কী অভিধায় অভিহিত করবো তাঁকে। বাংলা ভাষায় যত উজ্বল শব্দ আছে তা সবই ব্যবহার করা যায় এই বিশাল হৃদয়ের মানুষটির ক্ষেত্রে! জীবিতাবস্থায় তিনি ছিলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ।
প্রায় ৬/৭ দশক সরাসরি রাজনীতির সকল পাটে সম্পৃক্ত ছিলেন।এইসময়ের সকল গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক প্রগতিশীল আন্দোলনে সর্বোচ্চ সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী, নেতা, নেতাদের নেতা।
একজন অসাধারণ সুদর্শন সুপুরুষ সৌম দীর্ঘাকায় সুঠাম প্রখর রুচিবোধসম্পন্ন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সর্বযুগের ওভারস্মার্ট দাদু ভাই.।
কী ঋজু তাঁর দাঁড়ানোর ভঙ্গি, কী দীপ্ত সটান তাঁর পা ফেলা, কী নায়কোচিত তাঁর মুভমেন্ট। সাহিত্যরসিক, প্রবল রসবোধসম্পন্ন দাদু ভাই একইসাথে কয়েক প্রজম্মের মানুষের মধ্যমণি হয়ে উঠতে পারতেন সাবলীলভাবে…
।। তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি ।।
২২ বছরের যুবকের যেমন বন্ধু হয়ে তাকে ধারণ করতে পারতেন আবার খুলনার সর্বস্তরের মানুষের মহামুরব্বী হিসেবে স্বাভাবিক স্বতস্ফুর্ততা অর্জন করেছিলেন এক অপূর্ব ক্যারিসমেটিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে…..
তাঁর পোষাক, চুল কাটার স্টাইল, পায়ের জুতা, রুমাল, এমনকী চিরুনি এসব সবকিছুই ছিল এক্কেবারে আলাদা, একদমই অর্ডিনারী নয়……
জলদগম্ভীর কন্ঠস্বরে দাদু ভাই’র কবিতা আবৃত্তি যারা শোনেননি তারা আসলেই বেশ দুর্ভাগা ……
বক্তৃতাও যে একটা উন্নতমানের আর্ট যেখানে রাগ রাগিনীর মিশ্রণে শ্রোতাকে হাসানো কাঁদানো একইসাথে হৃদপিন্ডে বারুদের স্ফুলিঙ্গ তৈরী করা যায় তাতে দাদু ভাই ছিলেন একজন বড়মাপের শিল্পী……..
এককথায় ভোজনরসিক ! স্বাদ ও সাধ দু’টোতে চমৎকার সমন্বয় ঘটাতে ওস্তাদ ছিলেন দাদু ভাই….খেতে এবং খাওয়াতে পছন্দ করা দু’টোতেই দাদু ভাই’র জুরি মেলা ভার…..
উচ্চমাপের সঙ্গীতের আস্বাদে পরিপূর্ণ দাদু ভাই আবার একইসাথে আধুনিক গানের সবমাত্রায়ও বিচরণ করেছেন…..
উপমহাদেশের বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী লতা মুঙ্গেশকর, আশা ভোসলে, সামসাদ বেগম, মুকেস, মোহাম্মদ রফি, কিশোর কুমার, হেমন্ত, মান্না দে এদের গানের কথা তাঁর কাছে যেমন শুনেছি তেমনি তালাত মাহমুদ, বাংলাদেশের মাহমুদুন্নবী এমনকী লেটেষ্ট জেমস কিংবা আইয়ূব বাচ্চু এদের গান নিয়ে দাদু ভাই’র আগ্রহ দেখেছি…..
ক্রীড়ামোদী হিসেবে তিনি একজন অগ্রসর মানুষ…..
চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের আদোপান্ত দাদু ভাই’র নখদর্পনে ছিল……
একজন কমপ্লিট আধুনিক মানুষ বলতে যা বোঝায় তাতে দাদু ভাই’র মত অনুকরণীয় অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব আমরা আর পাব না……
দাদু ভাই ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, সাবেক সংসদ সদস্য এসব তো সবাইই লিখবেন……
কিন্তু এটা খুবই অস্বাভাবিক অমার্জিত কসুর হবে যদি আমরা তাঁকে আমাদের খুলনা বিএনপি’র রাজনৈতিক পিতা হিসেবে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করতে কোন ভুল করে ফেলি……
বিএনপি’র বেনিফিসিয়ারি হিসেবে খুলনার রাজনীতিতে নামে সম্মানে পদমর্যাদায় দাদু ভাই’র চেয়ে অনেক বড় দৈর্ঘ্যের কেউ কেউ ছিলেন যাদের শেষপর্যন্ত বিএনপি’র পরিচয়ে জীবনাবসান হয়নি….. আমরা গর্বিত আমাদের পিতৃতুল্য দাদু ভাই নিজগুনে সেই সুখ্যাতির মধ্য দিয়েই আমাদের মাঝ থেকে সম্মানের সাথে রাজনৈতিক ঈমানদার হিসেবে বিদায় নিয়েছেন…….
পরম করুণাময়ের কাছে পাপী আমরা ভুল ত্রুটিতে ভরা অপদার্থ সম্তানদের পক্ষ থেকে এই ফরিয়াদ করি, মাবুদ আপনি আমাদের পিতাকে ক্ষমা করে দিন, তাঁকে জান্নাতের মেহমান করে নিন……
সূত্র : ২০ অক্টোবর লেখকের ফেসবুক ওয়াল