বর্তমান করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন একাডেমিক কার্যক্রম চালু রাখতে কর্তৃপক্ষের নানামুখী উদ্যোগের সাথে শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে বেশ কয়েকটি বিষয় যুক্ত হচ্ছে। অনলাইনে যাতে সকল শিক্ষার্থী ক্লাসে যুক্ত হতে পারে সেজন্য অস্বচ্ছল শিক্ষার্থী যাদের প্রয়োজনীয় ডিভাইস এবং ইন্টারনেট প্যাকেজ (এনড্রয়েড মোবাইল সেটসহ) ক্রয়ে যথেষ্ট সামর্থ নেই তাদেরকে তা ক্রয়ে বিনাসুদে শিক্ষাঋণ দেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯টি ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) প্রত্যেকটির ১৪জন করে মোট ৪০৬জন শিক্ষার্থী পাঁচ হাজার টাকা করে পাবেন। এটা সম্পূর্ণ বিনা সুদে তাদের শিক্ষা মেয়াদে শিক্ষাঋণ দেওয়া হবে।
শিক্ষা মেয়াদের মধ্যে তারা তা পরিশোধ করার সুযোগ পাবে। গতকাল বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক প্রধানদের সাথে এক ভিডিও কনফারেন্স শেষে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের সাথে এক ভিডিও কনফারেন্সে এ পদক্ষেপের কথা জানান উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান। শিক্ষার্থীদের এ সুবিধা প্রদানের বাইরে স্ব স্ব ডিসিপ্লিন থেকে শিক্ষকবৃন্দ এবং এলামনাইদের সহযোগিতায় অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শিক্ষার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তিনি বর্তমান করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা যাতে ঘরে বসেই চিকিৎসা সুবিধা পেতে পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার থেকে ২৪ঘণ্টা টেলিমেডিসিন সুবিধা আজ ২৪ জুলাই থেকে কার্যকর হবে বলেও তিনি জানান।
ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষক যারা অনলাইনে ক্লাস গ্রহণ করবেন তাদের সুবিধার জন্য যাদের ল্যাপটপ নেই এমন শিক্ষকদেরকে বিনা সুদে তা ক্রয়ে ঋণ প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং ইতোমধ্যে এ প্রক্রিয়ায় ঋণ বিতরণ শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ওই শিক্ষাঋণ ডিসিপ্লিন থেকে তালিকা পাওয়ার পর ঈদের পরপরই চালু করা যাবে বলে উপাচার্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এছাড়া অনলাইনে থিসিস জমাদান, ডিফেন্স গ্রহণ এবং তা মূল্যায়ণে বোর্ড অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজ এবং একাডেমিক কাউন্সিলের যুগান্তকারী সুপারিশ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২০৬তম সভায় অনুমোদনের কথাও জানান উপাচার্য । একই সিন্ডিকেটে কোভিড-১৯ পরীক্ষাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংশ্লিষ্ট বহুমুখী গবেষণা সুবিধার লক্ষ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সতন্ত্র অত্যাধুনিক আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপনের প্রস্তাবও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। এসব যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাংবাদিকরা উপাচার্য এবং সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিলসহ শিক্ষকদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান।
উল্লেখ্য, করোনা মহামারী পরিস্থিতির মধ্যে গত তিন মাসে একাডেমিক প্রধানদের সাথে কয়েক দফা ভিডিও কনফরেন্সে মিলিত হন উপাচার্য। এসব সভায় অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রম সচল রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয় ধারণা পেতে জরিপও চালানো হয়।
এতে দেখা যায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শতাংশের কিছু শিক্ষার্থীর এনড্রয়েড ফোন সেট নেই এবং ছয় শতাংশের কিছু বেশি শিক্ষার্থীর বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সুবিধা নেই, অনেকের থাকলেও তা দুর্বল ও নিরবচ্ছিন্ন নয়। শিক্ষার্থীদের নিরবচ্ছিন্ন ও কম মূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও নানাভাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে বলেও উপাচার্য জানান। । সূত্র : প্রেস বিজ্ঞপ্তি।