সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের বেউলা গ্রামে সাংবাদিক পরিচয়ে এক নিকাহ রেজিস্ট্রারের কাছে চাঁদাবাজীর অভিযোগে চারজন কথিত সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জনরোষে পড়ে মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যাওয়ার পর জব্দকৃত মোটরসাইকেল ফেরত দেয়ার কথা বলে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে থানায় ডেকে এনে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত কথিত সাংবাদিকরা হল- সাতক্ষীরা শহরের বকচরা এলাকার মৃত মোন্তাজ মোল্যার ছেলে আব্দুল মান্নান (৫৭), একই এলাকার মৃত আফছার উদ্দিন সরদারের ছেলে হাফিজুর রহমান (৫২), কুখরালী এলাকার মৃত মোকিম হোসেনের ছেলে মোশাররফ হোসেন (৫৮) ও শহরের চালতেতলা এলাকায় বসবাসকারী আশাশুনি উপজেলার আদালতপুর গ্রামের আবুল কাশেম সরদারের ছেলে মোঃ রবিউল ইসলাম (৫৪)।
নিকাহ রেজিস্ট্রার বেউলা গ্রামের আব্দুল আলিম জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে সাতক্ষীরা থেকে জনৈক আব্দুল মান্নান, হাফিজুর রহমান, মাশাররফ হোসেন আব্বাস ও রবিউল ইসলাম নামের চার ব্যক্তি আচমকা তার বাড়িতে হাজির হন। প্রথমে তারা নিজেদেরকে মানবাধিকার কর্মী ও বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বাল্য বিয়েসহ বিয়ে সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য চাওয়ার ছলে তাকে চাঁদার ইঙ্গিত দেয়। তাদের কথপোকথনে সন্দেহ হলে তিনি গোপনে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষসহ পাশর্^বর্তী লোকের সাথে যোগাযোগ করতে থাকেন। খবর পেয়ে পার্শ্ববর্তী লোকজন একে একে আমার বাড়িতে আসা শুরু করলে তারা বিষয়টি আঁচ করতে পারে। এসময় গ্রামবাসীর হাতে আটক এড়াতে সাংবাদিক পরিচয়দানকারী ওই ব্যক্তিরা একপর্যায়ে তাদের ব্যবহৃত মোটর সাইকেল দু’টি ফেলে কৌশলে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, এঘটনার খবর পেয়ে আশাশুনি থানা পুলিশ সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে পৌছে কথিত সাংবাদিকদের ফেলে যাওয়া একটি হোন্ডা মোটরসাইকেল (সাতক্ষীরা-হ-১৬-১৫১৫) ও একটি ফ্রিডম মোটরসাইকেল (সাতক্ষীরা-হ-১৩-৮৬০৩) উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এঘটনায় আমি নিজে বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেই। পরে মোটরসাইকেল ফেরত দেয়ার কথা বলে রাতে পুলিশ তাদেরকে কৌশলে থানায় ডেকে এনে গ্রেপ্তার করে।
আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম কবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, সাংবাদিক পরিচয়দানকারী ব্যক্তিদের ফেলে যাওয়া মোটরসাইকলে দু’টি জব্দ করে থানায় আনার পর ভুক্তভোগী অনেকেই তার কাছে মৌখিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এঘটনায় ভুক্তভোগি নিকাহ রেজিস্ট্রার আব্দুল আলিম লিখিত একটি অভিযোগ দেয়ার পর মোটরসাইকেল ফেরত নেয়ার জন্য তাদেরকে থানায় ডাকা হয়। পরে তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চাঁদাবাজির ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় নিকাহ রেজিস্ট্রারের অভিযোগটি নিয়মিত মামলা হিসাবে রুজু করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয় (যার নং-৫, ০৪.০৯.২০)। শুক্রবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাদরেকে কারাগারে প্রেরণ করা হবে বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, সাংবাদিক পরিচয়ধারী ওই চক্রটি ইতোপূর্বে আশাশুনি উপজেলার শোভনালী, আশাশুনি সদর, বুধহাটা, শ্রীউলা, খাজরাসহ পাশর্^বর্তী কালিগঞ্জ উপজেলাসহ জেলার অন্যান্য উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও, নিকাহ রেজিষ্ট্রার, মাছ ব্যবসায়ী, দুধ ব্যবসায়ী, কাপড় ও মুদি ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে কমবেশি ত্রুটিপূর্ণ খবরের সূত্রধরে দীর্ঘদিন চাঁদাবাজী করে আসছিল। সাংবাদিক নামধারী এই চাঁদাবাজ চক্রটি গ্রেফতার হওয়ার খবর পেয়ে ভুক্তভোগী অনেকেই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছে।
খুলনা গেজেট/এআইএন