ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে অবৈধ বিদেশিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে সতর্কতা জারির পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, কোনো বিদেশিকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না।
গতকাল রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অবৈধ বিদেশি নিয়ে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। এতে অবৈধভাবে যারা বাংলাদেশে রয়েছেন, তাদের দ্রুত বৈধতার কাগজপত্র সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। না হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে সিনিয়র স্বরাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের পাশাপাশি স্বাক্ষর রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) খোদা বখস চৌধুরীর।
এতে বলা হয়, যেসব বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বা কর্মরত আছেন, তাদের অবিলম্বে বাংলাদেশে অবস্থানের বা কর্মরত থাকার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বৈধতা অর্জনের জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ২৮ মে দেশে অবস্থানরত বৈধ ও অবৈধ বিদেশি কর্মীদের প্রকৃত সংখ্যা অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিরূপণ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এসব বিদেশি কর্মী কীভাবে, কোন চ্যানেলের মাধ্যমে তাদের অর্থ দেশের বাইরে পাঠান, তাও অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘অবৈধ বিদেশি খেদাও আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে এর সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেন দাবি করেন, বাংলাদেশে ১০ লক্ষাধিক অবৈধ বিদেশি শ্রমিক বসবাস করছেন। এ ছাড়া ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গত ৫ সেপ্টেম্বর ফেরিভায়েড ফেসবুক পোস্টে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক ২৬ লাখ ভারতীয় নাগরিক চাকরি করেন– এমন দাবি করে তাদের চাকরিচ্যুত করার দাবি জানায় আওয়ামী লীগ। এতে বলা হয়, ‘মাননীয় উপদেষ্টা ২৬ লাখ ভারতীয় নাগরিক যারা বাংলাদেশে চাকরি করে, তাদের তালিকা করে, চাকরি থেকে বিদায় করে, দেশের তরুণ বেকারদের সুযোগ তৈরি করতে হবে!’ ওই পোস্টে কমেন্টস বক্সে বলা হয়, ‘এ তথ্য উপদেষ্টাই দিয়েছিলেন। সুতরাং এ কাজ তারই সম্পাদন করতে হবে।’
এদিকে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বড়দিন ও থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেন উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম। কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘কোনো বিদেশি নাগরিককে অবৈধভাবে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না।’
হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হলো– প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি হঠাৎ কোনো সিদ্ধান্ত নয়। কতজন বিদেশি আছেন, কোন কোন দেশের বিদেশিরা আছেন, সেই তালিকা পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তারা কতদিন পর্যন্ত এ দেশে থাকতে পারবেন।’
ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেও সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সীমান্তে আমরা পুরো সতর্ক রয়েছি। শুধু সিলেট নয়, বেনাপোলসহ অন্যান্য স্থানেও বিজিবি সতর্ক রয়েছে। সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইটে তরুণদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। আগে থেকে বোঝালে তারা সাবধান হতে পারবে। ইতোমধ্যে আমরা ফানুস ওড়ানো ও আতশবাজি পোড়াতে নিষেধ করেছি। ওই দিন নরমাল বারগুলো বন্ধ রাখা হবে।
খুলনা গেজেট/এইচ