খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  নারী বিশ্বকাপের মূলপর্বে বাংলাদেশ
  জনগণই দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে : মির্জা ফখরুল
  আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে দেশের ইতিহাসে সর্বোত্তম: প্রধান উপদেষ্টা

আসুন, দলকানা না হয়ে দেশকানা হই

এ এম কামরুল ইসলাম

মাঝে মাঝে ক্ষুদ্র বার্তা লিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করি। এইসব ক্ষুদ্র বার্তায় মনের কথা পুরাপুরি বুঝানো সম্ভব নয়। মহান পন্ডিত ব্যক্তিরা তাঁদের প্রজ্ঞা দিয়ে কম শব্দের ব্যবহার করে মনের কথা সাধারণ মানুষের কানে সঠিকভাবে পৌঁছে দিতে পারেন। কিন্তু আমার মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে তা সম্ভব নয়। তবুও মাঝে মাঝে লিখি। অবসর জীবনে এটা আমার একটা বদভ্যাস হয়ে গেছে মনে হয়। আমার এই বদভ্যাসটা দমন করতেও চেষ্টা করি। কিন্তু মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির মতো আমারও এইসব প্রবৃত্তি দমন করার ক্ষমতা একটু কম। তাই সমাজ, দেশ ও বিশ্বের নানান অসংগতি দেখে নিজেকে সংবরণ করতে পারি না। যতবার প্রতিজ্ঞা করি আর কখনো লিখবো না, ততবারই প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করি। আমার লেখাতেও অনেক ভুলভাল থাকে। অনেক সময় মানুষের মন্তব্য পড়ে সেটা বুঝতে পারি, আবার কখনো নিজে নিজেই অনুমান করতে পারি। কখনো ভুল থেকে শিক্ষা নেই, আবার কখনো শিক্ষা না নিয়ে বার বার ভুল করে যাই। আমার মতো একজন নিম্ন সাধারণ মানুষের জন্য এটাই স্বাভাবিক।

কথাটা কেন উঠালাম তা একটু খুলে বলার চেষ্টা করি। আজকের লেখাটি ক্ষুদ্র বার্তার পর্যায়ে না পড়লেও এখানেও অনেক ভুলভাল থাকতে পারে। আমি আগেই বলেছি, আমি একজন নিম্ন সাধারণ মানুষ।

আমার ক্ষুদ্র বার্তাগুলি সাধারণত বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক ইঙ্গিত বহন করে। আমি যা ইঙ্গিত করি তা প্রায় নিরানব্বই ভাগ সাধারণ মানুষ একমত পোষণ করেন। তারা আমার পোস্টে মন্তব্য করে আরও উৎসাহিত করেন। কখনো আমার পোস্টের সাথে তাদের মূল্যবান মতামত সংযোজন করে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানকে বর্ধিত করেন। আমি আমার সাধ্যমতো তাদের মন্তব্যের সম্মান প্রদর্শন করতে চেষ্টা করি। কিন্তু একশো ভাগের একভাগ মানুষের বিরোধী মন্তব্য পড়ে আমি নিজেকে আবিস্কার করার চেষ্টা করি। অনেক সময় কিছু সুশীল মন্তব্যকারী ওইসব বিরোধী মন্তব্যকারীকে তাদের ভাষায় উত্তর দিয়ে থাকেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের উত্তর সামান্য কঠিন ভাষায় হলে, আমি সমঝোতামূলক উত্তর দিয়ে উভয়পক্ষের মাঝামাঝি অবস্থান গ্রহণ করি। এতে হয়তো আমার অবস্থান দুই পক্ষের কাছেই কিছুটা হালকা হয়। তবুও আমি আমার অবস্থান ধরে রাখতে চেষ্টা করি। কোন কোন সময় বেশি কঠিন অবস্থা দেখলে সকলের মন্তব্য পড়লেও উত্তর দিতে বিরত থাকি। কারণ আমি বিশ্বাস করি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবার ব্যক্তিগত মতামত প্রদান করার অধিকার আছে।

আমার কোন ক্ষুদ্র বার্তা যদি রাজনৈতিক হয় তখনই এই ধরনের বিতর্ক বেশি লক্ষ্য করি। প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের কিছু কিছু অন্ধ ভক্ত আছে। তারা নিজেদের মহা জ্ঞানী এবং তার দলকে পূতপবিত্র মনে করেন। তার নিজের দলের কোন সরাসরি সমালোচনা সহ্য করা তো দূরের কথা, ইশারা ইঙ্গিতেও কোন সমালোচনা শুনতে চান না। বরং কিছু কিছু সমালোচনা তার দলের বিরুদ্ধে না হলেও গায়ে টেনে নিয়ে বিশাল জ্ঞানগর্ব বা প্রতিহিংসামূলক মন্তব্য লিখে ফেলেন। হাজার চেষ্টা করেও তার মন্তব্য থেকে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না। আবার কোন কোন সময় আমি এটাও লক্ষ্য করেছি যে, আমি আমার ক্ষুদ্র বার্তায় হয়তো তার দলের পক্ষে বা তার নেতার পক্ষে পরোক্ষভাবে কোন বার্তা দিতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার সেই বার্তার উল্টো মানে করে বিরূপ মন্তব্য করে বসে আছেন। তখন আমার সেই প্রবাদটি মনে করিয়ে দেয়- ঠাকুর ঘরে কে? আমি কলা খাই না।

সম্প্রতি আমার দুই একটি রাজনৈতিক ক্ষুদ্র বার্তায় সেই একশোভাগের এক ভাগের একজনের মন্তব্য পড়ে আমার মনে হয়েছে এদেশে দলকানা কিছু মানুষের জন্য সংশ্লিষ্ট দল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের ক্ষতির কথা আর নাই বা বললাম। আমার সেই ক্ষুদ্র বার্তার একটি এখানে হুবহু তুলে ধরলাম-

‘বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে শিক্ষাঃ
সকল নেতার শেষ ঠিকানা ডাষ্টবিন।
সবাই করেন অপেক্ষা।’

এখানে ওই ব্যক্তি কিছু বিরুদ্ধ মন্তব্য করেছেন। তার মন্তব্য পড়ে মনে হয়েছে তিনি একটি বেনামি আইডি খুলে মন্তব্য লিখেছেন। কারণ তার আইডি ঘেটে দেখলাম তিনি আমার ফ্রেন্ড লিস্টে নেই। আইডি’র নামটাও উদ্ভট প্রকৃতির। তবে তিনি কোন একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থক বা দলকানা প্রকৃতির মানুষ তাতে কোন সন্দেহ নেই।তিনি ধরে নিয়েছেন, আমি তার দলের নেতাদের ডাষ্টবিনের মানুষ হিসেবে মনে করি। কিন্তু এখানে আমি আমার মনের আসল ইঙ্গিতটি খোলামেলাভাবে তুলে ধরছি। আমার এই খোলামেলা তুলে ধরার জন্য আবার অন্য কোন দলকানা মানুষ অখুশি হলেও হতে পারেন। সেই অখুশির দায়দায়িত্ব মাথায় নিয়ে আমি লিখছি।

আমার এই পোস্টে ‘ডাষ্টবিন’ বলতে আমি গত একুশে বইমেলার ডাষ্টবিনকে বুঝাতে চেষ্টা করেছি। একুশে বইমেলা আমাদের দেশের প্রাণের মেলা। এই মেলা আমাদের দেশের আপামর জনসাধারণ প্রাণ খুলে উপভোগ করে। এখানে থাকবে মানুষের কথা, ভালবাসার কথা, জ্ঞানের কথা, শিক্ষার কথা, এমনকি নিছক আড্ডাবাজি থাকতেও আপত্তি নেই। কিন্তু সেখানে হিংসাত্মক বা প্রতিহিংসার কোন চিত্র থাকতে পারে না। আমি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত না হলেও প্রাণের একুশে বইমেলায় এইসব প্রতিহিংসামূলক ডাষ্টবিন মনেপ্রাণে অপছন্দ করি। আমার মনে হয়, সেই মন্তব্যকারি বিশেষ লোকটি আমার কথা বুঝতে পেরেছেন।

আরও একজন দলকানা ব্যক্তি আমার অন্য একটি পোস্টে মন্তব্য করেছেন- আপনি গত ১৬/১৭ বছর কোন মন্তব্য বা পোস্ট করেননি কেন। তার মন্তব্য পড়ে মনে হয়েছে তিনিও আরেকটি রাজনৈতিক দলের দলকানা সদস্য।

এইসব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে আমি তেমন উদ্বিগ্ন নই। শুধু বাঙালির ইতিহাস নিয়ে ও বাংলাদেশের জন্ম থেকে আজকের দিন পর্যন্ত করুন অবস্থা দেখে আমি মারাত্মক উদ্বিগ্ন। বাঙালির এক হাজার বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- বাঙালি আন্দোলন সংগ্রামে সিদ্ধহস্ত হলেও দেশ পরিচালনায় অযোগ্য। এই বাংলায় শত শত বছর শাসন করে গেছে তুর্কী, আফগান, মোগল, ইংরেজ। আর বাঙালিরা শুধু সংগ্রাম করে করে বিশ্বের মাঝে বর্বর ও ভিক্ষুকের জাতি হিসেবে নিজেদের তুলে ধরেছে। যে ক’জন যোগ্য বাঙালি দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন, তারা মানসম্মানের ভয়ে দেশে ফিরতে সাহস করেন না। অথচ দুই বাংলা মিলে প্রায় ত্রিশ কোটি বাঙালি কবিগুরুর সেই অমর বাণী বাস্তবায়ন করে চলেছে-

‘সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী,
রেখেছ বাঙালী করে, মানুষ কর নি’।

পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে ত্রিশ কোটি এক ভাষাভাষী মানুষ নেই। কিন্তু তারা উন্নতির শিখরে অবস্থান করলেও বাঙালি জাতি রয়ে গেছে সেই ডাষ্টবিনে। তার মূল কারণ- বাঙালির নেতৃত্ব দেওয়া ও দেশ পরিচালনার যোগ্যতা নেই। এরা আন্দোলন সংগ্রামে পটু। একজন আর একজনকে টেনে হেঁচড়ে ডাষ্টবিনে ফেলতে পটু। কিন্তু সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ পরিচালনা করে জাতিকে এগিয়ে নিতে ব্যর্থ। আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখতে পারি- সমগ্র পাক ভারত উপমহাদেশে সকল আন্দোলন সংগ্রামে বাঙালি ছিল সবার অগ্রভাগে, কিন্তু দেশ ভাগের পর দুই জাতির পিতা হলো দু’জন অবাঙালি। সমগ্র ভারতে আজ পর্যন্ত একজন বাঙালি প্রধানমন্ত্রী হতে পারে নি। এটাই বাঙালির ইতিহাস।

অবশেষে বলতে চাই, বাঙালির চরিত্রের কালিমা মোচন করতে অন্তত আমাদের দেশে এমন একজন শাসকের পক্ষে আমরা সকলে প্রাণ খুলে সমর্থন করি, যিনি দেশকে মালয়েশিয়ার ড. মাহাথির মোহাম্মদের মতো এগিয়ে নিয়ে যাবেন। যিনি বিশ্বের বুকে আমাদের দেশকে ভিক্ষুকের জাতি থেকে উত্তরোত্তর মর্যাদার আসনে আসিন করাতে সক্ষম হবেন। এজন্য দলকানা না হয়ে দেশকানার মতো সকল পেশার, সকল শ্রেণীর লোকজন দলমত, জাতিধর্ম নির্বিশেষে এখনই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!