জাতীয় নির্বাচনে দলের প্রার্থিতা নিয়ে নেতাকর্মীদের অস্থিরতা নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। বিরোধপূর্ণ আসনগুলোতে আবারও জরিপ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু উন্মুক্ত আসনে প্রার্থী নির্ধারণ এবং জামায়াতের শক্ত প্রার্থীর বিপরীতে দুর্বল প্রার্থী পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিএনপি নেতারা জানান, মাঠ পর্যায়ে একাধিক জরিপ, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে বিএনপি। এরপর থেকে অনেক আসনে বিক্ষোভ শুরু করে অন্য নেতাদের কর্মী-সমর্থকরা। কোথাও কোথাও সংঘাত-সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দিলেও মাঠ পর্যায়ে এর প্রতিফলন ঘটেনি।
এখন জরিপ প্রক্রিয়ায় বিএনপি নিজেদের বঞ্চিত ভাবা নেতাদের ক্ষোভ প্রশমনে উদ্যোগ নিয়েছে। কোনো কোনো আসনের মনোনয়নবঞ্চিতদের ঢাকায় ডেকে এনে কথাও বলা হয়েছে। অনেকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হয়েছে। ওই সব নেতা তাদের আসনে নিরপেক্ষভাবে জনপ্রিয়তা যাচাই করে প্রার্থিতা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেছেন।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, আসনভিত্তিক কোন্দলের সঠিক কারণ, প্রার্থীদের দুর্বলতা, মনোনয়নবঞ্চিত নেতার অবস্থান পুনর্মূল্যায়নে কাজ করছে দলের একটি টিম। দলীয় প্রধানের একজন উপদেষ্টা এবং একজন শিক্ষক প্রতিনিধিকে দিয়ে মাঠ জরিপ করানো হচ্ছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রার্থী তালিকা পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, আগেও মাঠ জরিপের নামে অনেক আসনে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। জেলা ও বিভাগীয় নেতারা তাদের পছন্দমতো নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছেন। এমনকি প্রার্থী তালিকা ঘোষণার আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রত্যেক বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বৈঠক আয়োজনেও পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ রয়েছে। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের অপছন্দ হলে তাঁকে ওই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। জরিপ কাজেও তারা প্রভাব বিস্তার করেছেন। এ কারণে অনেক আসনে ত্যাগী, যোগ্যরা বাদ পড়েছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলের সূত্রগুলো জানায়, খুলনার ৬টি আসনের মধ্যে ৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন গেছে। নেতারাও আবেদনগুলো গুরুত্বসহ দেখছেন। এর মধ্যে উন্মুক্ত থাকা খুলনা-১ আসনে বিএনপির কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে কপাল খুলতে পারে বিএনপি নেতা আমির এজাজ খান অথবা জিয়াউল হাসান পাপুলের।
খুলনা-২ আসনের বিএনপি প্রার্থীর প্রতিপক্ষ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন। বিষয়টি সুরাহার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলকে। খুলনা-৫ আসনেও একই আবেদন জমা পড়ে। তবে আসনটিতে প্রার্থী পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই বলে কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানিয়েছে বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম। খুলনা-৬ আসনে জামায়াতের শক্ত প্রার্থীর বিপরীতে বিএনপির অন্য এলাকার দুর্বল প্রার্থী দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ জমা পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় একটি টিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘দল আগেই বলেছে, এটা চূড়ান্ত তালিকা নয়, সম্ভাব্য তালিকা। কোনো এলাকায় পরিবর্তন দরকার মনে করলে, অবশ্যই তা করা হবে। সবকিছু বিশ্লেষণ করেই তালিকা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচন অনেক কঠিন, প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল করার সুযোগ নেই। কেন্দ্রীয় নেতারা সবকিছু মনিটরিং করছেন। দলের জন্য যেটা ভালো, কল্যাণকর সেটাই করা হবে।
খুলনা গেজেট/এনএম

