খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ আষাঢ়, ১৪৩১ | ২৬ জুন, ২০২৪

Breaking News

  হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে ট্রাকচাপায় পুলিশ সদস্য নিহত
  লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত
  কেনিয়ায় কর বৃদ্ধির প্রতিবাদে গণবিক্ষোভ, গুলিতে নিহত ১০

আইলার দিনে নতুন ঘূর্ণিঝড়, এখনো ঝুঁকিতে উপকূলের ৫১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’র আঘাতের ১৫ বছর পরও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দুটি মেগাপ্রকল্পসহ বেশ কিছু প্রকল্প নেওয়া হলেও সেসবের বাস্তবায়নকাজ চলছে ধীরগতিতে। ফলে ওই অঞ্চলে দুর্যোগের ঝুঁকি প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

এমন অবস্থায় আজ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে নতুন ঘূর্ণিঝড় রিমেল। কাল রোববার রাতে এটি উপকূলে আঘাত করবে। এনিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে এবং ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাংশে আঘাত হানে। টানা ১৫ ঘণ্টার ঝড় ও ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। বিস্তীর্ণ এলাকায় দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম লবণ পানিতে তলিয়ে যায়।

বহু কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি, ফসলের ক্ষেত ও মাছের ঘের ভেসে গিয়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়। নিহত হন শিশুসহ ৭৩ জন নারী-পুরুষ। হাজার হাজার গবাদি পশুর মৃত্যু হয়। উপকূলজুড়ে অর্থনীতিতে পড়ে বিরূপ প্রভাব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইলার সেই ক্ষত এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি উপকূলবাসী। এর মধ্যে ২০১৯ সালের ৪ মে ফণী, ওই বছরের ১০ নভেম্বর বুলবুল, ২০২০ সালের ২০ মে আম্ফান, ২০২১ সালে ২৬ মে ইয়াস, ২০২২ সালের ১২ মে অশনি এবং ২০২৩ সালের ১৪ মে ‘মোখা’ আঘাত হানে। এতে আরো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সর্বশেষ উপকূলে ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাত হানার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

নতুন করে ঘূর্ণিঝড় রিমালের বার্তা উপকূলবাসীকে রীতিমতো দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে উপকূলীয় জনপদে বসবাসকারী জনসাধারণ। কারণ উপকূলের বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চললেও বেশ কিছু স্থান এখনো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।

বিশেষ করে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট উপকূলে দুই হাজার কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় ৫১ কিলোমিটার জরাজীর্ণ ও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। বাঁধের ওই অংশ ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট প্লাবন মোকাবেলার সক্ষমতা রাখে না। এমনকি আগামী বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকার প্রায় ৬০০ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।

যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা দাবি করছেন, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাটসহ উপকূলীয় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অনেকটাই সংস্কার করা হয়েছে। আরো কিছু এলাকা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে।

তবে পাউবো কর্মকর্তাদের বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির মিল পাওয়া যায়নি। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে নেওয়া প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের কাজ ধীরগতিতে চলছে। এক হাজার ২৩ কোটি টাকার ‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নম্বর-১৫ পুনর্বাসন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প ২০২১ সালে এবং ২০২২ সালে এক হাজার ১৭২ কোটি ৩১ লাখ টাকার খুলনার ‘কয়রা উপজেলার পোল্ডার নম্বর-১৪/১ পুনর্বাসন’ শীর্ষক আরেকটি প্রকল্প একনেকে পাস হয়।

এই মেগাপ্রকল্পগুলোর পাশাপাশি বেশ কিছু ছোট প্রকল্প নেওয়া হয়। এর মধ্যে ‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং-১৫ পুনর্বাসন’ প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুন মাসে শেষ হবে। অথচ প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাজের অগ্রগতি মাত্র ২০ শতাংশ। আর খুলনার ‘কয়রা উপজেলার পোল্ডার নম্বর-১৪/১ পুনর্বাসন’ শীর্ষক প্রকল্পের বাস্তবায়নকাজের অগ্রগতি ৫ শতাংশের কম।

স্থানীয় জনগণের অভিযোগ, শুধু মেগাপ্রকল্প নয়, বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে। প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সময়মতো মেরামতের উদ্যোগ নিলে কম খরচ ও কম সময়ের মধ্যে মানসম্মত কাজ করা সম্ভব। কিন্তু বর্ষার আগমুহূর্তে নদীতে জোয়ারের পানি বাড়লে পাউবো কর্তৃপক্ষ বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেয়। এতে একদিকে খরচ বাড়ে, অন্যদিকে তড়িঘড়িতে কাজ হয় নিম্নমানের। ফলে উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকার ঝুঁকি কমছে না, বরং বাড়ছে।

খুলনার উপকূলীয় বেশ কিছু এলাকায় বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বলে জানান পাউবো খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম। তিনি বলেন, বিভিন্ন পোল্ডারের বাঁধ পরিদর্শন করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েক স্থানে সংস্কারকাজ শুরু করা হয়েছে। বাকি কাজও দ্রুত শুরু করা হবে। এ ছাড়া জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/হিমালয় 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!