জেলেদের অপহরণের পর মুক্তিপণ নিয়ে ট্রলারসহ ভাসিয়ে দেয় জলদস্যুরা। আর তীরের লোকদের জানিয়ে দেয় ট্রলারভর্তি ডাকাত যাচ্ছে। এমন খবরে অপহরণের শিকার জেলেদের আটকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা। পরে পুলিশ জানতে পারে পিটুনির শিকার জেলেরা জলদস্যু নয়, তারাই অপহৃত হয়েছিল। এর পরই তদন্তে নামে এলিট ফোর্স র্যাব-৮।
অবশেষে শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে জলদস্যুদের সমন্বয়কারীসহ পাঁচজনকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে র্যাব।
এ সময় তাদের কাছ থেকে একনলা একটি বন্দুক, দুটি ওয়না শ্যুটার গানসহ তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র, ৮ রাউন্ড গুলি, চারটি দেশি অস্ত্র, দুটি লোহার রড, কয়েকটি মোবাইল, নগদ টাকা, গামছাসহ ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মালামাল উদ্ধার করা হয়।
বেলা ১২টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, র্যাব জলদস্যু দমনে কাজ করে যাচ্ছে। উপকূল কিংবা সমুদ্রে কোথাও জলদস্যুদের স্থান সেই। তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
র্যাব-৮ এর সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ২০ নভেম্বর সকাল থেকে রাত ১০টার মধ্যে বঙ্গোপসাগরের ৩০-৩৫ কিলোমিটার অভ্যন্তরে (পাথরঘাটা, বরগুনা, বলেশ্বর ও পায়রা মোহনা) ৭টি নৌকায় ডাকাতি করে মোবাইলসহ মূল মাঝি ও কয়েকজন সদস্যসহ সাতজনকে অপহরণ করে জলদস্যুরা। পরে তাদের পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি দেখিয়ে মুক্তিপণ দিতে চাপ প্রয়োগ করে। ডাকাতিকালে লুট করা মাছসহ মালামাল নিয়ে সমন্বয়কারী খলিল জমাদ্দার কম দামে বিক্রি করে মাছ ব্যবসায়ীর কাছে।
ওদিকে অপহৃতদের একটি নৌকার পাটাতনের নীচে আটকে রাখে। দিনের বেলা নেটওয়ার্কের বাইরে ও রাতে নেটওয়ার্কে এসে মুক্তিপণ দাবি করে দস্যুরা। ২৩ নভেম্বর র্যাবের অভিযান শুরুর খবর পেয়ে জিম্মি মাঝিদের নৌকায় রেখে জলদস্যুরা পালিয়ে যায়। পরে কৌশলে দস্যুরা তীরে খবর জানায় ডাকাত বোঝাই একটি বোট গলাচিপা নদীর তীরে আসছে। খবর পেয়ে স্থানীয়রা ট্রলারে থাকা অপহৃত জেলেদের মারধর করে। তবে র্যাবের একটি দল সেখানে পৌঁছালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় এবং জিম্মিদের উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর ১৭ নভেম্বর পাথরঘাটা থানায় দুটি মামলা হয়।
র্যাব গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৮ এর অভিযানে গত ৩০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ থেকে বঙ্গোপসাগরে জেলেদের নৌকায় ডাকাতির মুক্তিপণ সংগ্রাহক পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার বাসিন্দা মো. ইলিয়াস হোসেনকে (২৮) গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে মুক্তিপণের ৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে জানা যায়, জলদস্যুরা গলাচিপায় অবস্থান করছে। গুরুত্বপূর্ণ সেই তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার সকালে পটুয়াখালীর গলাচিপায় অভিযানকালে পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয় এবং অপর কয়েকজন পালিয়ে যায়। এ ছাড়া সেখানে ডাকাত দলের সঙ্গে গুলিবিনিময়ও হয়।
এ সময় র্যাবের হাতে আটক হন- বরগুনার তালতলী এলাকার বাসিন্দা ও সমন্বয়কারী মো. খলিল জমাদ্দার (৫০), পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মো. মাহাতাব প্যাদা (৩৩), মো. জামাল আকন্দ (৩৬), মো. মাছুম ওরফে মানছুর খলিফা (৪৬) ও পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার মো. মিনাজ খাঁ।
তারা সবােই স্ব-শরীরে ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে। এ ছাড়া এদের মধ্যে গ্রেফতার জামাল ডাকাতির পাশাপাশি সমুদ্রে দিক নির্ণয় ও নৌকা চালনার কাজ করেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খুলনা গেজেট/এএ