ডুমুরিয়া উপজেলার পশ্চিম বলাবুনিয়া গ্রামের আলোচিত সৌরভী মন্ডল হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে খুলনা পিবিআই। গত দু’দিন আগে এ হত্যাকান্ডের প্রধান আসামি প্রণব মন্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাকান্ডে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে সে। জবানবন্দি রেকর্ড করেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৪ এর বিচারক মো: আজহারুল ইসলাম।
বুধবার(১ জুন) দুপুরে এ ব্যাপারে খুলনা জেলা পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে পিবিআই এর মুখপাত্র সৈয়দ মোশফিকুর রহমান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, নিহত সৌরভী মন্ডল পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের একজন মাঠ কর্মী ছিলেন। তিনি সুদেরও ব্যবসা করতেন। হত্যা মামলার প্রধান আসামি প্রণব মন্ডল সৌরভী মন্ডলের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ধার নেয়। একাধিকবার টাকা ফেরত দিতে চেয়ে ওয়াদা ভঙ্গ করে সে।
২০১৯ সালের ৩ জুলাই সকালে সৌরভী মন্ডল টাকা ফেরত নিতে প্রণবের বাড়িতে যান। টাকা না দিলে মামলা করার হুমকি দেয় সৌরভী। ঐ দিন রাতে প্রণব স্থানীয় একটি অনুষ্ঠানে ছিল। বাড়ি ফিরে যাবার পথে প্রণব সৌরভী মন্ডলের সাথে দেখা করতে তার বাড়িতে যায়। ঐ সময়ে সৌরভীকে সে জানায় তার অনেক সমস্যা আছে টাকাটা দিতে পারবেনা। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাকবিতান্ড হয়। একপর্যায়ে প্রণব তার গলা চেপে ধললে সৌরভীর মৃত্যু হয়। নড়াচড়া করতে না দেখে সৌরভীর গলায় গামছা পেচিয়ে বারান্দায় ফেলে পালিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, তাকে যেন কেউ সন্দেহ না করে সেজন্য সকালে গ্রামের মানুষের সাথে সৌরভীর লাশ দেখতে তাদের বাড়িতে যায় প্রণব। হত্যাকান্ডের ৩ দিন পর পালিয়ে প্রণব ভারতে চলে যায়। দীর্ঘ আড়াই বছর পর দেশে ফেরে সে। তার মোবাইল ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার বর্ণনা দিয়েছে সে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আদালতে হত্যাকান্ডের বিবরণ দিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে সে।
কিভাবে তাকে সন্দেহ করা হয়
সৌরভী হত্যাকান্ড মামলাটি ছিল একটি ক্লুলেস। নিহতের স্বামী ৭ জন আসামির নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন। আসামিরা সকলে নিহতের প্রতিবেশী। তাদের সাথে পূর্ব শত্রুতা ছিল। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। তারা সকলে জামিনে আছে। প্রথমদিকে মামলাটি ডুমুরিয়া থানার পুলিশ তদন্ত করে। কিন্তু পুলিশের তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় বাদীর আবেদনে আদালত ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়। পিবিআই ঘটনাস্থল ও আশপাশের মানুষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। এক সময়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানতে পারনে প্রণব নিহতের কাছ থেকে নগদ ১৫ হাজার টাকা ও হত্যাকান্ডের ৩ দিন পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছে। তখনই পিবিআই নিশ্চিত হয় এ হত্যাকান্ডের সাথে প্রণব জড়িত আছে। দীর্ঘ আড়াই বছর পর প্রণব ডুমুরিয়ায় ফিরে আসে। গ্রামের বাড়িতে না গিয়ে ডুমুরিয়ার কুলটি গ্রামে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকে। পরে বিভিন্ন সোর্স মারফত ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রণবকে গ্রেপ্তার করা হয়।