খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ পৌষ, ১৪৩১ | ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  খুলনা-ঢাকা রুটে নতুন ট্রেন ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ চলাচল শুরু
পাচারকারী দালাল টিটোর খপ্পরে পড়ে ধ্বংসের মুখে একটি পরিবার

আত্মহত্যা করেও ঋণ থেকে মুক্তি মেলেনি আনোয়ারের

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া গ্রামের মাহমুদ আলীর ছেলে আনোয়ারের স্বপ্ন ছিল বিদেশ গিয়ে টাকা উর্পাজন করে পরিবার স্বচ্ছল করবে। দারিদ্রতার অভিশাপ মুক্ত হয়ে গড়বে সুখের জীবন-সংসার। রঙ্গিন স্বপ্ন দেখা আনোয়ারের ভাগ্যে তা জোটেনি। মানব পাচারকারী টিটোর খপ্পরে পড়ে দায়-দেনায় জড়িয়ে শেষে আত্মহত্যা করেছেন। তারপরও ঋণ থেকে মুক্ত হতে পারেননি।

এদিকে স্বামীর আত্মহত্যার পরে ৩ বছরের ছেলেকে নিয়ে স্ত্রী বাবার বাড়িতে চলে যান। সেখানে গিয়ে আবারও বিয়ের পিড়ীতে বসেন। অথচ মৃত আনোয়ারের ভাইয়েরা আজও দেনার বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে। চোখের জলে অসহায় জীবন কাটছে আনোয়ারের মায়ের।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালে লিবিয়ায় যাওয়ার জন্য কুমড়াবাড়িয়া গ্রামের মৃত ইউছুপ আলীর ছেলে কুখ্যাত মানব পাচারকারী দালাল শাহিনুর রহমান টিটোর বোন শিউলি ও ভগ্নিপতি আব্দুল খালেকের মাধ্যমে ৩ লাখ টাকা দেয় আনোয়ারের পিতা মাহমুদ আলী। দালাল টিটো জানায় দেড় মাসের মধ্যে সব কাগজ ঠিক করে লিবিয়ায় পাঠিয়ে দেয়ার। আনোয়ার হোসেন এনজিও থেকে কিস্তি তুলে এই টাকা দেন।

এছাড়া শ্বশুর বাড়ি ও আত্মিয় স্বজনের কাছ থেকে ধার করে মোট ৩ লাখ টাকা জোগাড় করেন। দিন যত যায় আনোয়ারের ঋণের বোঝা তত বাড়তে থাকে। ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর পাওনাদারদের চাপ, সংসারের অভাব ও হতাশায় বিষপান করে আত্মহত্যা করে আনোয়ার। সাড়ে ৩ বছর বয়সেই এতিম হয় আনোয়ারের ছেলে।

পরিবারটি দালাল টিটোর নামে আত্মহত্যার প্ররোচণার মামলা করতে চাইলে এক সপ্তাহের সময় নেয় দালাল টিটো। তখন সে জানায় এক সপ্তাহের মধ্যে ৩ লাখ টাকা ফেরত দিয়ে দেবে। তবে আড়াই বছর পার হলেও টাকা দেয়নি টিটো। টাকা চাইতে গেলে উল্টো আনোয়ারের বাবা-ভাইকে হত্যার হুমকী দেয়।
পুলিশের রেকর্ড অনুযায়ী জানা যায়, মানব পাচারকারী শাহিনুর রহমান টিটোর বিরুদ্ধে আদালতে মানবপাচার ও প্রতারণার অভিযোগে ৮টি মামলা চলমান রয়েছে। মানবপাচার মামলায় জেল খেটে বেরিয়ে আনোয়ারের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে আবারও হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
কুমড়াবাড়িয়া গ্রামের বটতলা বাজারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানদার জানান, জামিনে মুক্ত হয়ে টিটো এলাকায় ফিরে আসায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। টিটো অনেকের কাছ থেকেই টাকা নিয়ে এভাবে প্রতারতণা করেছে। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চাইছে না।

গ্রামবাসি জানায় একই গ্রামের ওহিদুলের ছেলে জয়নাল ও আবজাল শেখের জামাই হাজিডাঙ্গা গ্রামের রুবেল কাছ থেকেও একইভাবে টাকা নিয়েও তাদের বিদেশে পাঠাতে পারেনি দালাল টিটো।

জয়নালের স্ত্রী জানান, আমাদের কাছ থেকে নগদ এক লাখ টাকা নেয়। চুক্তি অনুযায়ী কাগজপত্র তৈরি করে বাকি টাকা নেয়ার কথা। তিন বছরে কাগজপত্র তৈরি করতে পারেনি। টাকা ফেরত চাইলেও দেয় না। আবজাল শেখের স্ত্রী (রুবেলের শাশুড়ি) জানান, দালাল টিটো শুধু আমার জামাইয়ের কাছ থেকে নয়, পানি পথে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে অনেক মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সর্বশান্ত করে দিয়েছে।

খুলনা গেজেট/ টি আই

 




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!