আম্ফানের আঘাতে গৃহহীন হয়ে পড়েছে খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদ পরিবেষ্টিত সাতক্ষীরার প্রতাপনগরের হাজারো পরিবার। এখানকার গৃহহীনদের মধ্যে ৪০ শতাংশ পৈত্রিক ভিটে ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে অন্যত্র। একটি বড় অংশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ওপর মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছে। মে মাস থেকে এখানকার হাজারো পরিবার গৃহ হারিয়ে হাতাশার মধ্যে কাটাচ্ছে। যদিও ইউনিয়ন পরিষদ ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা উর্ধ্বতন মহলে পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছে।
সিডর, আইলা, মহসেন, বুলবুল ও সর্বশেষ আম্ফান প্রতাপনগরের ওপর আঘাত হানে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে আঘাত হানায় প্রতাপনগর বারাবর সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। দক্ষিণ সীমানার হরিষখালী, কুড়িকাহুনিয়া, কোলা, হিজলা, সুভদ্রাকাটি ও চাকলার বাঁধ বারবার ভেঙ্গেছে। অমাবস্যা অথবা পূর্ণিমায় বড় ধরণের ধাক্কা দিলে হরিষখালীর বাঁধ ভেঙ্গে যায়। প্লাবিত হয় এলাকা।
২০০৯ সালের ২৫ মে আইলার আঘাতের পর চাকলা, সুভদ্রাকাটি, রুইয়ের বিল, দিগলারআইট, শ্রীপুর, কুড়িকাহুনিয়া, সোনাতনকাটি ও গোয়ালকাটির মানুষ সর্বস্ব হারায়। তখন দু’মাস পানিবন্দী ছিল এখানকার মানুষ। এরপর অনেকেই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র স্থায়ীভাবে বসবাস করে। গত ২০ ও ২১ মে আম্ফানের আঘাতে এ ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের ৮টি স্থান ভেঙে যায়। ফলে বিধ্বস্ত হয় সহস্রাধিক ঘর। ভেসে যায় অসংখ্য চিংড়ি ঘের।
আম্ফানের প্রভাবে গৃহহীনদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হচ্ছেন সোনাতনকাটি গ্রামের ইবাদুল সানার পুত্র নূর বকস সানা, মো: মনিরুজ্জামানের স্ত্রী মোছা: সারমিন নাহার, জব্বার সানার পুত্র ইয়াকুব আলী সানা, জবেদ আলী সানার পুত্র মো: আমান উল্লাহ, মো: এছমাইল সানার পুত্র মো: বাকি বিল্লাহ সানা, মাকসুদুর রহমানের স্ত্রী মোহসেনা পারভীন, নাকনা গ্রামের ইসমাইল গাজীর পুত্র মোকছেদ গাজী, আব্দুর রাজ্জাক গাজী, আমির আলী সানার পুত্র হেলাল হোসেন, আলতাপ হোসেন গাজীর পুত্র আসাদুল ইসলাম, আজিজুল ইসলাম, আবুল হোসেন পাড়ের পুত্র আনারুল ইসলাম, গোয়ালকাটি গ্রামের মৃত আ: খালেকের স্ত্রী আখিনুর খাতুন, মো: অজিহার মোড়লের পুত্র সবুর মোড়ল, মো: শাহজাহান আলী গাজীর স্ত্রী মোছা: শরিফা খাতুন, শিরষা গ্রামের ইয়াহিয়ার স্ত্রী রোমেছা খাতুন, জবেদ আলী মোড়লের পুত্র রেজাউল করিম, লস্করী খাজরা গ্রামের ওয়াজেদ আলী সানার স্ত্রী মোছা: আনোয়ারা খাতুন, কল্যাণপুর গ্রামের ওয়াজেদ আলী মিস্ত্রীর পুত্র শহিদুল ইসলাম, বদর উদ্দীন ফকিরের পুত্র মো: আব্দুল হামিদ ফকির, মো: নজরুল ইসলামের স্ত্রী মোছা: বিলকিস বেগম, হিজলীয়া গ্রামের মো: কওছার সানার স্ত্রী মোছা: শরিফা খাতুন, সাকিম সানার পুত্র মো: নুর ইসলাম সানা, কোলা গ্রামের কাদের শেখ এর পুত্র মো: মান্নান শেখ, মতিয়ার রহমান সানার পুত্র মো: আজিবর রহমান সানা, প্রতাপনগর গ্রামের আবুল হোসেনের পুত্র মো: আফজাল হোসেন, মোবারক গাজীর স্ত্রী মোছা: রোমেছা খাতুন, শ্রীপুর গ্রামের মো: আব্দুল করিম ঢালীর পুত্র মো: হাফিজুল ইসলাম ও মফিজুল ইসলাম, কুড়িকাহুনিয়া গ্রামের কুরমান আলীর স্ত্রী আসমাউল হুসনা, জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী পারভীন সুলতানা, দীঘলারআইট গ্রামের নূর ইসলামের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন, মো: হালিম জোয়ার্দ্দারের স্ত্রী খায়রুন নেছা, চাকলা গ্রামের আবুল কাশেম বিশ্বাসের পুত্র মুজাহিদুল ইসলাম, মো: ইউসুফ আলী বিশ্বাসের পুত্র মো: আবু সাইদ বিশ্বাস।
সোনাতনকাটি গ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ীবাঁধের ওপর শ্রীপুর, কুড়িকাহুনিয়া ও সোনাতনকাটি গ্রামের ৬০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। সবেদ আলী হালদার, খোদা বক্স হালদার, লিয়াকত আলী হাওলাদার, মোস্তফা ফকিরসহ ২৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে হরিষখালী বাঁধের ওপর । প্রতাপনগর গ্রামের বাসিন্দা হায়দার আলী গাজী জানান, ঘর বিধ্বস্ত হওয়ায় এখানকার মানুষ আশাশুনি, চুকনগর, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা ও খুলনায় আশ্রয় নিয়েছে। ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য মো: সিরাজুল ইসলাম মোড়ল জানান, মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। ঘর না থাকায় অনেকেই টোং বেঁধে বসবাস করছে। গৃহহীনদের অনেকের ঘরেই খাবার নেই। ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য আনসার আলী গাজী জানান, তার ওয়ার্ডের সোনাতনকাটি গ্রামের অধিকাংশ পরিবার অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছে। জীবন-জীবিকার তাগিদে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন আলোর কোলে মাছ শিকারে এবং ইটের ভাটায় শ্রম দিচ্ছে।
প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, গত ছয় মাস যাবত এলাকার নয়শ’ ৬০ পরিবার আশ্রয়হীন হয়েছে। আটটি পয়েন্ট ভেঙে যাওয়ায় মানুষ সহায়-সম্বল হারিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত কাজের কারণে কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদের বাঁধ বারবার ভাঙছে। তিনি জানান, হরিষখালী বাঁধ নির্মাণ করতে এসে দুইশ’ বিঘা জমি পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের বেড়ীবাঁধের বাইরে রেখেছে। ফলে আগামীতে চিংড়ির ঘের নদীগর্ভে বিলীন হবে। তিনি বলেন, গৃহহীনদের নামের তালিকা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
খুলনা গেজেট / এমএম