আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় পরিবারতন্ত্র, রাজনৈতিক চাপ আর লুটপাটের মহোৎসব চলছে দেশের ব্যাংক খাতে। ব্যাংকিং অ্যালমানাকের মোড়ক উন্মোচনে এ কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ। আর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের মতে, সমস্যা চিহ্নিত না করে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হলে সংকট আরো বাড়বে।
গেলো কয়েক বছর ধরেই দেশে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে ব্যাংক খাত। মন্দঋণ, পরিবারতন্ত্র, জালিয়াতি এমনকি টাকা পাচারের সঙ্গেও উঠে এসেছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম। যার পেছনে পুঞ্জীভূত অব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক চাপ আর সর্বোপরি আইনের বরখেলাপকে দুষছেন বিশেষজ্ঞরা।
ব্যাংকিং অ্যালমানাকের মোড়ক উন্মোচনে সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, পুরো ব্যবস্থাটাই চলছে উল্টো রথে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় অন্যায্য সুবিধা নিচ্ছেন প্রভাবশালীরা। সমস্যা চিহ্নিত না করে সমাধানের উদ্যোগ- সংকট বাড়াচ্ছে এ খাতের।
তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো উল্টো রথে চলছে। সামনে না পেছনে যাবে-তা স্পষ্ট নয়। বাংলাদেশ বলে এই, তো বিশ্বব্যাংক বলে ওই। উভয়ের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান।
অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। বাংকিং সেক্টরে কোনো বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান নেই। ফলে একটি পরিবারের হাতে অনেক ব্যাংকের মালিকানা চলে যাচ্ছে।
সুদহার নিয়ে সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, বারবার এটি পরিবর্তনের ফলে নেতিবাচক বার্তা যাবে অর্থনীতিতে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রসঙ্গে জানানো হয়, বাংলাদেশের বাস্তবতা বুঝে সিদ্ধান্ত দিতে হবে সংস্থাটিকে। এসময় ব্যাংক খাতের চলমান অনেক আইনকে অদ্ভূত বলে মন্তব্য করেন বক্তারা। পরামর্শ দেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে উপযোগী পদক্ষেপ নেয়ার।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, কাজেই আমাদের বাস্তবতায় ঋণের সুদহারের একটা ঊর্ধ্ব জায়গা হয়তো নির্ধারণ করে দেয়া প্রয়োজন হবে। আইএমএফ এই বাস্তবতা বোঝে না।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মূল্যস্ফীতি সব দেশেই হয়। আমাদের এখানেও হচ্ছে। আগে স্বীকার করতে হবে মূল্যস্ফীতিটা ভালো নয়। পরে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে।
এসময় রপ্তানি-রেমিট্যান্সের ভিন্ন ভিন্ন তথ্যেরও সমালোচনা করেন বক্তারা। তিনি বলেন, এখনও তথ্যের বিভ্রাট রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলে, এত কোটি টাকার রপ্তানি হয়েছে। অন্যদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো বলে, এত কোটি টাকার রপ্তানি হয়েছে। দুই সংস্থার মধ্যে তথ্যের মিল থাকে না।
খুলনা গেজেট/কেডি