স্বাধীন দেশে এমন কথা ছিল না যে, গুমের বিরুদ্ধে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে হবে, জনগণকে সংগঠিত করতে হবে। কিন্তু জনসমর্থনহীন সরকার ভিন্নমতের মানুষদের কণ্ঠ স্তব্দ করতে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে গুম করে অবৈধভাবে জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের কান্না থামেনি।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (৩০ আগষ্ট) খুলনায় অনুষ্ঠিত গুম বিরোধী র্যালী ও মানববন্ধন কর্মসূচীতে বক্তারা এসব কথা বলেন। মায়ের ডাক ও হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স নেটওয়ার্ক খুলনা এ কর্মসূচির আয়োজন করে। বক্তারা আরও বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনার মিশেল বাংলাদেশে এসে গুম হওয়া ব্যক্তিদের শতশত বাবা-মায়ের কান্না দেখে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন। তিনি এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন। আমরাও একটাই দাবি করবো, আর চোখের পানি নয়, গুমের বিরুদ্ধে সকলকে রূখে দাঁড়াতে হবে এবং সুষ্ঠু তদন্ত করে গুমের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
কর্মসূচীতে সভাপতিত্ব করেন সিনিয়র সাংবাদিক ও নাগরিক ঐক্যের নগর শাখার সদস্য সচীব কাজী মোতাহার রহমান বাবু। এর আগে দিবসটি উপলক্ষে বেলা ১১ টায় নগরীর ফুল মার্কেট মোড় থেকে র্যালী বের হয়ে শান্তিধাম মোড় হয়ে জাতিসংঘ পার্কের সামনে গিয়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে তথ্য দিয়ে বক্তারা আরও বলেন, গত ১৩ বছরে ৬২৪ জনকে গুম করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৮ জনের লাশ পাওয়া গেছে। আর ৫০ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের মুখ বন্ধ। তারা মুখ দিয়ে কোন শব্দ উচ্চারণ করছে না, তারা কোথায় ছিল, কিভাবে ছিল, কারা নিয়ে গিয়েছিল- সবই তারা জানে, কিন্তু বলছে না, যদি আবার গুম হয়ে যায়- এই ভয়ে। অথচ: তাদেরকে আইন-শৃংখলা বাহিনীর পোশাকে অথবা সাদা পোষাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদেরকে কোন থানায় বা জেলখানায় রাখা হয়নি। এই গুম-খুনের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। গুম-খুনের রাজনীতি বন্ধ করে দেশে শান্তি ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি গুমের শিকার ব্যক্তিদের তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
আরও বলা হয়, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে গুম হওয়া ৩৬জনের নাম-ঠিকানাসহ একটি তালিকা সরকারকে দিয়ে এদের সন্ধান দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু সরকার তাদের খুঁজে দিতে পারেনি। এমনকি গুমের শিকার ব্যক্তিদের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট থেকে তাদের টাকাও গুম হয়ে যাচ্ছে। এসব পরিকল্পিত গুমের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানানো হয।
হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার ও সাংবাদিক মুহাম্মদ নূরুজ্জামানের পরিচালনায় কর্মসূচীতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ, নারী নেত্রী সৈয়দা রেহানা ঈসা। কর্মসূচিতে বেনাপোলে গুমের শিকার কলেজছাত্র মোঃ রেজওয়ান হোসেনের ভাই রিপন হোসেন, সাতক্ষীরার গুমের শিকার হোমিও চিকিৎসক শেখ মোখলেসুর রহমান জনির পিতা শেখ আব্দুর রাশেদ, বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে গুমের শিকার ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমানের পুত্র মোঃ শাওন হাওলাদার এবং খুলনায় পুলিশ কর্তৃক দুই চোখ উপড়ানো যুবক শাহজালাল ও তার মা রেনু বেগম অংশ নিয়ে তাদের স্বজনদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী’র হস্তক্ষেপ কামনা করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের সহ সভাপতি মো. রাশিদুল ইসলাম, খুলনা পোল্ট্রি ও ফিশ ফিড শিল্প মালিক সমিতির মহাসচিব এসএম সোহরাব হোসেন, গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা আহবায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, পরিবেশ সংগঠন ছায়াবৃক্ষের প্রধান নির্বাহী মাহবুব আলম বাদশা, মানবাধিকার কর্মী শেখ আব্দুল হালিম, অ্যাডভোকেট শেখ আলমগীর আশরাফ, খুলনা জেলা ব্লাডব্যাংক’র সভাপতি শেখ ফারুক।
কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন, সাংবাদিক এইচ এম আলাউদ্দিন, নারী নেত্রী ইসমত আরা কাকন, মানবাধিকার কর্মী মো. বদরুজ্জামান, মো. কামরুজ্জামান, মো. জামাল হোসেন, এম এ আজিম, মো. শওকত হোসেন, কাজী আরাফাত হোসেন, মো. রানা সরকার, জাহানারা পিংকি, মো. জহিরুল ইসলাম বিপ্লব প্রমূখ।