পঞ্চম ধাপে আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। রয়েছে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীও। তবে উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের চাপে একরকম কোন ঠাসা হয়ে পড়েছে দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। ফলে নির্বাচন হয়ে যাওয়া জেলার অন্যান্য উপজেলার ন্যায় আশাশুনিতেও আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের ভরাডুবির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পূর্বের চার দফা নির্বাচনে সাতক্ষীরা জেলায় আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হয়েছে। এ উপজেলায়ও কয়েকটি ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীর চেয়ে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থীর অবস্থান ভালো। তাদের কাছে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় হলে কেন্দ্রে জবাবদিহিতা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। এ কারণে অনেকটা মাঠে নেমেই ভোট করছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। একই সাথে বিদ্রোহীদের প্রচারণা বন্ধ করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অনুরোধ জানাচ্ছেন নেতারা।
তবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের দাবি, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে সবার মধ্যে ক্ষমতার প্রতিযোগিতা, কেন্দ্রে নাম পাঠানোর সময় তৃণমূলের মূল্যায়ন না করা, স্থানীয় রাজনীতিতে গ্রুপিং, বিরোধী দলগুলোর নির্বাচনের মাঠে না থাকা এবং দলের চেইন অব কমান্ডের অভাবের কারণেই বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। অনেকটা স্থানীয় দলীয় নেতাদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার এবং অনেকটা বাধ্য হয়েই নির্বাচন করছেন তারা।
আশাশুনি উপজেলা নির্বাচন অফিসে থেকে জানা যায়, আশাশুনি উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে ১নং শোভনালী ইউনিয়নে ৬ জন, ২নং বুধহাটায় ৬ জন, ৩নং কুল্যায় ৪ জন, ৪ নং দরগাহপুরে ৬জন, ৫ নং বড়দলে ৭ জন, ৬ নং আশাশুনি সদরে ৩ জন, ৭ নং শ্রীউলায় ৩ জন, ৮ নং খাজরায় ৭ জন, ৯ নং আনুলিয়ায় ৩ জন, ১০ নং প্রতাপনগরে ৬ জন ও ১১ নং কাদাকাটি ইউনিয়নে ৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছে। এসব ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ছাড়াও দুই ইউনিয়নে জাতীয় পার্টি, ৪টিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রীক দল (জাসদ) একটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১নং শোভনালীনে ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শম্ভু চরন মন্ডল। এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে লড়ছেন মোঃ নজরুল ইসলাম। জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে লড়ছেন এসএম মনিরুজ্জামান। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হিসেবে হাতপাখা প্রতীকে লড়ছেন লুৎফর রহমান। জামায়াত সমর্থিত স্বতস্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোড়া প্রতীকে মোঃ আব্দুল মজিদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চশমা প্রতীকে লড়ছেন মোঃ আবু বকর ছিদ্দিক।
২নং বুধহাটায় ইউনিয়নে আ’লীগের দলীয় নৌকা প্রতীকে লড়ছেন মোঃ মাহবুবুল হক। এ ইউনিয়নে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে লড়ছেন আ’লীগ নেতা মোঃ ফিরোজ। বিএনপি সমির্থত প্রার্থী মোঃ আব্দুল হান্নান ঘোড়া, মোঃ আবুল হাসেম চশমা প্রতীক, জাতীয় পার্টিন লাঙ্গল প্রতীকে মোঃ রেজবিদান ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র প্রার্থী হিসেবে হাতপাখা প্রতীকে নিয়ে লড়ছেন মো: মোবারক হোসেন।
৩নং কুল্যায় ইউনিয়নে আ’লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল বাছেত হারুন চৌধুরী। এখানে আ’লীগের বিদ্রোহী হিসেবে আনারস প্রতীকে লড়ছেন আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ছাকি ফেরদৌস। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকে মোঃ ইয়াকুব আলী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোড়া প্রতীকে লড়ছেন মোঃ মাছুম আলী।
৪নং দরগাহপুর ইউনিয়নে আ’লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মিরাজ আলী। এখানে আ’লীগের বিদ্রোহী হিসেবে মোটর সাইকেল প্রতীকে সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা এসএএম জমির উদ্দীন, চশমা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন আ’লীগ নেতা মোঃ জাকির হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রার্থী হিসেবে হাতপাখা প্রতীকে মোঃ ওজিয়ার রহমান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে আনারস প্রতীকে আ’লীগ নেতা শেখ গোলাম কুদ্দুস ও ঘোড়া প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বিএনপি সমর্থিত সরদার আব্দুর রাজ্জাক।
৫নং বড়দল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে লড়ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম মোল্যা। এখানে স্বতন্ত্র হিসাবে আ’লীগের বিদ্রোহী চশমা প্রতীকে ইউনিয়ন আ’লীগের সহ-সভাপতি এসএম নাসির উদ্দীন, আনারস প্রতীকে ইউনিয়ন আ’লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল হান্নান মন্টু সরদার, ঘোড়া প্রতীকে উপজেলা আ’লীগের দপ্তর সম্পাদক জগদীস সানা, রজনীগন্ধা প্রতীকে আ’লীগ নেতা মোঃ আব্দুল গফুর, মোটরসাইকেল প্রতীকে আ’লীগ নেতা সাঈদ ঢালী ও বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে টেলিফোন প্রতীক নিয়ে লড়ছেন আজহারুল ইসলাম।
৬নং আশাশুনি সদর ইউনিয়নে আ’লীগের নৌকা প্রতীকে এস.এম. হোসেনুজ্জামান, আ’লীগের বিদ্রোহী হিসাবে চশমা প্রতীকে উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান স ম সেলিম রেজা মিলন ও আনারস প্রতীকে উপজেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি মোঃ সামছুল আলম ঢালী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।
৭নং শ্রীউলা ইউনিয়নে আ’লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে লড়ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আবু হেনা সাকিলুর রহমান। এখানে আ’লীগের বিদ্রোহী হিসেবে আনারস প্রতীকে কৃষকলীগ নেতা প্রভাষক দিপংকর বাছাড় ও চশমা প্রতীকে লড়ছেন সাবেক বিএনপি নেতা মোঃ রফিকুজ্জামান।
৮নং খাজরা ইউনিয়নে আ’লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ শাহনেওয়াজ। এখানে আ’লীগের বিদ্রোহী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি অহিদুল ইসলাম মোল্ল্যা, রজনীগন্ধা প্রতীকে আ’লীগের নৃপেন্দ্র নাথ মন্ডল, চশমা প্রতীকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রবিউল ইসলাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রীক দল (জাসদ) মশাল প্রতীকে মোঃ ফজলুল হক। মোটরসাইকেল প্রতীকে বোরহান উদ্দীন বুলু ও ঘোড় প্রতীকে লড়ছেন ফজলুর রহমান।
৯নং আনুলিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে মোঃ শাহাবুদ্দীন সানা, আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মোটরসাইকেল প্রতীকে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মোঃ জাবেদুল মাওলা এবং উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ রুহুল কুদ্দুস আনারস প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
১০নং প্রতাপনগর ইউনিয়নে আ’লীগের নৌকা প্রতীকে বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন, আ’লীগের বিদ্রোহী হিসেবে টেবিলফ্যান প্রতীকে ইউনিয়ন কৃষক লীগের সদস্য সচিব হারুন অর রশিদ, মোটরসাইকেল প্রতীকে নিয়ে লড়ছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শেখ রিয়াদ মাহমুদ, জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী হিসাবে আনারস প্রতীকে মোঃ আবু দাউদ ঢালী, চশমা প্রতীক শিবির নেতা মোহাম্মদ নুরে আলম ও ঘোড়া প্রতীক নিয়ে লড়ছেন নুরুল ইসলাম।
১১নং কাদাকাটি ইউনিয়নে আ’লীগের দলীয় নৌকা প্রতীক নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান দিপংকর কুমার সরকার। এ ইউনিয়নে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে লড়ছেন ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অমৃত কৃমার সানা, চশমা প্রতীক নিয়ে আ’লীগ নেতা মোঃ মফিজুল হক, আনারস প্রতীকে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সরকার নির্বাচনে লড়ছেন।
আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মোস্তাকিম বলেন, দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে আওয়ামী লীগের সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে এক সাথে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা বা কেন্দ্র থেকে এখনো কোন নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা পেলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে সাতক্ষীর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হারুন অর রশিদ ভিন্ন মতো পোষণ করে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত চিঠি আমি নিজ হাতে উপজেলা কমিটির নিকট পৌছে দিয়েছি। কিন্তু এ বিষয়ে উপজেলা কমিটি এখনো কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে তিনি জানান।
খুলনা গেজেট/ টি আই