উদ্বোধনী বয়ানের মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক চরমোনাই এর তিনদিন ব্যাপী বার্ষিক ফাল্গুন মাহফিল শুরু হয়েছে। আজ (২৮ ফেব্রুয়ারি) চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম উদ্বোধনী বয়ানের মাধ্যমে চরমোনাইর তিনদিন ব্যাপী ফাল্গুনের মাহফিল আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
এদিকে চরমোনাইয়ের এবারের মাহফিলে যোগ দিয়েছেন ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসার প্রধান মুফতী আল্লামা হাবিবুর রহমান খায়রাবাদী।
আজকের উদ্বোধনী বয়ানে চরমোনাই পীর সাহেব বলেন, দুনিয়াবি উদ্দেশ্যে নয় বরং পথভোলা মানুষকে আল্লাহর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্যই এই মাহফিল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সুতরাং দুনিয়াবি কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এখানে আসার প্রয়োজন নেই। কেউ যদি দুনিয়াবি উদ্দেশ্যে এসে থাকেন, তবে নিয়ত পরিবর্তন করে নিন এবং আত্মশুদ্ধির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
চরমোনাই মাদরাসার মূল মাঠসহ মোট ৬টি মাঠ নিয়ে অনুষ্ঠিত এবার চরমোনাইর বার্ষিক মাহফিল এর উদ্বোধনী অধিবেশনে চরমোনাই পীর সাহেব আরও বলেন, যারা চরমোনাইতে নতুন এসেছেন, তারা দুনিয়ার ধ্যান-খেয়াল বিদায় করে আখেরাতের খেয়াল-ধ্যান অন্তরে জায়গা দেন। দিল থেকে বড়ত্ব এবং আমিত্ব ভাব বের করে আল্লাহর কুদরতি পায়ে নিজেকে বিলীন করে দিতে হবে। সদা-সর্বদা আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে দিলকে তরতাজা রেখে আল্লাহর ওলি হয়ে চরমোনাই থেকে বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।
পীর সাহেব চরমোনাই তার উদ্বোধনী বয়ান শেষে মাহফিলের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা করেন।
আজ ভোরে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের প্রধান মুফতী আল্লামা হাবিবুর রহমান খায়রাবাদী চরমোনাই ময়দান এসে পৌঁছেন।এছাড়াও এবছর সৌদিআরব ও পাকিস্তানের বিভিন্ন ওলামায়ে কেরাম অংশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান পেশ করারও কথা রয়েছে।
আজ সকাল ৮টা থেকে মাহফিলে আগত মুসল্লী দের ১০ হাজার হালকায় বিভক্ত করে হাতে-কলমে সালাত ও ইসলামের বুনিয়াদি বিষয়ে বাস্তব প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
মাহফিলে আগত মুসল্লীদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ১০০ শয্যা বিশিষ্ট অস্থায়ী মাহফিল হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। এতে ১১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে আরো ৪০ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে চিকিৎসা সেবা পরিচালিত হচ্ছে। ৬ টি এ্যাম্বুল্যান্স ও ১ টি স্পীড বোট মাহফিল হাসপাতাল কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে। মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়া রোগীকে তাৎক্ষণিক মাহফিল হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য নিযুক্ত রয়েছে বিশেষ স্বেচ্ছাসেবক টিম।
ছয়টি মাঠে মাহফিলের শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রায় ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করা হয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী।
সারাদেশ থেকে আগত মুসল্লিদের খাবারের জন্য প্রত্যেকটি মাঠের চারিদিকে সুপেয় নিরাপদ পানির ব্যবস্থাসহ রয়েছে সহস্রাধিক মানসম্মত টয়লেট, ওজু এবং গোসলের ব্যবস্থাপনা।
তিন দিনব্যাপী বিশাল এ মাহফিলের প্রথমদিন তথা আজ বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ডের উদ্যোগে প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দিন সারাদেশ থেকে আগত আলেমদের নিয়ে ওলামা সম্মেলন ও শেষদিন সকালে সারাদেশ থেকে আগত ছাত্র-জনতাকে নিয়ে ছাত্র গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও মাহফিলে আগত যুবক ও শ্রমিকদের নিয়ে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ এবং ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ বিশেষ আয়োজন করবে।
আগামী ২ মার্চ শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় চরমোনাই পীরের আখেরি বয়ানের মধ্য দিয়ে চরমোনাই’র তিন দিনব্যাপী বিশাল এ মাহফিলের কার্যক্রম সমাপ্ত হবে।
এদিকে মাহফিলে আসা মুসল্লীদের মধ্যে আজ দুইজন বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন। তারা হলেন মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের মো. আজমত শেখ এবং পাবনার মো. নওসের আলী।
খুলনা গেজেট/এনএম