পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি কোনো রাষ্ট্র হস্তেক্ষেপ করুক এমনটা চায় না সরকার। বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা পুরো দায়িত্ব দেশের সরকারের।
রোববার (১৭ এপ্রিল) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশই এ রিপোর্ট প্রত্যাখান করেছে। এ রিপোর্টে অনেক কিছু আছে যা আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে যায় না। আবার ঠিক একইভাবে যেসব সোর্স থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে সেগুলো দুর্বল। এসব তথ্য যারা অপারেট করেছেন বা করেন, আমরা নিকট অতীতে দেখেছি; তাদের একটা রাজনৈতিক এজেন্ডা থাকে। দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার পুরো দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের। এ বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশ কোনো ইন্টারভেনশান প্রত্যাশা করে না কারও কাছ থেকে।’
তিনি বলেন, আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ আয়ের দেশে নিয়ে যেতে চাই। আমরা আশা করি, এক্ষেত্রে সব রাষ্ট্র বন্ধু হিসেবে আমাদের সহযোগিতা করবে। তাদের কোনো সিদ্ধান্ত বা কর্মকাণ্ড আমাদের জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না।
বাংলাদেশের অগ্রগতির কোনো ছাপ এই রিপোর্টে নেই উল্লেখ করেন শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু করে ১৯৯১ এবং ৯৬ এই সময়টাতে। যাত্রার এই স্বল্প সময়ে বাংলাদেশ যতদূর এসেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করেছে এটার কোনো প্রশংসা এ রিপোর্টে নেই। বাংলাদেশ লেবার ইমপ্রুভমেন্টের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ স্ট্যান্ডার্ড হয়েছে বলে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূল্যায়ন করেছে। কিন্তু এই রিপোর্টে কোনো ছাপ নেই। আমরা যে এত পথ পাড়ি দিয়েছি এসেছি, এটার কোনো প্রশংসা নেই।’
২০২১ সালে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর গত মঙ্গলবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশ নিয়ে ৭৪ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
র্যাব প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অতীতে বিভিন্ন দেশের সুপারিশে র্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের প্রশিক্ষণে র্যাব সুসংগঠিত এবং শক্তিশালী হয়েছে। আমরা খুবই অল্প সময়ে, অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিতে জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি এবং মোটামুটি বলা যায় জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন করতে পেরেছি।’
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রগুলো যেকোনো সময় এ ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে। কারণ আমরা যে অঞ্চলে বসবাস করি এ অঞ্চলের ইতিহাস ভালো নয়। বর্তমানেও অনেক দেশে ভালো নয় এবং নিকট ভবিষ্যতেও ভালো মনে হচ্ছে না। সুতরাং সত্যিকার অর্থে যারা বাংলাদেশকে দেখতে চান, একটি শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র যেখানে মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত হবে; যেখানে সবার মতামত দেওয়ার মতো একটা পরিবেশ অব্যাহতভাবে থাকবে, এ কাজগুলো করতে গেলে আমাদের র্যাবের মতো জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহযোগিতা করতে হবে।’
বাংলাদেশের কোনো ভালো প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা সরকার ভালো চোখে দেখবে না বলেও মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) আগে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য, প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য আগে পয়সা দিত। এখন কোনো কারণে দিচ্ছে না। যে সমস্যা হয়েছে বা ব্যত্যয় ঘটেছে সেগুলো সুরাহার পথ খুঁজছি আমরা।’
মার্কিন রিপোর্টে সমকামিতা প্রসঙ্গে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘তারা রিপোর্টে যেটা বলতে চাইছে এটা বাংলাদেশের মানুষ কখনও মেনে নেবে না। সামাজিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।’