আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ এখন মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এত খাল-বিল, নদী-নালার দেশ আমাদের, দেশের মানুষের কেন আমিষের কষ্ট হবে! আমাদের আমিষ আমরাই তৈরি করব, আমাদের দেশের মানুষকে দেবো। আমাদের লক্ষ্য প্রথম হলো খাদ্য নিরাপত্তা দেওয়া। দ্বিতীয় হলো পুষ্টির নিশ্চয়তা দেওয়া। এখন আমরা সেই পদক্ষেপই হাতে নিয়েছি।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে আয়োজিত প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী ২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি পূরণ করেও বাংলাদেশকে আমরা উদ্বৃত্ত খাদ্যের দেশে উন্নীত করি। পার্লামেন্টে যেদিন আমি ঘোষণা দিলাম যে, আজ থেকে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ সেই দিন বিএনপি বিরোধী দলে, খালেদা জিয়া বিরোধী দলের চেয়ারে বসা। তার অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান উঠে দাঁড়িয়ে বললো—খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না, তাহলে খাদ্য সাহায্য পাওয়া যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের চিন্তাধারাটা ছিল, আমরা প্রতিনিয়ত অন্যের কাছে হাত পেতে চলব। অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকব আর ভিক্ষা চেয়ে খাবার এনে খাব। যেখানে জাতির পিতা বলে গেছেন, আমাদের মাটি আছে, সোনার মাটি। আমাদের ফসল আমরা ফলাবো এবং আমরা তা প্রমাণ করেছি।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে আমার পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার পরে যখন আমি ক্ষমতা হস্তান্তর করি, তখনো ২৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত আমরা রেখে গিয়েছিলাম কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, ২০০৯ সালে যখন আবার সরকারে আসি, তখন দেখি সেই ২৬ লাখ উদ্বৃত্ত তো দূরের কথা, বরং ৩০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশে। আর যেখানে মূল্যস্ফীতি আমি এক দশমিক পাঁচ শূন্য শতাংশ রেখে গিয়েছিলাম; চালের দাম মাত্র ১০ টাকা ছিল, সেই চালের দাম ৩০ টাকার উপরে হয়ে গেছে, আর মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশে উঠে গেছে। তার ওপর বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা এবং রিজার্ভ মানি এক বিলিয়নও না—তারও কম। সেই অবস্থায় যাত্রা শুরু করেই কিন্তু বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে গেছি।
তিনি বলেন, আজকে আমরা উন্নয়নশীলে দেশের মর্যাদা পেয়েছি, ২০২৬ সাল থেকে তা শুরু হবে। এর মধ্যে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। একদিকে যেমন আমাদের গণমানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সাথে সাথে আমিষ সরবরাহের জন্য আমাদের হাঁস, মুরগি, পশু, পাখি যা কিছু দরকার। কারণ আমাদের আমিষ আমরাই তৈরি করব, আমাদের দেশের মানুষকে দেবো। আমাদের লক্ষ্য প্রথম হলো খাদ্য নিরাপত্তা দেওয়া। দ্বিতীয় হলো পুষ্টির নিশ্চয়তা দেওয়া। এখন আমরা সেই পদক্ষেপই হাতে নিয়েছি।
খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে আওয়ামী লীগের নানা উদ্যোগ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে বিএনপি সরকার এসেই মনে হলো যেন যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছি, সেগুলোর ওপরেই যেন তাদের হামলা। অনেকের পোল্ট্রি ফার্মে বোমা মেরেছে। বোমা মেরে মুরগিই মেরে ফেলে দিয়েছে। খামার থেকে গরু নিয়ে কেটে খেয়ে ফেলেছে। পেঁপে গাছ থেকে শুরু করে ফলের গাছ—গাছগুলো কেটে ফেলে দিয়েছে। যেখানেই আমাদের আওয়ামী লীগের নেতারা ছিল, প্রত্যেককে তারা এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। তারা এটা হিসাব করেনি দেশের জন্য কত ক্ষতি হবে সে চিন্তা তাদের মাথায় ছিল না। তারা আমদানি করবে, ব্যবসা করবে ওই দিকে তাদের চিন্তা। আমাদের হচ্ছে, আমরা আমাদের নিজেদের পায়ে নিজেরা দাঁড়াব।
খুলনা গেজেট/এনএম