অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় হাইকোর্টের আদেশ গোপন করে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে গেছেন কারা অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজন) বজলুর রশিদ। এমন একটি আবেদন আজ রোববার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে হাইকোর্টে জানানো হয়েছে। শুনানি শেষে হাইকোর্ট জামিন সংক্রান্ত বিচারিক আদালতের নথি দ্রুত সরবরাহ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া ডিআইজি প্রিজনের জামিন বাতিলের বিষয়ে বিচারিক আদালতে আবেদন করতেও দুদুককে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আজ দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনার পর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এসব আদেশ দেন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহজাবিন রাব্বানী দীপা।
প্রায় সোয়া তিন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ডিআইজি প্রিজন বজলুর রশীদকে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ইকবাল হোসেন জামিন দেন। ওই দিনই বিকেলে তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে যান। এর আগে গত ২২ অক্টোবর একই আদালত এই মামলার অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরুর আদেশ দেন। একইসঙ্গে এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২২ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে।
ডিআইজি প্রিজন বজলুর রশীদের জামিনের বিষয়ে আজ বিকেলে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘ডিআইজি প্রিজন বজলুর রশিদ হাইকোর্টের আদেশের নথি গোপন করে জামিন নিয়েছেন। বিষয়টি হাইকোর্টে নজরে আনার পর আদালত সংশ্লিষ্ট আদালতে জামিন বাতিলের আবেদন করতে বলেছেন। এ ছাড়া দ্রুত মামলার নথি সরবরাহ করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশনা দিয়েছেন। বিচারিক আদালত আগামী ২২ নভেম্বর আবেদনটি শুনানির জন্য রেখেছেন।‘
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক সন্ধ্যায় বলেন, ‘ডিআইজি প্রিজন বজলুর রশিদ করোনাকালীন হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেছিলেন। শুনানির পর হাইকোর্ট সেই জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে দেন। কিন্তু হাইকোর্টের এই আদেশ গোপন করে তিনি নিম্ন আদালতে জামিন আবেদন করেন এবং বিচারক সেটি মঞ্জুর করেন। ওই দিনই তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে যান। আজ এ বিষয়টি দুদক হাইকোর্টের নজরে এনেছে।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত বছর ২০ অক্টোবর বজলুর রশীদ ও তার স্ত্রী রাজ্জাকুন নাহারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওই দিনই দুদক পরিচালক মো. ইউসুফের নেতৃত্বে একটি টিম বজলুর রশিদকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ওইদিন আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এরপর গত ২৬ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. নাসির উদ্দীন ডিআইজি প্রিজন বজলুর রশীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গত ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ মামলাটি এই ওই আদালতে বদলির আদেশ দেন।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বজলুর রশীদ রূপায়ন হাউজিং স্টেট থেকে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী রোডের ৫৫/১ (পুরাতন) ৫৬/৫৭ (নতুন) নির্মাণাধীন স্বপ্ন নিলয় প্রকল্পের দুই হাজার ৯৮১ বর্গফুট আয়তনের অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন। অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য বাবদ তিন কোটি আট লাখ টাকা পরিশোধও করেছেন। এই অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় বাবদ বজলুর রশীদ যে টাকা পরিশোধ করেছেন, এর সপক্ষে কোনো বৈধ উৎস দেখাতে পারেননি।
এমনকি বজলুর রশিদ অ্যাপার্টমেন্টের ক্রয় সংক্রান্ত কোনো তথ্য তার আয়কর নথিতে দেখাননি। পরিশোধিত তিন কোটি আট লাখ টাকা জ্ঞাত আয় উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। সবমিলিয়ে তার বিরুদ্ধে তিন কোটি ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯০২ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ দুদক আইন ২৭ (১) ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।