সম্প্রতি প্রবল বৃষ্টিপাত ও অস্বাভাবিক জেয়ারের কারনে বিষখালী নদীর পানি বিগত ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থান অতিক্রম করে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
গত পূর্ণিমা ও অমাবস্যার প্রভাবে দু‘দফায় জোয়ারের পানি অস্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে বিষখালী নদীর তীরবর্তী এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে উপজেলার কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, গ্রামীণ রাস্তাঘাট, উপকূলীয় বাঁধ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠনের ক্ষয়-ক্ষতি হয়।
জানা গেছে, উপজেলার প্রায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ১০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষতি সাধিত হয়। বেড়িবাঁধ ভেঙে কালিকাবাড়ি, লক্ষীপুরা ও বুড়ামজুমদারের ১৮৫ টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। রোপা আমন, উফশী আমন, আমন বীজতলা, গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি,পানের বরজ বিনষ্ট হওয়ার ফলে কৃষি ক্ষেত্রে ৫০ হেক্টর জমির প্রায় ১ কোটি ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয়দের তথ্যনুযায়ী জোয়ার ও প্লাবনে ৩০ ভাগ ফসলি জমি পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ জানান, জোয়ারের পানি, বৃষ্টি ও করোনায় এখনকার ১১৪ টি বয়লার, হাঁস ৩৩টি ও লেয়ার মুরগি ৬৮ টি, গরু ৯৬ টি, ছাগল ২৯৩ এবং ১ জন ভেড়া পালনকারী সবাই কম-বেশি ক্ষতির মুখে পড়ে।
দক্ষিণ ভোড়া গ্রামের ভেড়া খামারী মো: হারুন জানান, তার খামারের ৩২ টি ভড়া মারা গিয়ে যে ক্ষতির মুখে পড়েছে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। আয়লা চান্দখালী গ্রামের জলিলুর রহমানের ২৫টি ছাগল মারা যাওয়ায় প্রায় ২ লাখ টাকা লোকসানে পরে।
অন্যদিকে দেশান্তরকাঠী গ্রামের মৎস্য চাষী মনির মল্লিক জানান, দু‘দফায় অস্বাভাবিক জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে তার পুকুর ও ঘেরের লক্ষাধিক টাকার মাছ ভেসে গেছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোস্তফা আল রাজীব জানান, অতিরিক্ত পানিতে তার চাষীদের ১০ একর জলাশয় পানিতে তলিয়ে যায়। এতে ৮০ টি পুকুর ও ২০ টি ঘেরের ৬ মেট্রিক টন মাছ ও পোনা ভেসে গিয়ে ১২ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়। তিনি ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসনের দাবি করেন।
একাধিক ভুক্তভোগী জানান, এখন নদীর পানি কমলেও জোয়ারের পানিতেই তাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, এবারে এ জেলার বেশির ভাগ নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে। যা বিগত বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিএম ওয়ালিউল ইসলাম জানান, বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ইতোমধ্যে চাল বিতরণ করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম