অভয়নগরে রমজানকে ঘিরে নিত্য পণ্যের দাম আকাশ ছোয়া। বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। কপালে পড়েছে চিন্তার ভাজ। স্বল্প আয়ের মানুষেরা তাদের আয়-ব্যয়ের সমন্বয় করতে পারছেন না। কয়েক মাসের ব্যবধানে নিত্য পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি যেন কিছুতেই থামছে না।
বুধবার নওয়াপাড়া বড় বাজার, ভাঙ্গাগেট কাঁচা বাজার, চেঙ্গুটিয়া, তালতলা কাচাঁ বাজার, ধোপাদী কাচাঁ বাজার, ভাটপাড়া কাচাঁবাজার, সুন্দলী কাচাঁ বাজার, বাঘুটিয়া কাচাঁ বাজার ঘুরে এই চিত্র পাওয়া যায়।
বাজারে এসে ক্রেতারা যেন খেই হারিয়ে ফেলছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্রেতা বলেন ‘ভাই বাজারে আগুন। গরীব মানুষের বুঝি আর বাচাঁর উপায় নাই। সয়াবিন তেল কিনলে আর কিছু কিনতে টাকা থাকেনা। সয়াবিন তেলের বাজারে যেন আগুন ধরেছে। যখন তখন কোন কারণ ছাড়াই সব ধরণের দ্রব্যের মূল্য বেড়েই চলেছে।’
কয়েক মাসের ব্যবধানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। সেই সাথে বিপাকে মধ্যবিত্ত শ্রেনীও।
নওয়াপাড়া কাঁচা বাজারে হুহু করে বাড়ছে সজনে, পটল, বেগুন, ভেন্ডি, পুইশাক, করলা, টমেটো, কচুর লতি, কুমড়া, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন সবজির। এতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের কষ্ট আরও বেড়েছে।জিনিষপত্রের মূল্যে বৃদ্ধিতে চরম হতাশায় দিন কাটছে খেটে খাওয়া মানুষের।
নওয়াপাড়া মাছ ও কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সজনে কেজি প্রতি ১৪০, কুমড়া ৪০, কচুর লতি ৬০, টমেটো ৩০, মুলা ৬০, বেগুন ৮০, গোল বেগুন ৭০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ১০০, শসা-৭০, শিম ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, লাল শাক ৪০, কাঁচা মরিচ ১০০, কলার হালি (ছোট) ৫০, লেবুর হালি ৪০ ও লাউ ৫০ থেকে ৭০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, পটোল ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও গরুর মাংস হাড় ছাড়া ৬৪০ টাকা, বয়লার মুরগী ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, কক মুরগী ২৬০ টাকা, রুই মাছ (ছোট) ২৪০ থেকে ৩৫০টাকা কেজি, তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২৮০ টাকা, মৃগেল মাছ ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা, পেঁয়াজের কেজি ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি সর্বনিম্ন ৮শ/৯শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রসুন, আদা ও গরম মশালার দাম উর্দ্ধমুখী। প্রতিকেজি ছোট আকারের মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০৫-১১০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ১০০ টাকা ছিল। মাঝারি আকারের মসুর ডাল কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১০০-১০৫ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৯৫-১০০ টাকা। সেইসাথে বেড়েছে ছোলাসহ বিভিন্ন ডালের দাম।
চালের বাজারও উর্দ্ধমুখি। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৬ টাকা। ২৮ জাতের চাল প্রতি কেজি ৫৫ টাকা, মিনিকেট ৬২ ও বাসমতি চাল ৬৮ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে।
ভোজ্য তেল অনেক আগেই হয়েছে লাগাম ছাড়া। গত বছর এ সময় পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৫৮০ টাকা, যা এখন ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া খুচরা বাজারে প্রতি কেজি খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৪০-৪৫ টাকা। চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ টাকা।
সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছেন। বাজার করতে আসা বাঘুটিয়া থেকে ক্রেতা আমিনুর রহমান, ধোপাদী থেকে রহিম শেখ, চেঙ্গুটিয়া থেকে সুমন সরদার, ভাঙ্গাগেট থেকে বেনজির রহমানের সাথে কথা বললে তারা বলেন, যেভাবে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। যারা দিন আনে দিন খায় তারা কিভাবে চলবে? মানুষের কাজ নেই। আর কাজ না থাকলে আয় কিভাবে হবে? এখন দেখছি গরীব মানুষ না খেয়ে মরতে হবে। সরকার চাল ও তেলের দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে তার কোন প্রভাব নেই। বাজার এখন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। বাজারে ভোজ্য তেলের দাম অস্বাভাবিক, আমাদের মত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের পক্ষে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আয়ের সাথে ব্যয় সমন্বয় করতে পারছি না।
ধোপাদী ভ্যান চালাক সাইফুল ইসলাম সরদার বলেন, ‘দৈনিক ৪০০ টাকা আয় করলেও সংসার চালোনো কষ্ট হয়ে পড়েছে। চাল, ডাল, তেলসহ সব জিনিষের দাম ডাবল। আমরা সাধারণ মানুষ কি করে সংসার চালাবো? রোজার মাস হওয়ায় সব জিনিসের দাম আরও বেশি-বেশি। আমরা চলবো কেমনে?’
অটো বাইক চালক রশিদ হোসেন বলেন, রমজান মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্রব্য মূল্য কমে। তবে আমাদের দেশে তার উল্টো চিত্র। সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি।
কাপড় ব্যবসায়ী রাসেল উদ্দিন বলেন, মানুষের ভেতরে হাহাকার চলছে। খেতে পারে না, জামা কাপড় কিনবে কী দিয়ে। দিনের পর দিন দোকানে এক টাকাও বিক্রি হয় না। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই কীভাবে চলছি। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি। সে তুলনায় মানুষের রোজগার তো বাড়েনি। নিম্ন আয়ের মানুষ তাও হাত পাততে পারে। আমাদের পক্ষে তো তাও সম্ভব না।
তরকারি বিক্রেতা আনিচুর রহমানসহ কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা জানান, আড়ৎদার প্রতিনিয়ত তাদের চাপ দিচ্ছে টাকার জন্য। প্রতিদিনই দেনার বোঝা বাড়ছে।
নওয়াপাড়া কাঁচা বাজারের পাইকারী বিক্রেতা বিশ্বাস ভান্ডারের মাহাজন হালিম উদ্দিন বলেন, এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পাইকারী বাজার নওয়াপাড়া বাজার। সেখানে বাজার দরে ওঠানামাটা আমাদের এলাকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। গত ৩ মাসে বেশ কয়েকবার টানা বৃষ্টি হয়েছে। এ বৃষ্টির কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নতুন রোপন করা গাছে এখন ফসল হয়েছে। আস্তে আস্তে দাম কমবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নিবার্হী অফিসার মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বাজার মনিটরিং কমিটি করেছি। বাজার নিয়ন্ত্রণে সব রকম ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খুলনা গেজেট/ এস আই