‘আব্দুল করিম-সবুরন্নেছা বেগম ফাউন্ডেশন’ এর পক্ষ থেকে মেধাবী ও অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার ও বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মিলনায়তনে আজ বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রেুয়ারি) দুপুরে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক এস এম জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি, খুলনার সম্মানিত ডিন প্রফেসর জালাল উদ্দিন আহমদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক গাজী আলাউদ্দিন আহমদ এবং বিদ্যালয়ের সভাপতি আজগর আলী ফকির।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, এই গ্রাম, মাটি এবং এই গ্রামের মানুষের প্রতি আমার যে দরদ-ভালোবাসা সেটা চিরকাল থাকবে। স্বচ্ছল, অস্বচ্ছল, মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত বিভিন্ন পরিবারের ছেলে-মেয়েরা আছে। হতাশ হওয়ার কোন অবকাশ নেই। লেখাপড়া করতে হবে এবং চালিয়ে যেতে হবে। সহায়ক শক্তি সৃষ্টির মালিক একমাত্র আল্লাহ। তিনি সহায় হলে কোন বাঁধা বিপত্তি কাউকে কিছু করতে পারবে না।
তিনি বলেন, একজন ছাত্র-ছাত্রী যখন লেখাপড়া করে তখন সমাজের পবিত্র দায়িত্ব হচ্ছে তাকে সহযোগিতা করা। তার পিতা-মাতাকে ও পরিবারকে সহযোগিতা করা। যাতে ওই শিক্ষার্থী সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে লালিত-পালিত হতে পারে। শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে এবং পরবর্তীতে সে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। এর যদি বিপরীত হয়, তাহলে তার দায়িত্ববোধে অনীহা সৃষ্টি হবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমাদেরকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষক আজীবন ছাত্র। তাকে নিয়মিতভাবে পড়াশোনা করতে হয়। প্রতিবছর তাকে নতুন শ্রেণীতে পাঠ দিতে হয় এবং আধুনিক যে জ্ঞান সেই জ্ঞান সম্পর্কে সে অবহিত। শিক্ষক হচ্ছে সবচেয়ে আধুনিক, স্মার্ট এবং জ্ঞানী ব্যক্তি। শিক্ষক শুধু কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নয়, তিনি সমগ্র জাতির শিক্ষক।
অনুষ্ঠানে ‘আব্দুল করিম-সবুরন্নেছা বেগম ফাউন্ডেশন’ এর পক্ষ থেকে বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১৮ জন মেধাবী শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার হিসেবে বই এবং ৫ জন মেধাবী ও অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীকে ৫ হাজার টাকা করে শিক্ষা বৃত্তির অর্থ হস্তান্তর করেন প্রধান অতিথি।
পুরস্কার ও বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তামান্না খাতুন তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে যেয়ে বলেন, ‘আব্দুল করিম-সবুরন্নেছা বেগম ফাউন্ডেশন’ যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এটি এই বিদ্যালয়ের জন্য সৌভাগ্যের। এর মাধ্যমে আমরা লেখাপড়া এগিয়ে নিতে এবং একটু হলেও স্বপ্ন দেখতে শিখবো। দারিদ্র্যতার কষাঘাতে আমরা স্বপ্ন দেখতে পারি না। এমনই সময়ে এই ফাউন্ডেশন আমাদের পাশে এগিয়ে এসেছে।
বিদ্যালয়ের সাবেক কৃতি ছাত্রী আকলিমা খাতুন বলেন, দারিদ্রতা আর ভাগ্য একজন শিক্ষার্থীকে নিচের দিকে ফেলে দেয়। উপরের দিকে উঠতে হলে আমাদের মই বা সিঁড়ি অর্থাৎ সহযোগিতার প্রয়োজন। সেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আব্দুল করিম-সবুরন্নেছা বেগম ফাউন্ডেশন। যা আমাদের লেখাপড়া এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করবে।
সভাপতির বক্তব্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থী রয়েছে, কিন্ত তারা বইও কিনতে পারে না। তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া একটি মহৎ কাজ। ‘আব্দুল করিম-সবুরন্নেছা বেগম ফাউন্ডেশন’ সেই কাজটি করছে। মেধাবী এই শিক্ষার্থীরাই একদিন বড় হবে, সকলের মুখ উজ্জ্বল করবে।
অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক প্রভাত কুমার মন্ডলের সঞ্চালনায় আরও বক্তৃতা করেন ও উপস্থিত ছিলেন, ফাউন্ডেশনের কোষাধ্যক্ষ জিএম ফয়েজ, নির্বাহী সদস্য সাংবাদিক মোহাম্মদ মিলন, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আব্দুস সালাম খান, ইলা রাণী সাহা রুদাঘরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দীন আহমদ, রুদাঘরা মাঝেরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুখ আহমেদ, বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিশ্বনাথ কর্মকারসহ শিক্ষকগণ, অভিভাবকবৃন্দ এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
খুলনা গেজেট/ টিএ