সাতক্ষীরায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনের মামলায় এক বছর সাজাপ্রাপ্ত হয়ে পাঁচ শর্তে প্রবেশনে মুক্তি পাওয়া আসামী মোঃ হাসানুজ্জামান হাসান সরদার আদালতের নির্দেশনা মেনে মাদক বিরোধী প্রচারভিযান ও বৃক্ষ রোপন করছেন। শনিবার (১৪ নভেম্বার) সকাল থেকে তিনি স্থানীয়দের নিয়ে মাদক বিরোধী প্রচারনা শেষে মানববন্ধন করেছেন। বাড়িতে লাগিয়েছেন চারটি গাছ। একইসাথে কুলগাছ পরিচর্যার পাশপাশি মাছ চাষে সময় কাটাচ্ছেন হাসানুজ্জামান। মাদক মামলার এক বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামী মোঃ হাসানুজ্জামান হাসান (৩০) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুশখালি ইউনিয়নের ভাদড়া গ্রামের রজব আলী সরদারের ছেলে।
হাসানুজ্জামান বলেন, সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত-২ এর বিচারক ইয়াসমিন নাহার আমাকে কারাগারে না পাঠিয়ে মায়ের মত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দিয়েছেন। আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা ওই বিচারকের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো। আদালতের নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবো। তিনি আরো বলেন, একসময় অসৎ সঙ্গে মিশে অতি লোভে মাদক বহনের কাজে যুক্ত হয়ে পড়ি। কয়েকদিনের মধ্যে হাতে নাতে ফল পাই। ২০১৫ সালের ৩০ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে সাইকেলে করে ৩ কেজি গাজাসহ খানপুর এলাকায় র্যাব সদস্যরা তাকে আটক করে। পরদিন র্যাব-৬ এর জেওসি আব্দুল্লাহ হেল ওয়ার্ছি বাদি হয়ে তার নাম উল্লেখ করে মাদক আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ৩ মার্চ তিনি জামিনে মুক্তি পান। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি তার নামে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। এরপর থেকে নিয়মিত আদালতে হাজিরার পাশাপাশি কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহের উদ্যোগ নেন তিনি। কুল চাষের জন্য এক বছর আগে পার্শ্ববর্তী বিলে তিন বিঘা জমি ইজারা নিয়ে সেখানে প্রায় ৬০০ কুল গাছ লাগান। কুল বাগানের কাছে ১০ কাঠা জমি ইজারা নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছেন। বর্তমানে বাবা, মা, দু’মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে পাঁচজনের সংসার তার।
হাসানুজ্জামান হাসান আরো বলেন, গত ১০ নভেম্বর মঙ্গলবার রায়ের দিন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ইয়াসমিন নাহার তাকে এক বছর কারাদন্ড দেন। তবে প্রবেশন হিসেবে তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে পাঁচ শর্তে বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকার সুযোগ করে দেন। শর্তগুলো হলো, মাদক দ্রব্য সেবন না করা ও কোন খারাপ সঙ্গীর সঙ্গে চলা যাবে না, প্রতি ছয় মাস অন্তর বাড়িতে ১০টি করে গাছ লাগাতে হবে, বাবা- মায়ের সেবা করতে হবে, সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন মাদক বিরোধী প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে এবং তিন মাস অন্তর আদালতে হাজিরা দিতে হবে। সমাজসেবা অফিসের প্রবেশন অফিসার এ সংক্রান্ত রিপোর্ট দিবেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি শনিবার সকাল থেকে স্থানীয়দের নিয়ে মাদক বিরোধী প্রচারনা শেষে মানববন্ধন করেছেন। একই সাথে বাড়িতে চারটি গাছ লাগিয়েছেন। হাসানুজ্জামান অবসর সময়ে অন্যের জমিতে কাজও করেন। এ ছাড়া বাবা ও মাকে যথাযথ ভাবে সেবা যত্ন করে থাকেন। এতে তার দু’সন্তান, স্ত্রী ও বড় ভাই খুশি। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে তারা আমাকে সব ধরণের সহযোগতিা করবেন। এর ব্যত্তয় হলে তারা তাকে ফের আদালতে সোপর্দ করে দিবেন।
হাসানের বাবা রজব আলী সরদার, মা আকলিমা খাতুন ও বড় ভাই হাবিবুর রহমান লাল্টু বলেন, প্রচলিত আইনের ব্যত্তয় ঘটিয়ে বিচারক ইয়াসমিন নাহার যেভাবে হাসানকে স্বাভাভিক জীবনে ফিরে আসার সূযোগ করে দিয়েছেন তা তারা চিরজীবন মনে রাখবেন। এজন্য তারা ওই বিচারকের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
হাসান আলীর আইনজীবী এড. ফখরুল আলম বাবু বলেন, বিচারক ইয়াসমিন নাহার প্রচলিত আইনের বাইরে যেয়ে প্রবেশনে হাসানকে পরিবারের মধ্যে থেকে কিছু শর্ত আরোপ করে যেভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার সূযোগ করে দিয়েছেন তা দৃষ্টান্তস্বরুপ। প্রবেশনের জন্য কোন আবেদন না করার পরও জীবনের প্রথম অপরাধ হিসেবে তাকে এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তিনিও বিচারক ইয়াসমিন নাহারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন অফিসার সুমনা শারমিন বলেন, তিনি হাসানুজ্জামানের বিষয়ে নিয়মিত খোঁজ খবর নিচ্ছেন এবং তিন মাস পরপর আদালতে রিপোর্ট জমা দেবেন।
খুলনা গেজেট / এমএম