মাত্র পাঁচ মাসের কন্যা সন্তান আনাহিতা বুঝতেই পারলো না মা সুইটি আলম সুরভী (২২) আর তাঁকে স্পর্শ করবে না। তাঁর স্মৃতির পটে আঁকা থাকবে না মায়ের ছবি। তাঁর মা মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় চলে গেছেন না ফেরার দেশে। রবিবার (১৯ মার্চ) বিকেলে সুরভীর মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে গোপালগঞ্জ শহরের পাচুড়িয়া এলাকার বাড়িতে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
রবিবার সকালে বাবা তার মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন ঢাকায় পৌঁছে দিতে, কিন্তু ফিরলেন মেয়ের মরদেহ নিয়ে। এদিকে ছোট মেয়ে আত্মহত্যা করেছে ৪ বছর আগে, আর আজ বড় মেয়ের মৃত্যু শোকে নির্বাক সুরভীর মা বিউটি খানম।
জানা গেছে, দেড় বছর আগে রংপুরের রেজাউর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় সুরভীর। রেজাউর ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পড়ালেখার কারণে দুই মাস বয়স থেকে আনাহিতাকে মায়ের কাছে রেখে ঢাকার মিরুপুরে স্বামীর সঙ্গে থাকতেন সুরভী। ঢাকার বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় নামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন তিনি।
সুরভিকে নিয়ে রবিবার (১৯ মার্চ) ভোর ৬টায় ইমাদ পরিবহনের একটি গাড়িতে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন বাবা মাসুদ আলম। দুর্ঘটনায় ভাগ্যক্রমে মাসুদ বেঁচে গেলেও বাঁচেননি সুরভী।
চোখের সামনে মেয়েকে হারিয়ে নির্বাক বাবা। এদিকে মেয়ের মৃত্যুর কথা শুনে গোপালগঞ্জের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। একমাত্র মেয়ের মৃত্যুর কথা যেন মেনে নিতে পারছে না নিহত সুইটির মা। মেয়ের মৃত্যুর কথা মনে পড়লে বার বার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন তিনি।
এদিকে বাবা মাসুদ আলম আহতাবস্থায় গোপালগঞ্জ ২৫০-শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মাসুদ আলমের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মেরি গোপিনাথপুর গ্রামে হলেও দীর্ঘ বছর আগে শহরের পাচুড়িয়া এলাকার বাড়িতে থাকতেন।
নিহত সুইটির মামা নুরু মিয়া বলেন, আমার দুলাভাই এসেনশিয়াল ড্রাগসে নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি করেন। ওর বাবা সকালে মেয়েকে ঢাকায় পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন। দশটার আমাদের কাছে ফোন আসে আমার মেয়ে নাই।
এ দুর্ঘটনায় গোপালগঞ্জ শহরের সামচুল হক রোডের মাসুদ আলমের মেয়ে সুরভী আলম সুইটিসহ ৯ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তারা হলেন, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী আফসানা মিমি, গোপালগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনার উপপরিচালক অনাদী রঞ্জন মজুমদার (৫৩), গোপালগঞ্জের গোপিনাথপুর গ্রামের তৌয়ব আলীর ছেলে হেদায়েত মিয়া বাহার (৪২), গোপালগঞ্জ সদরে বনগ্রামের সামচুল শেখের ছেলে মোস্তাক শেখ (৩০), গোপালগঞ্জ সদরের ছুটকা গ্রামের নওশের আলী শেখের ছেলে সজিব শেখ, গোপালগঞ্জর টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কাঞ্চন শেখের ছেলে মো. কবির শেখ, গোপালগঞ্জের মুকুসদপুর উপজেলার আমজাদ আলীর খানের ছেলে মাসুদ খা (৩২), বাসের সুপারভাইজার সদর উপজেলার মানিকদাহ গ্রামের মিজানুর রহমান বিশ্বাসের ছেলে মিনহাজুর রহমান বিশ্বাস। অপরজন বাসের চালক ঢাকার জাহিদ শেখ। তাদের পরিবারেও চলছে শোকের মাতম।
খুলনা গেজেট/কেডি