সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, যদি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকতেন— তাহলে ইসরায়েল ও গাজা ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের বর্তমানে যে যুদ্ধ চলছে, তা ঘটার কোনো সুযোগই থাকতো না।
চলমান এই যুদ্ধের জন্য নিজের উত্তরসূরী ও বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের অদক্ষতা ও অদূরদর্শীতাকেও দায়ী করেছেন বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টির এই শীর্ষ নেতা।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যে এক প্রচারণা সভায় গিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে ইসরায়েলে যা হচ্ছে তা রীতিমতো ভয়াবহ, বিভৎস। ছোটো শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে…যখন আমি আপনাদের প্রেসিডেন্ট ছিলাম—আমাদের শান্তি ছিল, শক্তিও ছিল; কিন্তু এখন? এখন চারিদিকে আমরা দেখছি দুর্বলতা, সংঘাত, বিশৃঙ্খলা। ইসরায়েলে আমরা যে নৃশংসতা দেখছি, আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি— আমি যদি প্রেসিডেন্ট থাকতাম, তাহলে এমন ঘটত না।’
‘আমাদের দেশের দিকেই তাকিয়ে দেখুন…কত কত দেশ থেকে আমাদের দেশের লোকজন ঢুকছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা জানিও না তারা কোথা থেকে এসেছে। আজ ইসরায়েলে হামলা হয়েছে, আগামীতে যে আমরাও নিরাপদ থাকব, তার নিশ্চয়তা কী?’
‘ওই ভদ্রলোক (জো বাইডেন) ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য কিছু করেছেন? আমদের নিরাপত্তার জন্য কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন? করেননি। তিনি কিছুই করেননি, কোনো পদক্ষেপ নেননি।’
নিজ বক্তব্যে ইসরায়েলের প্রতি খোলাখুলিভাবে সমর্থন জানিয়ে সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘হামাসের হামলা খুবই গ্লানিকর এবং নিজেদের পূর্ণ শক্তিমত্তা দিয়ে হামলা ঠেকানোর সম্পূর্ণ অধিকার ইসরায়েলের আছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের দেশের কিছু করদাতা এসব সন্ত্রাসী হামলার খাতে অর্থায়ন করে যাচ্ছে। এই ধরনের করদাতাদের সংখ্যা বাড়ছে এবং তাদের শনাক্ত করতে বাইডেন প্রশাসন কিছুই করছে না।’
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও হামাসের মধ্যে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে, তা ১৯৫০ সালের পর ওই ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় সংঘাত। শনিবার ভোররাতে দক্ষিণ ও মধ্য ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে একের পর এক রকেট ছোড়ার মধ্যে দিয়ে এই সংঘাতের শুরু। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ এবং হামাসের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সূর্যের আলো পুরোপুরি ফোটার আগেই ৩ হাজারেরও বেশি রকেট ছোড়া হয়েছিল ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক-বেসামকির স্থাপনা লক্ষ্য করে।
কাছাকাছি সময়ে হ্যাং গ্লাইডার ও মোটরচালিত গ্লাইডারে চেপে হামাসের বেশ কয়েকজন যোদ্ধা সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় কমাণ্ডের কার্যালয়ে গিয়ে সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের বন্দি ও জিম্মি করার পাশাপাশি ওই কমান্ডের সঙ্গে সেনাবাহিনীর মূল কমান্ড ও অন্যান্য শাখার কার্যালয়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মোটরসাইকেল ও জিপে করে সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করেন আরও কয়েকশ’ যোদ্ধা।
রয়টার্সের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত দুই বছর পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির পর শনিবার এই হামলা চালিয়েছে হামাস এবং এই ‘অপারেশনের’ জন্য গত ২ বছরে অন্তত ১ হাজার যোদ্ধাকে গোপনে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে গাজা ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণকারী এই সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী।
তথ্যের ঘাটতি ও পূর্বপ্রস্তুতি না থাকার কারণে হামাসের হামলার পর প্রথম দিকে খানিকটা অপ্রস্তুত অবস্থায় ছিল ইসরায়েল। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই যুদ্ধে পূর্ণ শক্তিতে ফিরে আসে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাবাহিনী ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, শনিবার থেকে এ পর্যন্ত চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলে অন্তত ৯০০ জন এবং গাজায় ৬৫০ জনেরও অধিক সংখ্যক মানুষ নিহত হয়েছেন।
৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১০ কিলোমিটার প্রস্থ গাজা ভূখণ্ড একসময় মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন দল ফাতাহের নিয়ন্ত্রণাধীনে ছিল। পরে ২০০৭ সালে ফাতাহকে উচ্ছেদ করে এ ভূখণ্ডের দখল নেয় হামাস।
খুলনা গেজেট/এনএম