দিনটি ছিল শুক্রবার। জানুয়ারী মাসের শেষ শুক্রবার। তারিখ ও বছরের কথা মনে নেই। তখন আমি খুলনার একটি স্কুল থেকে ৩য় শ্রেণিতে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি। পরীক্ষা শেষে একমাসের জন্য আমার দাদা আমাকে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে গেছেন। গ্রামটির নাম চাঁদখালি। খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় অবস্থিত। সে সময় স্কুলগুলোতে ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ক্রিড়া প্রতিযোগিতা হতো।
চাঁদখালি হাই স্কুলও এদিক থেকে পিছিয়ে থাকতো না। আমার দাদা মরহুম শেখ আব্দুস সাত্তার আমাকে চাঁদখালি হাই স্কুলে নিয়ে গেলেন। কিন্তু আমি তো ঐ স্কুলের ছাত্র না। সুতরাং আমি কিভাবে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবো? কিন্তু সদাশয় প্রধান শিক্ষক আমার দাদার অনুরোধে আমাকে কবিতা আবৃত্তি করার সুযোগ করে দিলেন। তার এই উদারতা ও মহানুভবতা এখনো আমার মনে দাগ কাটে। ছোট বেলা থেকে আমি ছোট খাটো মানুষ। আর তখন আমি একেবারে শতভাগ ছোট্ট একটা শিশু। তাই মাইক নাগাল না পাওয়ার কারণে আমাকে টেবিলের উপর দাড়িয়ে কবিতা পড়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়।
আমি ‘নবীর শিক্ষা’ কবিতা আবৃত্তি করি। দুই দিন স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাকে একটি জামা (শার্ট) দিয়ে পুরষ্কৃত করে। যা ছিল আমার জীবনের প্রথম পুরষ্কার । অনেক পুরষ্কারের কথা ভুলে গেছি। তবে এটার কথা আজীবন মনে থাকবে। আর একটা না বললে নয়। ছোট বেলা থেকে আমি মাইক দেখলে বকবক করার চেষ্টা করতাম। তাই প্রাইমারী স্কুলের গন্ডি পার হওয়ার পর থেকে আমি খুলনা বেতারে নবীন ভুবন ও ছোটদের অনুষ্ঠানে অংশ নিতাম। প্রথম পারিশ্রমিক পেয়েছিলাম ৩০ টাকা। যেটি আমার প্রথম আয়। বক্তৃতায় প্রথম পুরষ্কার লাভ সপ্তম শ্রেণীতে থাকাকালীন। তাও একটা কঠিন বিষয়ের বক্তৃতা করে। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিষদ। বাংলাদেশ পরিষদ তখন ছিল খুলনা স্টেডিয়ামের ২য় তলায়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ পরিষদ হোয়াইট হাউসে চলে আছে। যা হোক বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘সকল মানুষ – মানুষ নয়’। বিষয় টি কঠিন। কিন্তু আমি সেদিন মান + হুশ আর বিবেক নিয়ে বক্তব্য রেখেছিলাম। একটা কথা এখনো মনে আছে, আমি বলেছিলাম মানুষ শিক্ষিত হতে পারে, ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইনজীবি, শিক্ষক, সরকারি চাকরিজীবি, ধনী বা গরীব বা যে কোন ধর্মের হতে পারে – তার মধ্যে যদি হুশ এবং বিবেক এবং শুদ্ধ মন মানসিকতা কাজ না করে তবে মানুষকে মানুষ বলা যাবে না। আমি বক্তৃতায় ২য় পুরষ্কার লাভ করি। এটি বক্তৃতায় আমার জীবনে প্রথম পুরষ্কার লাভ।
বিতর্কে এককভাবে জীবনে প্রথম পুরষ্কার লাভ করি উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াকালীন। খুলনা জেলা স্কুল মাঠে বইমেলায় বিতর্কে এককভাবে অংশ গ্রহণ করে পুরষ্কার পেয়েছিলাম। প্রবন্ধে জীবনে প্রথম পুরষ্কার পাই সুন্দরবন কলেজ থেকে ‘সমাজ সংস্কারক বিশ্বনবী (‘দঃ)’ রচনা লিখে।
জীবনে প্রথম ঢাকায় যাই বিজ্ঞান মেলায় বক্তৃতায় প্রথম হয়ে জাতীয়ভাবে অংশ নিতে।
সত্যিকার অর্থে জীবনে অনেক পুরষ্কার ও সাটিফিকেট পেয়েছি। কিন্তু যা দিয়ে শুরু সেগুলো ভুলবার নয়।
শেখ দিদারুল আলম : খুলনা প্রতিনিধি, ইউএনবি ও যুগ্ম সম্পাদক, খুলনা গেজেট।