খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

আফগানিস্তানে ভয়াবহ মানবিক সংকট, বাড়ছে কলেরার ঝুঁকি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আফগানিস্তানের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর যারা বেঁচে গেছেন তারা বলছেন, তাদের খাওয়ার কিছু নেই, থাকার জায়গা নেই। একইসঙ্গে সেখানে কলেরা রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দুই দশকের মধ্যে এটিই ছিল আফগানিস্তানের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প।

বিবিসির সেকেন্দার কেরমানি পাকতিকা প্রদেশের ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকা থেকে জানাচ্ছেন, অনেক মানুষ এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়ি-ঘরে খোঁজ করছেন তাদের নিখোঁজ হওয়া পরিবারের কেউ বেঁচে আছে কি না। আঘা জান নামে এক ব্যক্তি তার ভেঙ্গে যাওয়া বাড়ির আবর্জনা সরিয়ে দেখছেন সেখানে কিছু আছে কি না। তার চোখে পানি।

তিনি বলেন, এটি আমার ছেলের জুতা। জুতার ওপরের ময়লা পরিষ্কার করতে করতে বলেন, তার তিনটা শিশু সন্তান এবং দুইজন স্ত্রী সবাই নিহত হয়েছেন কারণ ওই রাতে তখন সবাই ঘুমাচ্ছিলেন।

বুধবার যখন ভূমিকম্পটি হয় তখন আঘা জান দৌড়ে যান ঘরের মধ্যে, কিন্তু ততক্ষণে সবকিছু ধ্বংসস্তূপের নিচে। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমার কিছুই করার ছিল না। আমি আমার চাচাতো ভাই-বোনদের ডাকতে গিয়েছিলাম সাহায্য করার জন্য কিন্তু যখন আমি আমার পরিবারের সদস্যদের বের করতে সক্ষম হলাম ততক্ষণে সবাই মারা গেছে।’

আঘা জানের বাড়ি বারমাল জেলায়। পাকতিকা প্রদেশে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে এই জেলা অন্যতম। এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন আর আহত হয়েছেন তিন হাজারের মতো মানুষ।

বারমালার এই স্থান থেকে সবচেয়ে কাছের বড় শহরের দূরত্ব তিন ঘণ্টার মতো। রাস্তা ধূলায় ভরা। আর প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ার ফলে যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কিছু মানুষকে তালেবানের সেনাদের হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

বিবিসির সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, এখানকার বেশিরভাগ গ্রামের বাড়িঘর মাটি ও পাথর দিয়ে তৈরি। এবং সেগুলো ভয়াবহ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানকার প্রায় প্রতিটি পরিবার স্বজন হারানোর শোকে বিহ্বল।

হাবিব গুল নামের আরেকজন ব্যক্তি পাকিস্তানের করাচির বর্ডারের কাছে দিনমজুরের কাজ করেন। এই ভূমিকম্পের কথা শুনে তখন ছুটে আসেন তিনি। কিন্তু এসে দেখেন তার ২০ জন আত্মীয় মারা গেছেন। এদের মধ্যে ১৮ জন পৃথক পৃথক ঘরে ছিলেন।

বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাকে কার নাম বলবো? আমার অনেক আত্মীয় নিহত হয়েছে। তিন বোন, বোনের সন্তানেরা, আমার সন্তান আরও ছোট শিশুরা মারা গেছে।’

সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, প্রত্যেক গ্রামবাসী তাদের ক্ষয়ক্ষতি কি পরিমাণ হয়েছে সেটা দেখাচ্ছেন। কারণ তারা আশা করছেন এর ফলে সাহায্যকারী সংস্থাগুলোর তালিকায় তাদের নাম যোগ করা হবে। হাবিব গুল বিবিসিকে বলেছেন, ‘যদি বিশ্ববাসী আমাদের দিকে ভাইয়ের চোখ দিয়ে দেখে এবং সাহায্য করে, এখানে আমরা আমাদের জমিতে থেকে যেতে পারি। যদি তারা সাহায্য না করে তাহলে আমরা এই স্থান থেকে চলে যাবো।’

আকাশে হেলিকপ্টার উড়ছে কিন্তু সেগুলোতে এখন আর আহতদের বহন করা হচ্ছে না। বরং সেখানে বিভিন্ন জিনিস সরবরাহের কাজ করা হচ্ছে। তালেবানের কর্মকর্তারা বলছেন, উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করা হয়েছে। এখন শত শত মানুষের আশ্রয়ের জন্য ঘর প্রয়োজন।

আঘা জান এবং তার বেঁচে যাওয়া একজন ছেলে মাটিতে খুঁটি পুঁতে তার ওপরে একটা ছাউনি দিয়ে বসে আছেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাঁবুর নিচে বসবাস করছে। আফগান এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী সংস্থাগুলো এখন ক্ষয়ক্ষতির কি পরিমাণ হয়েছে সেটা ক্ষতিয়ে দেখছে।

একইসঙ্গে তারা প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করছে। কিন্তু ইতোমধ্যেই সেখানে মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। এই সংকট আরও বাড়ছে। জাতিসংঘ ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করছে এবং তারা সতর্ক করে বলেছে, সেখানে কলেরা রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!