দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে বলে দাবি করেছেন চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচারে পর ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে। তার সেরে উঠার বিষয়ে আশাবাদী হলেও তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
অস্ত্রপচার শেষে বৃহস্পতিবার দিববাগত রাত ১২টার দিকে হাসপাতালের নিউরো ট্রমা বিভাগের প্রধান নিউরোসার্জন মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন এসব কথা বলেন। তিনি জানান, ইউএনও ওয়াহিদার মাথার জটিল অস্ত্রোপচার করতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে। ছয় সদস্যের চিকিৎসক দল ওই অস্ত্রপচার করেন।
জাহিদ হোসেন বলেন, ইউএনও ওয়াহিদার মাথায় ভাঙা হাড়ের সাত-আটটি টুকরা ছিল। সেগুলো অস্ত্রপচারের মাধ্যমে জোড়া লাগানো হয়েছে। যেহেতু মাথার আঘাত, তাই সময় লাগবে। আগামী ৭২ ঘণ্টা তার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। তিনি আশাবাদী ওয়াহিদা সুস্থ হয়ে উঠবেন। তিনি আরও বলেন, রোগীর ডান পাশ প্যারালাইজড ছিল। আশা করছি সচল হয়ে যাবে। তবে সময় লাগবে। আল্লাহ ভরসা।
রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্স হাসপাতালের উপ-পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম জানান, ইউএনও ওয়াহিদার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। অস্ত্রোপচার শেষে তাকে আইসিইউতে অবজারবেশনে রাখা হয়েছে। আগের চেয়ে অবস্থা কিছুটা উন্নতি বলা যায়, তবে তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত নন।
এর আগে রাত ৯টার দিকে তাকে অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার আগে তার সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। প্রেশার চেক করে, অবস্থা স্বাভাবিক থাকায় তার অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা।
এদিকে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে চিকিৎসাধীন ওয়াহিদা খানমকে দেখতে আসেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
এ সময় প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ইউএনওদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার বিষয়ে ডিসি সম্মেলনে একটা দাবি ছিল। সেটি প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনেও আছে। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব ও জননিরাপত্তা সচিব এবং অর্থ সচিবের সঙ্গে এনিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ইউএনওদের বাড়িতে পাহারা দেয়ার জন্য আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য নিয়োগ করা বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলাকারী দুজন তরুণ। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে তাদের হালকা স্বাস্থ্য। তবে তাদের চেহারা পুরো বোঝা যাচ্ছে না। পুলিশ সুপারের বরাত দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিনি আশাবাদী, খুব দ্রুত তাদের গ্রেফতার করতে পারবেন। ইতোমধ্যে সিসিক্যামেরা ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করা গেছে। হামলাকারীদের চিহ্নিত করা সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত কারণ জানা যায়নি। তদন্ত চলছে, কারণ বের করার চেষ্টা চলছে।
এর আগে ওয়াহিদা খানমের বাবা ওমর আলী শেখ জানিয়েছিলেন, ‘বুধবার দিবাগত রাত ৩টা-সাড়ে ৩ টার দিকে মেয়ের চিৎকার শুনে ওপর তলায় যাই। গিয়ে দেখি মুখোশধারী এক ব্যক্তি মেয়ের কাছে চাবি চাচ্ছিলো। টাকা-পয়সা ও গহনা কোথায় তা জানতে চাচ্ছিল বারবার। তথ্য না দিলে আমার নাতিকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিচ্ছিল ওই ব্যক্তি। একপর্যায়ে আমি তাকে ধরে ফেলি। এ সময় তার সঙ্গে আমার ধস্তাধস্তি শুরু হয়। তখন হাতুড়ি দিয়ে আমার ঘাড়ে আঘাত করলে মেঝেতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যাই। এরপর কি হয়েছে আমি বলতে পারি না।’
রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাড়ির ভেতরে দুইজনকে এখন পর্যন্ত আমরা দেখেছি। একজন পিপিই পরা ছিলো। দু’জনকে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। এখানে যাদেরকেই আরো পাবো আমরা আইডেন্টিফাই করার চেষ্টা করবো।’
খুলনা গেজেট / এমএম