‘নগদ’ এ দিশেহারা উপকারভোগীরা। নগদ এ কোন উপকারভোগীকে বেশি টাকা দেয়া, কাউকে কম দেয়া, আবার কেউকে টাকা না দেয়া, টাকা’র কোন ম্যাসেজ না দেয়া এবং প্রতারক চক্র কর্তৃক টাকা হাতিয়ে নেয়া সহ নানা অনিয়মে দিশেহারা উপকারভোগীরা। এসব প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেও কোন কাজ হচ্ছেনা জানিছেন ভূক্তভোগীরা। নগদ’এর উপজেলা পর্যায়ে কোন এজেন্ট শাখানা থাকায় জেলায় গিয়েও কোন সুরাহা পাচ্ছে না ভূক্ত ভোগীরা।
জানা যায়, নগদ’র জেলাপর্যায়ে একজন কর্মকর্তা রয়েছেন। তিনি প্রতিদিন জেলার শতশত মানুষের সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না। তিনি প্রতিদিন এক শ’ ব্যক্তির সমস্যা সমাধান করে দেন। এরপর আর কোন কাজ করেন না। তিনি অফিস করেন সকাল ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। নগদ এর মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি সহ বিভিন্ন ভাতা তুলতে উপকার ভোগীরা দিশেহারা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, খুলনা পোস্ট অফিস জিপিও-৯০০০ সামনে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা সেবা বঞ্চিত উপকার ভোগীদের সাথে কথা হয়। এসময় ফকিরহাট থেকে আসা শেখ আব্দুল মাজিদে ছেলে মো. হাবিব শেখ (৬০) বলেন, আমি আমার নগদ এর পিন পরিবর্তনের জন্য এসেছি। কিন্তু ১টার পর আসার কারণে তারা আমার কোন কাজ করে দিচ্ছেনা। অভয়নগর উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা একটি প্রতারক চক্র ‘নগদ’এর মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে আল-হেলাল ইসলামী একাডেমী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: গোলাম মোর্শেদ অভয়নগর থানায় জিডি করেছে। যার নং ৩০৫, তারিখ: ০৭/০৩/২০২১খ্রি:।
আরও জানা যায়, আল-হেলাল ইসলামী একাডেমী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০ থেকে ১৫জন শিক্ষার্থীর টাকা এ প্রতারক চক্র কৌশলে তাদের পিন কোড নিয়ে ২০২০ সালের ১ম, ২য় ৩য় ও ৪র্থ কিস্তির টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
আল হেলাল ইসলামী একাডেমী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানায়, যাদের মোবাইল থেকে নগদের মাধ্যমে টাকা প্রতারক চক্র তুলে নিয়েছে তারা হলো ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. আরাফাত মোল্যার মা’ শিরিনা বেগম, জান্নাতুল ফেরদৌসের মা’রুমা খাতুন, ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়া ইসলামের মা মোছা. পাপিয়া খাতুন, ইলিয়াস মোড়ল এর মাসুমা আক্তার, ১ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তামজিদ ইসলামের মা সোনিয়া ইয়াসমীনসহ আরও অনেকের টাকা তারা তুলেনেছে।
এ ব্যাপারে ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস এর মা রুমা খাতুন বলেন, প্রতারক চক্র প্রথমে আমাকে মোবাইল করে বলে আপনার মেয়ে আল হেলাল স্কুলে পড়ে। আমি বললাম হাঁ। এরপর সে বলে এখনই আপনার মোবাইলে টাকা ঢুকবে। এখনই আপনার মোবাইলে একটি ম্যাসেজ যাবে। ম্যাসেজের নম্বরটি আমাকে বলবেন। সে অনুযায়ী আমি তাকে পিন কোড দিয়ে দিয়েছে। এখন আমি আর পিন পরিবর্তন করতে পারছিন। যে কারণে প্রতারক চক্র আমার টাকা উত্তোল করে নিচ্ছে।
মালিহা এর মা পলিখাতুন বলেন, নগদ এ কোন ম্যাসেজ দেয় না যে কারণে টাকা দেচ্ছে কিনা তা বোঝার উপায় নেই। আবার কেউ কেউ অভিযোগ করেন তাদের পিন কোড হারিয়ে গেছে যে কারণে তারা তাদের টাকা তুলতে পারছেনা না। আবার তাদের পিন কোন উদ্ধার করতে যশোরে গেলে তাদের বিড়াম্বনার শিকার হতে হচ্ছে।
তারা অভিযোগ করে বলেন, যশোর জেলায় একটি মাত্র নগদ এর অফিস আছে। এখানে একজন কর্মচারী আছে। একজন কর্মচারীর পক্ষে যশোর জেলাসহ পার্শবর্তী জেলা-উপজেলার মানুষের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। এব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মাসুদ করিম বলেন, নগদ এ নানা সমস্যা। প্রতিদিন শুধু অভিযোগ আসছে। আমরা সেগুলো উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। প্রতারক চক্রের কথা বললে তিনি বলেন, দুই একজন প্রধান শিক্ষক প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে জিডি করেছে। আমরা সে কপিও পাঠিয়ে দিয়েছি। এ ব্যাপারে নগদ’র খুলনা বিভাগীয় কর্মকর্তা জুলফিক্কার আলীর নম্বরে বারবার কল দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।