সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটের কারনে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ৭ জন রোগীর মৃত্যুর ঘটনার বিভাগীয় তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। খুলনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডাঃ রাশেদা সুলতানা কর্তৃক গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি রোববার (৪ জুলাই) সামেক হাসপাতালে সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে ঘটনার তদন্ত করেন।
টিমের প্রধান খুলনা মেডিকেল সাবডিপোর সহকারি পরিচালক রফিকুল ইসলাম গাজী ও সদস্য মোংলা পোর্টের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শেখ মোশারফ হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তারা এসময় হাসপাতালের অক্সিজেনের সংকট বিষয়ে খোঁজ খবর নেন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেন।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি আরও সাত দিনের সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। তদন্ত টিমের প্রধান সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ কাজী আরিফ আহমেদ জানান, সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ফ্লো কমে যাওয়ায় কয়েকজন রোগী মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু শুক্রবার ও শনিবার থাকায় এবং মৃতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলাসহ আনুসঙ্গিক কারনে এত স্বল্প সময়ে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করা সম্ভব নয়। যেকারণে আরও সাত দিন সময় চাওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গতঃ গত ৩০ জুন বুধবার সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে রাত ৮টার মধ্যে অক্সিজেন সংকটের কারণে আইসিইউ, সিসিইউ এবং সাধারণ করোনা ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন ৭ জন রোগী মারা যান। মৃতদের প্রথম ৪জন ছিলেন করোনা পজিটিভ। দুপুরের পর থেকে সামেক হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট দেখা দিলে ডাক্তাররা কর্তৃপক্ষকে তা অবহিত করেন। কিন্তু যথা সময়ে সাতক্ষীরার সেন্ট্রাল অক্সিজেন পন্ড পূরণ না করায় অক্সিজেনের প্রেসার কমতে থাকায়। একপর্যায়ে এর লেভেল কমে যাওয়ায় সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে রাত ৮টার পর্যন্ত সেখানে চিকিৎসাধীন রোগীরা পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেয়ে সংকটের মধ্যে পড়ে। এসময় যে যার মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার বাইরে থেকে নিয়ে এসে রোগীদের বাঁচানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এসময় রাত ৮টার মধ্যে ৭জন রোগী মারা যান। এর আগে ওইদিনই করোনা উপসর্গে আরও ৮জনসহ মোট ১৪ জনের মৃত্যু ঘটে।
এঘটনায় সামেক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ কুদরত ই খুদা হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডাঃ কাজী আরিফ আহমেদকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তিন কার্যদিবসের মধ্যে এই কমিটির প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলা হয়।
একইদিন খুলনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডাঃ রাশেদা সুলতানা খুলনা মেডিকেল সাবডিপোর সহকারী পরিচালক ডাঃ রফিকুল ইসলাম গাজীকে প্রধান করে দুই সদস্যের আরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
এবিষয়ে টিমের প্রধান সহকারি পরিচালক রফিকুল ইসলাম গাজী জানান, তারা তদন্তের প্রথম কার্যদিবস শেষ করেছেন। সাতক্ষীরা মেডিকেলের তত্বাবধায়ক, অধ্যক্ষ, ওই দিনের দায়িত্বরত ২২জন কর্মকর্তা, কর্মচারির লিখিত বক্তব্য নেয়া হয়েছে। সার্বিক ঘটনা তদন্তের পর সংল্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করবেন । এরপর প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে বলে জানান তিনি।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেলের তত্বাবধায়ক ডাঃ কুদরত-ই-খোদা জানান, বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার গঠিত তদন্ত কমিটি রোববার তদন্তে এসেছিলেন। তাদের তদন্ত কাজে সার্বিক সহায়তা করা হয়েছে। এছাড়া সাতক্ষীরা মেডিকেলের নিজস্ব তদন্ত কমিটি সাত দিনের সময় চেয়েছে। তাদেরও সময় বর্ধিত করা হবে।
সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়াত বলেন, খুলনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডাঃ রাশেদা সুলতানা কর্তৃক গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি রোববার (৪ জুলাই) থেকে সরেজমিনে সামেক হাসপাতালে এসে তদন্ত করেছেন। তারা হাপাতালে সেদিন দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেন ও লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করেছেন। তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে এই মৃত্যুর কারণ বেরিয়ে আসবে বলে আমরা আশা করছি।
খুলনা গেজেট/ টি আই