একমাস সিয়াম সাধনার পর ম্গলবার পবিত্র ঈদুল ফিতর। চলে গেল বছরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাসটি। রমজান মাস আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমরা প্রতিনিয়ত কত রকম গুনাহ করছি তার ইয়ত্তা নেই। রমজান মাসে আমরা গুনাহ মাফের সুযোগ পাই। মহান আল্লাহ দু’হাতে তার বান্দাদের অকাতরে দান করেন। পৃথিবীর একমাত্র জীবন বিধান পবিত্র কোরআন এই মাসে নাযিল হওয়ায় এই মাসটি আরো গুরুত্বপূর্ণ। তাই ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ হলেও পবিত্র রমজান মাস চলে যাওয়ার মনটা ব্যাথায় ভরাক্রান্ত।
জাতি এবার অনেকটা করোনামুক্ত পরিবেশে ঈদ পালন করবে। চারিদিকে সাজ সাজ রব। বিভিন্ন খোলা মাঠ ও ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। যেটি করোনার কারনে আগের দুই বছর সম্ভব হয়নি।
আমি সেই ছোট বেলা থেকে মাঠে ঈদের নামাজ পড়তাম। যখন ছোট ছিলাম তখন ঈদের কয়েকদিন আগে আমার মরহুম দাদা শেখ আবদুস সাত্তারের সাথে লঞ্চে করে গ্রামের বাড়িতে যেতাম। প্রায় ৭/৮ ঘন্টা লাগতো বাড়ি পৌঁছাতে। বাড়িতে তখন কত আনন্দ। বিশেষ করে দাদীর ভালবাসা। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে পুকুরে গোসল করে নামাজে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা। গ্রামে ঈদের নামাজ হয় দেরিতে। আমাদের চাঁদখালীর কালামবাগানের ঈদগাহে সকাল ১০ টায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হতো। ঈদকে কেন্দ্র করে মাঠের বাইরে মেলা বসতো। এই ভাবে কেটে যেত পুরো দিন। ঈদের পর দিন নানা বাড়ি দরগাহপুর যেতাম। নানা মরহুম শেখ আবদুল ওয়ারেশও অপেক্ষায় থাকতেন কখন আমরা দরগাহপুর পৌঁছাবো। যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। যেটাকে টাবুরে নৌকা বলা হতো। যেহেতু নদী পথে যাতায়াত সেহেতু জোয়ার ও ভাটার একটা ব্যাপার ছিল। দরগাহপুর গ্রামটি ছিল সাংস্কৃতির দিক দিয়ে অগ্রসরমান। তাই ঈদের পরদিন থেকে সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হতো। নাটক, গান, গজল,কবিতা আবৃত্তি ও যেমন খুশি তেমন সাজো সহ আরো অনেক অনুষ্ঠান।
এখনকার যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক ভালো। পিচঢালা পাকা সড়ক, নদী মৃতপ্রায়। গ্রামে সড়ক নির্মাণের জন্য সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের অবদান ভুলবার নয়।
উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় থেকে আমি খুলনা সার্কিট হাউসে ঈদের নামাজ পড়েছি। এরপর সাংবাদিকতা বিশেষ করে বিটিভিতে সাংবাদিকতা করার কারনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ঈদের নামাজ খুলনা সার্কিট হাউসে পড়তাম।
এবার ঈদ নিয়ে যেমন আনন্দ আছে তেমন আছে বেদনা। নিত্য প্রয়োজনীয় পণের মূল্য বৃদ্ধি এই ঈদে গরীর মানুষের জন্য খুশি বয়ে আনতে পারবে কিনা সে উত্তর কে দিবে? খুলনা নগরীতে এখন ভিখারির ভিড় অধিক পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু ৩/৪ বছর আগে খুলনা জেলাকে ভিখারিমুক্ত ঘোষণা করা হয়।
নিম্ন আর মধ্যবিত্তরা আছেন অনেক কষ্ট ও দুঃখের মধ্যে। আমি সাংবাদিকতা করার সুবাদে জানি অনেক বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন এবং কর্মচারী ছাটাই করতে বাধ্য হয়েছেন। এই সকল ছাটাইকৃত কর্মচারীদের ঈদ কেমন যাবে? দেশের বেসরকারি কলেজে যারা স্নাতকে পাঠদান করেন তারা এখনো এমপিওভুক্ত শিক্ষক নন। ফলে ঈদ তাদের ঘরে আনন্দ ও খুশির বার্তা আনতে পারবে কি? কিন্তু এইসকল শিক্ষকরা সকল রকম যোগ্যতা অর্জন করে শিক্ষাকতা পেশায় এসেছেন। উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রিতে যারা পাঠদান করেন তারা এমপিওভুক্ত হতে পারলে এদের ব্যাপারে সমস্যা কোথায়?
তারপরও বলি সরেজমিনে বাজারে যেয়ে দেখছি বাজারে ভিড় রয়েছে। মানুষ তার প্রয়োজনে কেনাকাটা করছে।
তাই আজকের এই দিনে কামনা, খুশির ও আনন্দের এই দিনে আমরা সকলে মিলে আনন্দ ও খুশিকে ভাগাভাগি করে নিব। ইসলাম ধর্মের মহান আদর্শকে সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিব।
লেখক : খুলনা প্রতিনিধি, ইউএনবি।