অবকাঠামো বদলে যাওয়ায় শিক্ষায় আলো ছড়াচ্ছে সাতক্ষীরার ১০৮টি প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে কলেজ ও হাইস্কুল ৮৪টি এবং মাদ্রাসা ২৪টি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণের ফলে শিক্ষা বাতায়নে যুক্ত হয়েছে নতুন পালক। শহরের মাতো গ্রামের শিক্ষার্থীরাও এখন পাচ্ছে সমান সুযোগ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে সরকারের নানামুখী উদ্যোগের সুফল পাচ্ছে এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ ।
সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫৯৫টি। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে ৩১১টি, মাদ্রাসা ২১৪টি, স্কুল এন্ড কলেজ ১২টি এবং কলেজ ৫৮টি।
জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত জেলার চারটি সংসদীয় আসনে ঊর্ধ্বমুখী স¤প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাডেমি ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলমান রয়েছে আরও দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ৭০ভাগ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ৪০টি এবং ৬৫ভাগ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। এছাড়া একই প্রকল্পের আওতায় জেলার চারটি সংসদীয় আসনের প্রত্যেকটিতে ৬টি করে মোট ২৪টি মাদরাসায় চারতলা ভিত বিশিষ্ট নতুন একাডেমিক ভবণের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া আরও ৪০টি প্রতিষ্ঠানে চারতলা ভিত বিশিষ্ট নতুন একতলা ভবণের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী প্রোগ্রামার মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, জেলায় ১১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। আইসিটি লার্নিং সেন্টার রয়েছে ৮টি। প্রত্যেকটি ল্যাবে ১৭টি কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ রয়েছে। এছাড়া জেলায় একটি শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ও ভাষা ল্যাব রয়েছে। চারটি সংসদীয় আসনে শেখ রাসেল স্কুল অব ফিউচার প্রকল্পের আওতায় চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হয়েছে স্মার্ট মনিটরযুক্ত বোর্ড। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে ৬টি কক্ষে স্মার্ট বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়েছে আরও চারটি করে কম্পিউটার। ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে ওয়াইফাই। শেখ রাসেল স্কুল অব ফিউচার প্রকল্পের আওতায় ঝরেপড়া রোধে রাখা হয়েছে ডিজিটাল হাজিরার ব্যবস্থা। প্রত্যেকটি শ্রেণিতে স্থাপন করা হয়েছে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন। শিক্ষকদেরর জন্যও রাখা হয়েছে একই ব্যবস্থা। এছাড়া শেখ রাসেল স্কুল অব ফিউচার প্রকল্পের আওতায় সকল শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীকে স্মার্ট আইডি কার্ড দেওয়া হয়েছে। ৬৫ ইঞ্চি স্মার্ট মনিটরে সম্পূর্ণ ডিজিটাল সিস্টেমে অত্যন্ত মনোরম ও চিত্তাকর্ষক পরিবেশে পরিচালিত হচ্ছে শ্রেণি কার্যক্রম।
অন্যদিকে শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাবে শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণের সুযোগ। এছাড়া শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ও ভাষা ল্যাবে ৮টি বিদেশি ভাষা শেখার সুযোগ রয়েছে। যদিও প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের আইসিটি বিভাগের সহকারী কমিশনার মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, জেলায় ১২০টি কম্পিউটার ল্যাব চালু রয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর-ব্রহ্মরাজপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ এমাদুল ইসলাম বলেন, ১৯৯৫ সালে তিন ইউনিয়নর মিলনস্থল ব্রহ্মরাজপুর বাজারের দক্ষিণ পাশে মনোরম পরিবেশে নারী শিক্ষার বিকাশে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। খড় আর টিনের চালের ছাউনি ছিল। এখন বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকার এখানে চারতলা ভবন একটি এবং চারতলা ভিত বিশিষ্ট একটি নতুন একতলা ভবন নির্মাণ করেছে। এখানে স্থাপিত হয়েছে শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ও ভাষা ল্যাব। যা জেলায় একটি। এছাড়া এখানে শেখ রাসেল স্কুল অব ফিউচার প্রকল্প স্থাপন করা হয়েছে। সরকারের এসব নানামুখী উদ্যোগের সুফল পাচ্ছে এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ । তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে যুক্ত হয়েছে নতুনমাত্রা।
সাতক্ষীরা জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটালাইজড করে শিক্ষার গুনগত মানোন্নয়নে কাজ করবেন এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করে জেলা শিক্ষা অফিসার অজিত কুমার সরকার বলেন, প্রত্যেকটি স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। স্কুলে শিক্ষার্থীদের শতভাগ হাজিরা নিশ্চিত করতে প্রত্যেকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আনন্দময় ও চিত্তাকর্ষক পাঠদান নিশ্চিত করতে ব্যবহারিক ক্লাস ও ক্লাসে শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারে জোর দেয়া হচ্ছে। ঝরেপড়া রোধে স্কুলে স্কুলে গিয়ে নিয়মিত মনিটরিং করছি। অবকাঠামো বদলে যাওয়ায় জেলার শতাধিক প্রতিষ্ঠানে বিরাজ করছে আলো ঝলমল পরিবেশ।
সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী এমএমএ জায়েদ বিন গফুর বলেন, যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খড় কিংবা টিনের ছাউনি ছিলো সেখানে আজ চারতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। অবকাঠামো বদলে যাওয়ায় শিক্ষায় যুক্ত হয়েছে নতুন পালক। প্রত্যেকটি ভবন নির্মাণে সরকারের ব্যয় হয়েছে দুই থেকে কোটি টাকা। ভবনগুলো নির্মাণের ফলে শিক্ষা বাতায়নে যুক্ত হয়েছে নতুন পালক। শহরের মাতো গ্রামের শিক্ষার্থীরাও পাচ্ছে সমান সুযোগ।