১৯৭১ সালে কয়েক দফায় হানাদার মুক্ত হয়েছিল সাতক্ষীরা জেলা। সব শেষ ৭ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয়েছিল সাতক্ষীরা। এর আগে প্রথম ১৯ নভেম্বর হানাদার মুক্ত হয়েছিল জেলার উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর। ১৯৭১ সালের ১৯ নভেম্বর শ্যামনগরে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দেশের প্রথম মুক্ত অঞ্চল হওয়ার গৌরবান্বিত হয় সাতক্ষীরার শ্যামনগরবাসি।
বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে সাতক্ষীরা জেলার সর্বশেষ সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগরে ১৯৭১ সালের ১৯ আগস্ট পাক বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে প্রাণ হারায় ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা যথাক্রমে সুবেদার ইলিয়াস, আবুল কালাম আযাদ প্রমুখ। এ দিনে আরও কয়েক জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়। আকষ্মিক এ আক্রমণের বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তুললেও শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেনি।
গেরিলা যুদ্ধের কেীশল হিসেবে মুক্তিযোদ্ধারা লেঃ মাহফুজ বেগের নেতৃত্বে শ্যামনগর সদর থেকে ক্যাম্প পিছিয়ে নেয়। এ দিন থেকে পাক বাহিনী স্থায়ীভাবে ঘাটি গাড়ে শ্যামনগরে। টানা ৩ মাস পাকবাহিনী শ্যামনগর দখলে রাখে এবং তাদের হাতে প্রাণ হারায় কয়েক জন নিরীহ বাঙালি।
শ্যামনগরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা গাজী আবুল হোসেন জানান, টানা তিন মাসে পাক বাহিনী শ্যামনগর সদরে ৫/৬ বার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। তৎমধ্যে শ্যামনগর পাক হানাদার ঘাটিতে এক দিনে চারিদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধারা এমবুশ করে এবং টানা ৩ ঘন্টা যুদ্ধের পর ৪ জন পাক সেনা নিহত হয়। এ সময়ের মধ্যে শ্যামনগরের কৈখালী, ভেটখালী, হরিনগর, রামজীবনপুর, গোপালপুর পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। জানা যায় কৈখালী ও হরিনগর এলাকায় নৌকমান্ড ও মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা বাহিনী যৌথভাবে টানা তিন ঘন্টা ভয়াবহ যুদ্ধে অংশ নেয়।
শ্যামনগর বিভিন্ন এলাকায় পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে ১৮ নভেম্বর রাতের আঁধারে শ্যামনগর ত্যাগ করে। পর পরই ১৯ নভেম্বর ভোরে মুক্তিযোদ্ধারা এসে শ্যামনগর দখল নেয়। এরপর স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে ১৯ নভেম্বর শনিবার সকালে শ্যামনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড আলোচনা সভা, দোয়া অনুষ্ঠান সহ অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার দেবী রঞ্জন মন্ডল বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের হলরুমে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এসএম জগলুল হায়দার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি একে ফজলুল হক, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসএম আতাউল হক দোলন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আক্তার হোসেন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার দেবী রঞ্জন মন্ডল। আরও জানা যায়, দিবসটি উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ, লাঠি খেলা, বাদ্য-বাজনার আয়োজনসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এসজেড