উচ্চ আদালত থেকে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ফুলতলা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ আকরাম হোসেন। ভোটের লড়াইয়ে তার ফিরে আসায় নিরুত্তাপ খুলনা- ৫ আসনে নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের।
এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন সাবেক মন্ত্রী বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। তবে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ আকরাম হোসেন নির্বাচনী লড়াইয়ে ফিরে আসলেও জয়ের ব্যাপারে কোন চ্যালেঞ্জ, প্রতিবন্ধকতা কিংবা কোন বাধা মনে করছেন না আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী।
জানা যায়, রাজনৈতিক দিক দিয়ে আসনটি বরাবরই আওয়ামীলীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত। দীর্ঘদিন এই আসনটিতে প্রতিনিধিত্ব করেছেন প্রয়াত মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বিশিষ্ট আইনজীবী সালাউদ্দিন ইউসুফ। তার মৃত্যুর পর এলাকার জনপ্রিয় কোন নেতা না হলেও কপাল খুলে যান ডুমুরিয়া উপজেলার চন্দ্র পরিবারের সন্তান, স্কুল শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র চন্দের। ২০০০ সালের ৬ অক্টোবর সালাউদ্দিন ইউসুফ মৃত্যুর পর একই বছরের ২০ ডিসেম্বর উপ-নির্বাচনে সর্বপ্রথম তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকে আর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আসনটি থেকে তিনি পরপর ৪ বার আওয়ামী লীগের টিকিট বাগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন। ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপি-জামাত জোট প্রার্থী অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ারের কাছে হেরে যান। এরপর ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন।
ফুলতলা, ডুমুরিয়া ও গিলাতলা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে খুলনা- ৫ আসন গঠিত। আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮৩ হাজার ২৭১ জন। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায় নারায়ণ চন্দ্র চন্দ খুব বেশি ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হননি। এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, সংখ্যালঘু অধুষ্যিত ডুমুরিয়া উপজেলায় তার রাজনৈতিক অবস্থান আগের মতো শক্ত অবস্থানে নেই। নানাবিধ কারণে তিনি এলাকায় বিতর্কিত হয়েছেন। দলীয় অনেক নেতা কর্মী প্রকাশ্যে, গোপনে তার বিরোধিতা করছেন। আসানটিতে বিএনপি জামায়াতের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটার রয়েছে। ৭ জানুয়ারির অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে আসনটিতে লড়াই হবে আওয়ামীলীগ বনাম আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে। এক্ষেত্রে দলীয় ভোট ভাগাভাগি হবে। বিএনপি জামাতের বিপুল সংখ্যক ভোট নারায়ণ চন্দ্র চন্দের পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এক্ষেত্রে উচ্চ আদালত থেকে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া শেখ আকরাম হোসেনের পাল্লা ভারী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে এলাকাবাসীর ধারণা। তাছাড়া তিনি প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় ডুমুরিয়া এবং ফুলতলায় তার সমর্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করছে। দল মত নির্বিশেষে শেখ আকরাম হোসেনকে বিজয়ী করতে একট্টা হয়েছেন ফুলতলা উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নের অধিবাসী।
এ দিকে আসনটি থেকে শেখ আকরাম হোসেন দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় গণসংযোগ করে আসছিলেন। দলীয় মনোনয়নের আশায় তিনি অনেক চেষ্টা, তদবির এবং জোর লবিং ও করেছেন। সর্বশেষ দল থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় তিনি গত ২৯ নভেম্বর স্বেচ্ছায় উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আকরাম হোসেন এক সময় ফুলতলা উপজেলার দাপুটে জাতীয় পার্টির নেতা ছিলেন। খুলনায় জাতীয় পার্টির নীতি নির্ধারকদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম একজন। ১৯৮৫ সালে প্রথমবারের মতো জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালেও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। এরপর আওয়ামীলীগে যোগদান করে তার দক্ষতা এবং যোগ্যতায় বাগিয়ে নেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ।
খুলনা গেজেট/এনএম