খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, রাজি পাকিস্তান; ভারতের ম্যাচ দুবাইয়ে : বিসিবিআই সূত্র
  গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত, গুম কমিশনের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে
বাজারঘাট প্লাবিত

আশাশুনিতে নদীর বাঁধ ভেঙ্গে ৪ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার দয়ারঘাট এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিকল্প রিংবাঁধ ভেঙ্গে দয়ারঘাট ও আশাশুনি দক্ষিণপাড়াসহ আশপাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে চার শতাধিক পরিবার, দোকানপাট, বাজারঘাট।

মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) দুপুরে খোলপেটুয়া নদীর দয়ারঘাটের দু’টি ও আশাশুনির তিনটি পয়েন্টে রিংবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢোকে। রাতে মধ্যে এই বাঁধ মেরামত করা না গেলে আরো বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়বে।

স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে আশাশুনি সদর ইউনিয়নের ১০টি পয়েন্টে খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গোটা ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছিল। তখন স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে আটটি পয়েন্টে পাউবো’র বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হলেও দুটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। ওই দুটি পয়েন্টে বিকল্প রিং বাঁধ দিয়ে কোন মতে পানি আটকানো হয়। সোমবার দুপুরের জোয়ারে এই রিং বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দিলে স্থানীয় ভাবে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে তা মেরাতম করা হয়। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরে নদীতে জোয়ার আরো বৃদ্ধি পেলে ওই বাঁধ আর ঠেকানো যায়নি। দয়ারঘাটের দু’টি ও আশাশুনির তিনটি পয়েন্টে রিংবাঁধ ভেঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে। এখনো এলাকায় পানি ঢুকছে। বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। আশাশুনি উপজেলা সদরের জনতা ব্যাংকের সামনে দিয়ে নদীর জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বাজার ও দোকান পাট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফলে আশাশুনি সদর এখন অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।

আশাশুনি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স ম সেলিম রেজা মিলন জানান, গত পূর্ণীমার জোয়ারের সময় দু’টি পয়েন্টে ভাঙ্গে যায়। আমরা স্থানীয়ভাবে সেটি মেরামত করেছিলাম। এবার জোয়ারে এই বিকল্প রিং বাঁধ ভেঙ্গে যেতে পারে এমন আশংকা করে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে বিষয়টি অবহিত করেছিলাম। সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম সাহেব এই এলাকা পরিদর্শনকালে তাকে আমরা বলার পর তিনি দ্রুত এই বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি পূণিমার আগে বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। গতকাল আমরা নিজেরা এই বাঁধে কাজ করেছিলাম। কিন্তু অস্বাভাবিক জোয়ারের কারনে এই বাঁধ রক্ষা করা যায়নি। দুপুরের জোয়ারে বাঁধ ভেঙ্গে দয়ারঘাট ও আশাশুনিতে রিংবাধ ভেঙ্গে শত শত পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এতে করে আশাশুনি সদর ইউনিয়নের মানুষের জান মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা দেখা দিয়েছে। সন্ধ্যার আগে সংস্কার করা সম্ভব না হলে আশাশুনি সদর, শ্রীউলা, শোভনালী ও চাম্পাফুল ইউনিয়নও প্লাবিত হয়ে যাবে।

আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসীম কুমার চক্রবর্তী জানান, খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের পানিতে জেলেখালি-দয়ারঘাট রিংবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এতে এলাকার মৎস্য ঘের, ঘর-বাড়ি নতুন করে প্লাবিত হতে শুরু করেছে। মাত্র কয়েকমাস আগে বাঁধটি দেওয়া হয়। সুপার সাইক্লোন আম্পানে আশাশুনির দশটি পয়েন্টে ভেঙ্গে যায়। যার মধ্যে এই দয়ারঘাটও ছিল। তখন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিলো। সেই ক্ষয়ক্ষতি ঠেকাতে বিকল্প রিংবাঁধ দেয়া হয়। তার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো এ এলাকার মানুষের দুর্দশা বাড়তে শুরু করেছে।

আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হুসাইন খাঁন জানান, বিষয়টি জানার সাথে সাথে আমি সহ আমার এসিল্যান্ড সেখানে গিয়েছি। বিষয়টি ডিসি স্যার সহ উদ্ধোর্তন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা বাঁধ আটকানোর কাজ শুরু করেছি ।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, দয়ারঘাট এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার কাজের টেন্ডার হয়েছে। অচিরেই কাজ শুরু হবে। পাউবোর কর্মকর্তারা ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করছে, রাতের মধ্যেই বাঁধ বেধে ফেলা যাবে বলে আশা করা যায়।

এদিকে সোমবার রাতে আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের হরিষখালি, শুভদ্রাকাটি ও রুইয়াবিল এলাকায় খোলপেটুয়া নদীর পানি ও কুড়িকাউনিয়া এলাকায় কপোতাক্ষ নদের জোয়ারের পানি পাউবো’র বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। মঙ্গলবার দুপুরে হরিষখালি, শুভদ্রাকাটি ও রুইয়েরবিল এলাকায় পানি ওভারফ্লো করে ভিতরে ঢোকে। এসময় স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে পানি ঢোকা বন্ধ করতে সক্ষম হয়। যে কোন মুহুর্ত্বে এসব বাঁধ ভেঙ্গে পুরো ইউনিয়ন ফের প্লাবিত হয়ে যেতে পারে।

প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, আম্পানে ভেঙ্গে যাওয়া প্রতাপনগর ইউনিয়নের হরিষখালি, শুভদ্রাকাটি ও রুইয়াবিল এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ছোট কয়েকটি পয়েন্ট গত কয়েক মাস ধরে এখনো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। সোমবার রাতে বাঁধের এসব পয়েন্ট দিয়ে নদীর পানি ওভার ফ্লো করে। এলাকাবসীকে সাথে নিয়ে কোন ভাবে পানি আটকানো সম্ভব হয়েছে। কিন্ত পরে জোয়ার আরো বেশি হলে তখন আর আটকানো যাবে না।

তিনি আরো বলেন, পাউবো কর্তৃপক্ষ এসব বাঁধ নির্মাণে ইতিমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ করেছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজ শুরু করছেন না। ঠিাকাদরের গাফিলতির কারনে এই দ্রুত বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এ নিয়ে এলাকার স্থানীয়দের মাঝে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও ক্ষোভের অন্ত নেই। শীতের সময় কাজ হবে করে করে আবার বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে। কিন্তু বাঁধ বাঁধার দৃশ্যমান কোন প্রক্রিয়া এখনো পর্যন্ত দেখা যায়নি। তিনি দ্রুত এ বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার জানান, প্রতাপনগর ইউনিয়নের হরিষখালি, শুভদ্রাকাটি, রুইয়াবিল ও কুড়িকাউনিয়া এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ নির্মাণে ইতিমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের দ্রুত কাজ শুরু করার কথা। যাতে দ্রুত ওই এলাকার বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করা সে বিষয়ে তিনি জরুরী পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

খুলনা গেজেট/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!