খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ পৌষ, ১৪৩১ | ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ময়মনসিংহে ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে একই পরিবারের ৪ জন নিহত
  নিখোঁজের ৪২ ঘণ্টা পর কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদী থেকে দুই পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার

অবশেষে গঠন হচ্ছে ব্যাংক কমিশন

গেজেট ডেস্ক

দীর্ঘদিন ধরেই ব্যাংক কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন অর্থনীতিবিদরা। অনেকবার ব্যাংক কমিশন গঠনের উদ্যোগের কথা জোরেশোরে শোনা গেলেও মনোযোগ ছিল না সরকারের। তবে এবার তা আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। অবশেষে ব্যাংক কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে গতকাল রবিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। সভায় ব্যাংকিং খাতের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় ব্যাংকিং খাতে টেকসই সংস্কারের জন্য একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করে দ্রুত কার্যক্রম গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত হয়।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, সভায় কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। চাহিদা ও জোগানের যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের বিদ্যমান মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক অবস্থায় ধরে রাখা এবং একই সঙ্গে সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানোর বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়।

এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে তারল্য বাড়ানোর উদ্যোগে আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যান্ড ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে দ্রুতই আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে তারল্য ফিরে আসার বিষয়ে আশাবাদও ব্যক্ত করা হয়েছে। আর্থিক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি এবং সংস্কার বিষয়ে একটি রূপকল্প তৈরির সিদ্ধান্ত হয় সভায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার ১০০ দিনের মধ্যে এটি প্রকাশ করার কথা রয়েছে।

বেশ কয়েক বছর ধরেই ব্যাংক খাতের বিশ্লেষকরা বলে আসছেন, দেশের ব্যাংকগুলোয় দীর্ঘদিন জমে থাকা সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে। আর্থিক খাতের বিদ্যমান অস্থিতিশীল অবস্থা স্বল্প মেয়াদে সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে গ্রাহকদের আস্থা ফিরে আসে। একই সঙ্গে স্থায়ীভাবে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ব্যাংক খাতের সংস্কার করা প্রয়োজন।

আর ব্যাংক খাতের এ সংস্কারের জন্য অর্থনীতিবিদরা দীর্ঘদিন ধরেই ব্যাংকিং কমিশন গঠনের পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দীর্ঘ ১৫ বছরে এ বিষয়ে কেউ মনোযোগী হয়নি। এ সময়ে ব্যাংক খাত সংস্কারের পরিবর্তে উল্টো ‘ব্যাংক লুটের’ মহড়া দেখা গেছে। ফলে দেশের ব্যাংক খাত আজ মানুষের আস্থাহীনতায় পরিণত হয়েছে। এতে দেশের পুরো অর্থনীতি খাদের কিনারায় দাঁড়িয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংক খাতে চলমান অস্থিরতা এক দিনে তৈরি হয়নি। অনেক দিন ধরেই এই সমস্যা জিইয়ে রাখা হয়েছিল। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের সমস্যা এবং ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোতে বড় সমস্যাগুলো অনেক বছর ধরেই আছে। এর সমাধানে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে এখন পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।

এর আগে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে, ব্যাংক খাতের কার্যক্রম মূল্যায়নে একটি কমিশন গঠন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তার যুক্তি ছিল, ব্যাংক খাতের উল্লেখযোগ্য প্রসার হয়েছে। এখন প্রয়োজন এই খাতের সঞ্চয়, সুষ্ঠু নীতিমালা ও প্রবৃদ্ধির ধারা নির্ধারণ। তিনি বলেছিলেন, ‘ব্যাংক খাতের প্রচলিত কার্যক্রম এবং এই খাতের সার্বিক অবস্থান মূল্যায়ন ও বিবেচনা করার জন্য একটি কমিশন গঠনের চিন্তাভাবনা আমাদের রয়েছে।’

২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতিটি বাজেট বক্তব্যেই সাবেক অর্থমন্ত্রী ব্যাংক কমিশন গঠনের পক্ষে কথা বলে গেছেন। কিন্তু সেটা আর বাস্তবে রূপ নেয়নি। তারপরের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও ঘোষণা দিয়েছিলেন, ব্যাংক খাত নিয়ে তিনি একটি টাস্কফোর্স গঠন করতে চান। মাঝখানে কমিশনের পরিবর্তে কমিটি গঠনের মাধ্যমে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার কথা শোনা যায়।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসেও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীও ব্যাংক কমিশন গঠনের কথা জানিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাত সংস্কার কমিশন, রাজস্ব সংস্কার কমিশন ও সরকারি ব্যয় সংস্কার কমিশন গঠনের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।

১৯৯৬ সালে ব্যাংক খাত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিল তৎকালীন সরকার। সাবেক সচিব কাজী ফজলুর রহমানকে চেয়ারম্যান করে ওই সময় গঠন করা হয়েছিল ছয় সদস্যের ব্যাংক সংস্কার কমিটি। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ছিলেন ওই কমিটির অন্যতম সদস্য। পরে কাজী ফজলুর রহমানকে অব্যাহতি দিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে করা হয় কমিটির চেয়ারম্যান। কমিটি ৩৭টি সভা করেছিল এবং ১১টি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন সরকারের বিবেচনার জন্য পেশ করেছিল।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!