বাগেরহাটে ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে এক বছর ধরে বাক্সবন্ধী পড়ে আছে ৩৮ লাখ ২৮ হাজার ১২০ টাকা মূল্যের অটোমেটিক কেমিস্ট্রি এ্যানালাইজার মেশিন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েও, রোগ নির্নয়ে বায়োক্যামিক্যাল পরীক্ষার আধুনিক এই যন্ত্র চালু করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।রোগীদের অনেক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা বেসরকারি ডায়গনস্টিক সেন্টার থেকে করাতে হচ্ছে। যার ফলে ব্যায় ও ভোগান্তি দুটো বৃদ্ধি পাচ্ছে রোগীদের। দ্রুত সময়ের মধ্যে মেশিনটি সচল করার দাবি সেবা প্রত্যাশীদের।
হাসপাতাল সূত্রে জানাযায়, ২০২৩ সালের ৭ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর থেকে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে এই মেশিন প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ সায়েন্স হাউজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান মেশিনটি সরবরাহ করে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত মেশিনটি হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে বাক্সবন্ধী রয়েছে। এক বছরেরও বেশি সময়ে মেশিনটি চালু করা যায়নি।
অত্যাধুনিক এই মেশিনে সিরাম ইলেক্ট্রোলাইট, টিএসএইচ, থাইরয়েড, হরমোন, ইমিউনোক্রোমাটোগ্রাফিসহ বায়োকেমিক্যাল বিষয়ক অর্ধশতাধিক পরীক্ষা করা যায়। ঘন্টায় ৩৬০টি নমুনার ফলাফল দিতে সক্ষম অত্যাধুনিক এই মেশিনটি। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এই মেশিনটি চালু করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে চিঠি ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সায়েন্স হাউজ মেশিনের সাথে মৌখিক যোগাযোগ করলেও সাড়া পায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যার ফলে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন এ মেশিনটি চালু করতে পারছে না প্যাথলজি বিভাগ। এতে মেশিনটি যেমন পড়ে থেকে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে তেমনি সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন বাগেরহাটবাসী।
বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগে প্রতিমাসে রোগ নির্ণয়ের জন্য ৬ হাজারের বেশি রোগীর পরীক্ষা করা হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কচুয়া উপজেলার চন্দ্রপাড়া গ্রামের রহিমা বেগম বলেন, পা, মেরুদন্ড ও মাজায় ব্যাথা নিয়ে আসছিলাম। চিকিৎসক অনেকগুলো পরীক্ষা দিয়েছে। কিছু এখানে করেছি। বাকি পরীক্ষা বাইরে থেকে করাতে প্রায় ২ হাজার টাকা লেগেছে।
আব্দুর রহমান নামের এক ব্যক্তি বলেন, হাসপাতালে অনেক কিছু আছে কিন্তু রোগীদের সেবা নেই। সব পরীক্ষা যদি হাসপাতালে হত, তাইলে বেসরকারি ডায়গনস্টিক সেন্টার ও চিকিৎসকদের পরীক্ষা বানিজ্য বন্ধ হয়ে যেত।
নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে প্যাথলজি বিভাগের ল্যাব এ্যাটেন্ডেন্ড মানিক বলেন, প্রতিদিন অনেক রোগীকে সেবা দেই। কিন্তু সিরাম ইলেক্ট্রোলাইট, টিএসএইচ, থাইরয়েডসহ বেশকিছু প্রয়োজনীয় পরীক্ষা আমাদের এখানে হয় না। এর জন্য রোগীদের বাইরে যেতে হয়।
বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ), বাগেরহাট জেলা শাখার সভাপতি ডা. অরুণ চন্দ্র মন্ডল বলেন, হাসপাতালের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অন্যতম অনুসঙ্গরোগ নির্নয়ের সরঞ্জাম। সেখানে এত দামি একটি মেশিন এক বছর ধরে চালু না হওয়াটা আমাদের জন্য দুঃসংবাদ।
বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সাদিয়া তাসনিম মুনমুন বলেন, বড় হাসপাতাল হওয়ায় অনেক রোগীকে সেবা দিতে হয়। জেলার সব জায়গা থেকে রোগী আসেন এখানে। বায়োকেমিস্ট্রির অটোএ্যানালাইজার মেশিন থাকলেও, চালু করতে না পারায় সুবিধা থেকে বাগেরহাটবাসী বঞ্চিত হচ্ছেন।
বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার বলেন, মেশিনটি চালু করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সায়েন্স হাউজ-র সাথেও যোগাযোগ করা হয়েছে। আমরা যত দ্রুত সম্ভব চালু করার চেষ্টা করব। এটা চালু করলে হাসপাতালের প্যাথলজিক্যাল সেবা আরও সহজ হবে বলে জানান তিনি।
খুলনা গেজেট/কেডি