অন্তবর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্তির পর আজই প্রথম মন্ত্রণালয়ে এসেছেন আসিফ মাহমুদ সজীব। দেশের রাজনীতির নবীন এই মুখের সামনে দায়িত্বটা বেশ বড়। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিগত দেড়দশক ধরে ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর শক্তিশালী অবস্থান। শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর সেখানে এখন আছে পরিবর্তনের আভাস।
আসিফ মাহমুদের দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনেই আলোচনায় ছিল বিসিবি-বাফুফেসহ ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো কীভাবে পরিবর্তন আসবে। যদিও খুব সংক্ষেপে জানালেন এসব ব্যাপারে আরও খানিক আলোচনা দরকার। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের জন্য আইসিসির সঙ্গেই আগে আলাপ করতে চান নতুন ক্রীড়া উপদেষ্টা।
পতনের পরই জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত হয়েছে। আজ আসিফের কথায় এসেছে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের প্রসঙ্গও, ‘বিসিবি সভাপতি অনুপস্থিত আছেন। অবশ্যই একটা ফেডারেশন চালাতে হলে তার সবগুলো অর্গান ঠিকভাবে কাজ করতে হয়। সভাপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে যিনি আছেন, তিনি অনুপস্থিত।’
বিসিবি কীভাবে চলবে জানালেন আসিফ মাহমুদ
ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ অবশ্য সভাপতি পরিবর্তনের জন্য আইসিসির কাছেই যেতে চান, ‘আমরা বিসিবির যারা পরিচালক আছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আইসিসির আইন মেনে যেটা করার, সেটাই করবেন। পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য কাউকে নিয়োগ দেওয়া যায় কি না সেই বিষয়টিও দেখতে বলেছি।’
অবশ্য বিসিবির পরিচালকরাও খানিকটা নীরবতার পর কথা বলতে শুরু করেছেন। ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফোতে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছেন দুই পরিচালক। তাদেরই একজন জানালেন, খুব শীঘ্রই সামনে আসবেন বিসিবির বেশকিছু পরিচালক, ‘বিসিবি একটি নির্বাচনের ভিত্তিতে পরিচালিত সংস্থা। কিন্তু যদি সরকারের পক্ষ থেকে বিসিবিতে পরিবর্তনের কোনো নির্দেশ এসে থাকে, আমাদের সেটা মেনে নিতে হবে। আমার মনে হয় না, খুব বেশি পরিচালক প্রকাশ্যে আসবেন। যদি বৈঠক ডাকা হয় তবে দেখা যাবে পাঁচ থেকে আটজন উপস্থিত হচ্ছেন।’
জানা গেছে, বোর্ডের বিষয়ে নির্দেশনা পেতে নতুন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে বিসিবির সাত পরিচালক গিয়েছেন। তারা হলেন মাহবুব আনাম, কাজি এনাম, জালাল ইউনুস, সাজ্জাদুল আলম ববি, ইফতিখার রহমান মিঠু, খালেদ মাহমুদ সুজন এবং আকরাম খান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক বোর্ড পরিচালক অবশ্য জোর দিয়েছেন অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দিকে। ক্রিকইনফোকে ওই পরিচালক জানান, ‘বোর্ড এখনো টিকে আছে। আশা করি আমরা সরকারের কাছ থেকে একটা গাইডলাইন পাবো। যখন বোর্ড নতুন ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপ করবে। আমরা নিজেদের বিষয়ে চিন্তিত নই। কিন্তু আমাদের সামনে কিছু ইভেন্ট আছে। যেমন বিশ্বকাপ।’
এমন পরিস্থিতিতে আইসিসির বিধি অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকার বিসিবি পরিচালনার জন্য একটি অ্যাড-হক কমিটি নিয়োগ করতে পারে। ২০০৬ সালে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এমন অ্যাড-হক কমিটির অধীনেই পরিচালিত হয়েছিল বিসিবি। আইসিসি এমন একটি সংস্থাকে বৈধতা দেবে, যতক্ষণ না সরাসরি সরকারি হস্তক্ষেপ না হয়। বিশেষ করে যদি পরবর্তীতে নির্বাচন আয়োজন হবে, এমন শর্তে আইসিসি এই ইস্যুতে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেবে না।
তবে, সরকারের হস্তক্ষেপের আশঙ্কা থাকলে, আইসিসি বিষয়টি তদন্ত করবে এবং সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সম্প্রতি আইসিসি শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটকে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি হস্তক্ষেপের অজুহাতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল।
এদিকে বোর্ডের গঠনতন্ত্রের ১৫(২) এর ধারা অনুযায়ী, শারীরিক অসুস্থতা, বিদেশ গমন বা যথাযথ কারণ ছাড়া পরিচালনা পরিষদের পরপর ৩ সভায় অনুপস্থিত থাকলে পরিচালকের সদস্যপদ বাতিল হবে। নাজমুল হাসান পাপন ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির পাশাপাশি একজন পরিচালকও বটে। পাপনের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তের জন্য তাই হয়ত এমন নিয়মের দিকেই নজর থাকবে।
খুলনা গেজেট/এমএম