খুলনা মহানগর ও জেলা আ’লীগের আসন্ন পুর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন হেভিওয়েট নেতারা। গ্রুপিংয়ে কোনঠাসা হওয়ায় বাদ পড়ার শঙ্কায় রয়েছেন সাবেক-বর্তমান জনপ্রতিনিধিরাও। সম্মানজনক পদ-পদবী পেতে গেল কয়েকদিন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সাথে যোগাযোগ রেখেছেন অতিগোপনে। ইতোমধ্যে নগর আ’লীগে ৭৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা পড়েছে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। আর পুরাতন বিরোধ নতুন করে দেখা দেয়ায় জেলা আ’লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে মতনৈক্য প্রকাশ্যে আসছে। গেল রাতে খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিএম মোজাম্মেল হকের মধ্যস্থতায় দু’জন বসলেও শেষ পর্যন্ত সুরাহা হয়নি বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। দু’টি পৃথক পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিয়েছেন তারা।
অন্যদিকে, খুলনা মহানগর আ’লীগের সভাপতি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ও সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা যৌথভাবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। শিগগিরই সেটি অনুমোদনের জন্য সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উত্থাপন করবেন সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা। মহানগর আ’লীগের এ কমিটি নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করছেন শীর্ষ নেতারা। ফলে এনিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে কৌতুহল ব্যাপক। গুঞ্জন উঠছে- নগর আ’লীগের পুর্ণাঙ্গ কমিটিতে ঠাঁই হচ্ছে না, সাবেক/বর্তমান কয়েকজন জনপ্রতিনিধিরও। বিতর্কিত কর্মকান্ড, গ্রুপিংয়ে কোনঠাসার কারণে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন হেভিওয়েট কয়েকজন নেতা। যদিও গোপনে কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলদের সাথে যোগাযোগ করে শেষ রক্ষার চেষ্টাটাই করছেন তারা।
এদিকে, জেলা সভাপতি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুজিত অধিকারীর মধ্যে মতনৈক্য প্রকাশ্যে এসেছে। গেল বছরের ১০ ডিসেম্বর খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানে জেলা ও মহানগর আ’লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে দুই ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে দ্রুত তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশনা দেয়া হয়। করোনা পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির ছিল। সম্প্রতি আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জেলা ও মহানগর আ’লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। মূলত এই নির্দেশের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে কেন্দ্রমুখী হন খুলনার শীর্ষ চার নেতা।
দলীয় একাধিক সূত্র জানান, জেলা আ’লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে কয়েক দফা একত্রে বসেও একমত হতে পারেননি। ফলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পৃথক কমিটি নিয়ে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সরনাপন্ন হন রাজধানীতে।
জেলা আ’লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ বলেন, পুর্ণাঙ্গ কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক যাদের আনতে চাইছেন, তাদের দলে নেয়া সম্ভব নয়। বিষয়টি তাকে বুঝিয়ে বলেছি। আমি সভাপতি হিসেবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেবো। তিনি যদি পৃথক কমিটি দেন-তাহলে তিনি ভুল করবেন।
সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুজিত কুমার অধিকারী বলেন, গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী, বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সদস্যদেরও কমিটিতে রাখা যাবে না। বিষয়টি নিয়ে সভাপতির সাথে আমি একমত হতে পারিনি। রাজপথের ত্যাগী-পরীক্ষিতদের সমন্বয়ে পুর্ণাঙ্গ কমিটি তৈরি করেছি। কেন্দ্রীয় নেতার মধ্যস্থতায় বৈঠক করেছি। কিন্তু আমরা একমত হতে পারিনি। কাল (১৬ সেপ্টেম্বর) আবার বৈঠক হবে।
মহানগর আ’লীগের সভাপতি কেসিসি মেয়র তালকুদার আবদুল খালেক জানান, আমি ও সাধারণ সম্পাদক দু’জনে মিলেই ৭৫ সদস্যের কমিটি করেছি। অনুমোদনের পর সবার নাম জানতে পারবেন।
প্রসঙ্গত্ব, গত ৭ সেপ্টেম্বর নগর আ’লীগের বর্ধিত সভায় সভাপতির বক্তৃতায় নগরপিতা বলেছিলেন, “কোন মাদক বিক্রেতা, ভূমিদস্যু, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ এবং অনুপ্রবেশকারীদের কমিটিতে স্থান দেয়া হবে না। প্রত্যেকটি কমিটি যাচাই বাছাই করে অনুমোদন দেয়া হবে। জাতিরপিতা আর্দশিত সংগঠনকে কোন অবস্থাতে বির্তকিত হতে দেয়া হবে না।”
খুলনা গেজেট/এআইএন