খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  অ্যান্টিগা টেস্ট: প্রথম দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলল ২৫০, বাংলাদেশ পেল ৫ উইকেট

আগামী অর্থবছরে প্রণোদনা-ভর্তুকি ‘কমাতে চায়’ সরকার

গেজেট ডেস্ক

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকির অঙ্ক এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার নিচে রাখতে চায় সরকার। প্রাথমিকভাবে ভর্তুকির প্রাক্কলন করা হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এখন ভর্তুকির পরিমাণ চার হাজার কোটি টাকা কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ভর্তুকির কমানোর উপায় হিসেবে ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে চলতি বছরেই মোট তিন দফায় ১৫ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগামী জুনের আগে আরও দুই থেকে তিন দফা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিরও পরিকল্পনা রয়েছে। এই দাম বাড়ানোর কারণে বিদ্যুৎখাতে ভর্তুকির পরিমাণ বেশ খানিকটা কমে আসবে।

একই সাথে বিভিন্নখাতে প্রণোদনার পরিমাণ বাজেটে কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর ফলে ভর্তুকির অঙ্কও কমে যাবে বলে মনে করছেন অর্থবিভাগের সংশ্লিষ্টরা।

অর্থবিভাগ সূত্র জানায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণখাতে বরাদ্দ দেওয়া রয়েছে ৮১ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে অতিরিক্ত চাহিদা কারণে ভর্তুকির পরিমাণ ২০ হাজার ৫১০ কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর ফলে, সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ গিয়ে ঠেকেছে এক লাখ দুই হাজার কোটি টাকার ঘরে।

এখন আগামী অর্থবছরের ভর্তুকি বরাদ্দ নিরূপণ করতে গিয়ে অর্থবিভাগের সংশ্লিষ্টরা এখাতে বরাদ্দ সহনীয় করার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, গত ডিসেম্বরে বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণখাতে বরাদ্দের প্রাথমিক একটি প্রাক্কলন করা হয়েছিল। সেটি আকার ছিল এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এখন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আগামীতে আরও বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা রয়েছে। অন্যদিকে, প্রণোদনা অর্থ কিছু কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে এখাতে বরাদ্দ এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে রাখা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করছি।

তিনি আরও বলেন, আইএমএফ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবেও ভর্তুকি কমিয়ে আনার বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি বরাদ্দ রয়েছে বিদ্যুৎখাতে (১৭ হাজার কোটি টাকা)। গেল অর্থবছরে যা ছিল ১১ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা। চলতি বছরে এলএনজি (আমদানিকৃত তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা (গত অর্থবছরে একই পরিমাণ ছিল)। এছাড়া, খাদ্যখাতে ভর্তুকি রয়েছে ৫ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা (গত অর্থবছরে ৪ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা)। কৃষিখাতে ভর্তুকি ১৬ হাজার কোটি টাকা (গত অর্থবছরে ১৫ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা)। টিসিবি ও অন্যান্য খাতে ভর্তুকি বরাদ্দ ১১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। আর প্রণোদনা (রপ্তানি ও রেমিট্যান্স) ১৫ হাজার ২২৫ কোটি টাকা (গত অর্থবছরে ছিল ১৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা)। নগদ ঋণখাতে এবার ভর্তুকি রয়েছে ১০ হাজার টাকা।

অর্থবিভাগের একটি সূত্র জানায়, গত ২০ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বাজেট সম্পর্কিত সম্পদ কমিটির যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে ভর্তুকির অতিরিক্ত চাপের বিষয় নিয়ে অনেকটা উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ভর্তুকি কমানোর জন্য দ্রুত বিদ্যুৎ, সার ও পানির দাম বৃদ্ধির সুপারিশও করা হয়েছে।

বলা হয়েছে, বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ভর্তুকির এত চাপ অর্থনীতি সহ্য করতে পারবে না। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বিদ্যুৎ ও পানির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হলেও এই মুহূর্তে সারের দাম বাড়ানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ও প্রণোদনাখাতে ব্যয় বরাদ্দ কমিয়ে ‘ভর্তুকি রাস’ টেনে ধরা হবে।

উল্লেখ্য, প্রতি বছরই ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। যেমন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ভর্তুকিখাতে বরাদ্দ ছিল ৪৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর আগে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ৪২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের (২০১৭-১৮) বাজেটে ভর্তুকি, নগদ সহায়তা, প্রণোদনাখাতে বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার ৪৫ কোটি টাকা; যা মোট জিডিপির ১ দশমিক ৩ ভাগ। তার আগের অর্থবছরের বাজেটে এখাতে বরাদ্দ রাখা ছিল ২৬ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ১ দশমিক ২ ভাগ। যদিও সংশোধিত বাজেটে এ ভর্তুকির পরিমাণ ২৩ হাজার ৮৩০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এর আগে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।

খুলনা গেজেট/ বিএম শহিদ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!