ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তার জেরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোকে কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে- এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া। মস্কো থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন প্রশাসনের কাছে পাঠানো এক কূটনৈতিক বার্তায় এই হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
পশ্চিমা দেশগুলো কিয়েভে অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে যুদ্ধকে আরও উসকে দিচ্ছে বলেও জানানো হয় এই বার্তায়।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই দিন রাজধানী ওয়াশিংটনে রুশ দূতাবাসের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে একটি নোট পাঠিয়েছে মস্কো। সেখানে বলা হয়েছে, ‘এই সময়ে ইউক্রেনকে সামরিকীকরণ করা বা সামরিক সহায়তা দেওয়া খুবই দায়িত্বহীন পদক্ষেপ এবং আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের এমন দায়িত্বহীন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
যদি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা এই আহ্বানে কর্ণপাত না করে এবং ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রাখে, সেক্ষেত্রে তার পরিণতি হবে খুবই অপ্রত্যাশিত এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি হুমকির মুখে পড়বে।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররাষ্ট্রসমূহের নিরাপত্তা জোট ন্যাটো কয়েক দফা অস্ত্র ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ইউক্রেনকে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে অতিরিক্ত ৮০০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন সংবাদমাধমগুলো জানিয়েছে, সর্বশেষ এই সহায়তা প্রদানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসে কোনো আলোচনা হয়নি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ ক্ষমতাবলে এর অনুমোদন হয়েছে।
মার্কিন এই সহায়তা প্যাকেজের মধ্যে এমআই যুদ্ধ হেলিকপ্টার, সুইচব্লেড ড্রোন, সহজে পরিবহনযোগ্য ছোট আকারের কামানসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো নোটে মস্কোর পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটো মিত্ররা সম্ভবত ভুলে যাচ্ছে যে, অতি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এসব অস্ত্র যদি বেহাত হয় কিংবা ইউক্রেনের কোনো সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর হাতে পড়ে, সেক্ষেত্রে অনেক বড় বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।’
‘একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে, অন্যদিকে রাশিয়ার সঙ্গে প্রযুক্তিগত ও সামরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্কে না জড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে চাপ দিচ্ছে—এটিও অত্যন্ত আপত্তিকর।
পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোকে নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনীকে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিরিম পুতিন। তার দু’দিন আগে, ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই প্রদেশ দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন তিনি।
শুক্রবার এই অভিযান পৌঁছেছে ৫১ তম দিনে। এত দিন ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর অস্ত্র সহায়তা পাঠানোর ব্যাপারটি আমলে না নিলেও বুধবার কৃষ্ণ নাগরে রুশ যুদ্ধজাহাজ মস্কোভায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর থেকে এ বিষয়ে নড়ে চড়ে বসেছে মস্কো।
এদিকে, ইউক্রেনে রাশিয়ার সম্ভাব্য পারমাণবিক হামলার জন্য বিশ্বকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। যুদ্ধে এপর্যন্ত অন্তত ৩ হাজার ইউক্রেনীয় সেনা মারা গেছেন বলেও জানান তিনি। কিয়েভ অঞ্চলে ব্রিটেনের স্পেশাল ফোর্স ইউক্রেনের সেনাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। তবে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করা হয়নি। ইউক্রেনের রাজধানী ও তার আশেপাশের অঞ্চল থেকে ৯শ’ বেসামরিক নাগরিকের মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
এছাড়াও পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চলের পাশাপাশি কিয়েভ জুড়েও হামলার তীব্রতা বাড়ছে বলেও দাবি ইউক্রেনের।
যুদ্ধে এপর্যন্ত ৫০ লাখ মানুষ স্থানচ্যুত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এদিকে ইউক্রেনের অবরুদ্ধ শহরগুলোতে খাবারের অভাবে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। দেশটিতে ত্রাণ সরবরাহ নিরাপদ করতে দুই দেশের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।