোগ করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
ইতালি, ইসরায়েল, নেদারল্যান্ডস, জাপান, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, ডেনমার্ক, লাটভিয়া, বুলগেরিয়া ও স্পেন তাদের নাগরিকদের ইউক্রেন ত্যাগ করতে বলছে। কোনো কোনো দেশ ইউক্রেনে তাদের কূটনৈতিক কর্মীদের পরিবারসহ সরিয়ে এনেছে।
পুতিন-বাইডেন ফোনালাপ
হোয়াইট হাউস থেকে বার্তা দেওয়া হয়েছে—বাইডেন রুশ নেতা পুতিনকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন—যদি হামলা হয়, তাহলে এর ‘তাৎক্ষণিক ও কঠিন মূল্য চুকাতে হবে রাশিয়াকে।’
জো বাইডেন বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিকভাবে মোকাবিলায় প্রস্তুত এবং আমরা অন্য যেকোনো পরিস্থিতির জন্যও একইভাবে তৈরি।’
রুশ প্রশাসন মার্কিন প্রশাসনের এমন আশঙ্কাকে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের ‘হিস্টিরিয়া’ বা অমূলক শঙ্কা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। পুতিন বাইডেনকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার নিরাপত্তা বিষয়ক উদ্বেগ নিয়ে এখনও কথা বলছে না। তবে, রাশিয়া বলছে—দুই দেশের শীর্ষ নেতারা কথা চালিয়ে যাবেন।
ফরাসি দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে—ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ রুশ নেতা পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে বলেছেন, ‘ঘটনাপ্রবাহ যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে আন্তরিক সংলাপ হচ্ছে না।’
খুলনা গেজেট/ এস আই