খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৯ মে, ২০২৪

Breaking News

  বাজারে থাকা এসএমসি প্লাসের সব ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস প্রত্যাহারের নির্দেশ, বাজারজাতকারীকে ১৬ লাক টাকা জরিমানা
  ৭ ব্যক্তিকে জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরছে মানুষ

নিতিশ সানা, কয়রা

‘খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্টে আশ্রয়কেন্দ্রে দিন পার করেছি। পা‌নির ম‌ধ্যে চৌ‌কির ওপ‌রে চুলা রে‌খে বা‌ড়ি থে‌কে রান্না ক‌রে নি‌য়ে খে‌য়ে‌ছি। সরকা‌রি কিছু খাদ্য দেয়া হ‌য়ে‌ছিল, ত‌বে সেটা পর্যাপ্ত নয়। ছিলো সু‌পেয় পানিরও সংকট ছিল। ঠিকমত গোসল কর‌তে পা‌রি‌নি। রাতেও ঠিকঠাক ঘুম হতো না। নোনা পানি প্রবেশ করে গৃহপালিত পশু-পাখি ও মাছ মরে পানি নষ্ট হয়েছে। অনেকের পে‌টের পীড়া ও চর্ম‌রোগ হ‌তে দেখা গে‌ছে, কিন্তু উ‌ল্লেখ‌যোগ্য চিকিৎসা সেবা মে‌লে‌নি। আমারও পে‌টের পীড়া হয়েছিল। অ‌নেক যোগা‌যো‌গের প‌রে একজন স্বাস্থ্য কর্মী এ‌সে ওষুধ দি‌য়ে‌ছেন। ৪ দিন ধরে শ্রম দিয়ে এলাকাবাসী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছেন। এখন আর জোয়ারের পানি আসছেনা। ঘর-বাড়ি জেগে গেছে তাই আজ ৬/৭ দিনপরে বাড়িতে যাচ্ছি।’ খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের পশ্চিম দেয়াড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফেরার পথে দেয়াড়া গ্রামের তরিকুল ইসলামের সাথে কথা হলে এভাবে বলছিলেন তিনি।

একই ইউনিয়নের দক্ষিণ দেয়াড়া গ্রামে ঘর মেরামতের কাজ করছিলেন নারগিস সুলতানা ও তার স্বামী জাহাঙ্গীর মোল্লা। পানির চাপে তাদের ঘর ভেঙে যায়। দুই মেয়েকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী আশ্রয় নেন পশ্চিম দেয়াড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে। সেখানে মানুষের চাপ অনেক বেশি হওয়ায় খাওয়া, থাকা ও পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যার কারনে দুদিন পরেই আশ্রয় নিয়েছিলেন রাস্তায় ঝুপড়ি বেঁধে। এখন আর লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছেনা তাই তারা ঘর মেরামত করছে। এখন জোয়ারের পানি না থাকলেও খাদ্যের অভাব রয়েছে তাদের।

ইয়াসের প্রভাবে কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া ও কয়রা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রবল জলোচ্ছ্বাসে উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নে দূর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় অর্ধশতাধিক গ্রাম। বাড়ি ঘর হারিয়ে ৩৫ গ্রামের ২ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলো আশ্রয় কেন্দ্রে ও উঁচু বেড়িবাঁধের উপর। এলাকা বাসির অক্লান্ত পরিশ্রমে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে মহেশ্বারীপুর, দক্ষিণ বেদকাশি ও মহারাজপুর তিনটি ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।

লোকালয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ না করায় জেগে উঠেছে ঘর বাড়ি রাস্তা ঘাট। পানি কমায় বেরিয়ে এসেছে ইয়াসের ক্ষতচিহ্ন। ঘরে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। পানির কারণে রাস্তা ঘাট ভেঙ্গে নষ্টহয়ে যাওয়ায় চলাচলেও ভোগান্তি বেড়েছে।

উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এস এম শফিকুল ইসলাম খুলনা গেজেটকে বলেন, ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়রা উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নের ১২ টি পয়েন্ট ভেঙে প্লাবিত হয় ৫০টি গ্রাম। স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে মহারাজপুর, মহেশ্বরীপুর ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ায়। লবন পানি কমতে শুরু করেছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নিজ বাড়িতে অনেকে ফিরতে শুরু করেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস খুলনা গেজেটকে বলেন, স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বেড়িবাঁধ নির্মাণ হওয়ায় লবনাক্ত পানি কমতে শুরু করেছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে অনেকে বাড়িতে ফিরছে। আশাকরি বদ্ধ পানি দ্রুত নেমে যাবে। তখন আশ্রয়কেন্দ্র থেকে সবাই বাড়িতে ফিরতে পারবে।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!