দর্পণে দেবীকে মহাস্নান, চক্ষুদানে দেবীর মৃণ্ময়ীতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা ও সপ্তমীবিহীত পূজার মধ্য দিয়ে গতকাল শেষ হয়েছে সপ্তমী তিথি। আজ মহাঅষ্টমী। নতুন কাপড় পরে বাহারি সাজে মন্দিরে মন্দিরে দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দেবেন ভক্তরা। এই দিনই হবে সন্ধি পূজা। অষ্টমীবিহীত পূজা শেষেই হবে ‘কুমারী পূজা’।
এদিকে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এবারও ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশনসহ রাজধানীর কোনো মন্দিরেই কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়নি। তবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ পূজার আয়োজন করা হয়েছে।
পুরাণ মতে, দেবীর ১ বছরের কুমারীকালকে সন্ধ্যা, ২ বছরে সরস্বতী, ৩ বছরে ত্রিধামূর্তি, ৪ বছরে কালিকা, ৫ বছরে সুভগা, ৬ বছরে উমা, ৭ বছরে মালিনী, ৮ বছরে কুষ্ঠিকা, ৯ বছরে কালসন্দর্ভা, ১০ বছরে অপরাজিতা, ১১ বছরে রুদ্রাণী, ১২ বছরে ভৈরবী, ১৩ বছরে মহালপ্তী, ১৪ বছরে পীঠনায়িকা, ১৫ বছরে ক্ষেত্রজ্ঞা ও ১৬ বছরের সময়কে অন্নদা বা অম্বিকা নাম দেওয়া হয়েছে।
মূলত দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে মহামায়ার ষষ্টক অর্থাৎ ৬ বছরের কুমারী রূপ ‘উমা’র পূজা করা হয়। তবে এই দিন মন্দিরে ১ থেকে ১৬ বছরের যেকোনো হিন্দু কুমারী কন্যাকে মাতৃভাবে জীবন্ত প্রতিমা কল্পনা করে পূজা করা হয়। ভক্তদের মতে, এর মধ্য দিয়ে একাধারে ঈশ্বরের উপাসনা, মানববন্দনা আর নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা হয়। মূলত নারীর সম্মান, মানুষের সম্মান আর ঈশ্বর আরাধনাই কুমারী পূজার অন্তর্নিহিত শিক্ষা। আগামীকাল নবমীতে মণ্ডপে মণ্ডপে দেবীর মহা প্রসাদ বিতরণ করা হবে। ১৫ ই অক্টোবর দশমী তিথিতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী দোলায় চড়ে আবারও ফিরবেন কৈলাশে।
সরজমিনে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই দেবী দর্শনে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটের শুরু হয় অষ্টমী পূজা। সকাল ৮টা ১৪ মিনিট থেকে ৯টা ২ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে সন্ধিপূজা। সাড়ে ৯টা থেকে ১০টায় শুরু হবে অষ্টমী পূজার পুষ্পাঞ্জলি। পূজা চলবে রাত ১১টা পর্যন্ত।
বাহারি সজ্জায় সাজানো হয়েছে পুরো ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণ। চলমান করোনা পরিস্থিতির দিকেও রাখা হয়েছে বিশেষ নজর। পুরো মন্দিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে পুলিশ-আনসারসহ একাধিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে গতবারের মতো করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এবারও এখানে হচ্ছে না ‘কুমারী পূজা’।
রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনের পূজাও বেশ নজর কেড়েছে দেশবাসীর। ধরা হয় সব থেকে জাঁকজমকপূর্ণ কুমারী পূজা হয় সেখানে। কিন্তু এখানেও এবার হচ্ছে না কুমারী পূজা।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি বলেন, দুর্গা পূজার প্রায় প্রতিদিনই মন্দিরে মন্দিরে প্রচুর জনসমাগম হয়। অষ্টমী তিথিতে কুমারী পূজার সময় এই জনসমাগম জনসমুদ্রে রূপ নেয়। তাই চলমান করোনা পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে গতবারের ন্যায় এবারও ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশনসহ রাজধানীর কোনো মন্দিরেই কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়নি। তবে রাজধানীর বাইরে অনেক জায়গাই কুমারী পূজা হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/ টি আই