সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আজ বুধবার শীর্ষ বৈঠকে বসছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ঠিক যখন দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক প্রায় তলানিতে ঠেকেছে, তখনই দুই নেতা বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন।
বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে মতবিরোধ চরমে পৌঁছেছে। এ অবস্থায় দুই দেশের শীর্ষ বৈঠক বন্ধুত্বপূর্ণ হবে না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ, সাইবার হামলা, রাশিয়ায় বিরোধীদের ওপর জেল-জুলুম-নির্যাতনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মস্কোর ওপর একাধিক দফায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। রাশিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতাকে হুমকিতে ফেলার অভিযোগ করেছে।
২০১৮ সালের জুলাইয়ে ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন পুতিন। সেই বৈঠকে পুতিনের সমালোচনা তো দূরের কথা, উল্টো মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেনি বলে ট্রাম্পই সাফাইমূলক কথা বলেন। টাইমের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, জেনেভায় বাইডেনের সঙ্গে পুতিনের কাল বুধবারের বৈঠকটি সন্দেহাতীতভাবে হেলসিংকির বৈঠকটির মতো হবে না। বরং এ বৈঠক বেশ ভিন্নই হবে। রাশিয়ার ব্যাপারে বাইডেনের অবস্থান কঠোর। ফলে তাঁর এ মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ বৈঠকে পড়তে পারে।
কী আলোচনা হবে
জেনেভায় বাইডেন ও পুতিনের মধ্যকার বৈঠকে কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে, তার কিছুটা আভাস উভয় পক্ষ থেকে পাওয়া গেছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দুই নেতার মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এসব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর মধ্যে রয়েছে সাইবার হামলা, মানবাধিকার, ইউক্রেন, বেলারুশ প্রভৃতি প্রসঙ্গ।
‘দ্য নিউ কোল্ড ওয়ার: পুতিন’স রাশিয়া অ্যান্ড দ্য থ্রেট টু দ্য ওয়েস্ট’ বইয়ের লেখক অ্যাডওয়ার্ড লুকাসের মতে, পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বাইডেন রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির প্রসঙ্গ তুলতে পারেন। তাঁকে গত বছরের আগস্টে নার্ভ এজেন্ট প্রয়োগ করে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল। এ জন্য মস্কোকে দায়ী করা হয়। তবে মস্কো এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। জার্মানিতে চিকিৎসা নিয়ে রাশিয়ায় ফেরার পর নাভালনিকে দণ্ড দিয়ে এরই মধ্যে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে উভয় দেশের প্রেসিডেন্ট আলোচনা করবেন। তাঁরা আলোচনা করবেন কৌশলগত স্থিতিশীলতার বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে। বিভিন্ন আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনের উপায় নিয়ে তাঁরা কথা বলবেন। করোনা মহামারি মোকাবিলাসহ আন্তর্জাতিক সমস্যা নিয়ে তাঁরা বৈঠকে আলাপ করবেন।
কী অর্জন হতে পারে
কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের জ্যেষ্ঠ ফেলো চার্লস কুপচান মনে করেন, জেনেভার বৈঠকে উভয় নেতা ঐক্যের একটি সাধারণ ক্ষেত্র খোঁজার চেষ্টা করবেন। তাঁরা দুই দেশের মধ্যকার আলাপ-আলোচনার ক্ষেত্রে অগ্রগতি আনার চেষ্টা করবেন। কিছু বিষয়ে বাইডেন ও পুতিন একমত হতে পারেন। যেমন করোনা মহামারি, বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট, মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতা ইত্যাদি।
খুব কম বিশেষজ্ঞই বাইডেন-পুতিন বৈঠক থেকে নাটকীয় কোনো ফল আশা করছেন। কেননা, বাইডেন কেবল ক্রেমলিনের সঙ্গে একটি কার্যনির্বাহী সম্পর্ক স্থাপন করতে চান। অন্যদিকে রাশিয়া ঠিক কী চায়, তা অস্পষ্ট।
চার্লস কুপচানের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে এখন যে সম্পর্ক বিরাজ করছে, তার উন্নতি ঘটাতে একটি ইচ্ছা উভয় পক্ষেই লক্ষ করা যাচ্ছে। তবে বাইডেন-পুতিনের বৈঠকের ফলাফল নিয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা ঠিক হবে না। রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যদি নতুন করে কোনো ধরনের সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে হয়, তার জন্য বেশ কাঠখড় পোড়াতে হবে। আর তাতে যথেষ্ট সময়ও লাগবে।
খুলনা গেজেট/ টি আই