গণভোট ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আগামী ১০ নভেম্বর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছে জামায়াত ইসলামীসহ ৮টি দল। পরের দিন ঢাকায় মহাসমাবেশ করে চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে দলগুলোর নেতারা।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, দাবি না মানলে ১১ নভেম্বর ঢাকার চিত্র ভিন্ন হবে। জামায়াত নেতার এই বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিএনপিকে খাটো করে দেখলে ভুল করা হবে। সবমিলিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ভেতরে ভেতরে সমঝোতার চেষ্টাও চলছে বলে জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। এরই মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফোন করে আনুষ্ঠানিক আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। একই দিনে জামায়াতে ইসলামীর সাথে আলোচনায় বসতে সময় চেয়েছে এনসিপি, এবি পার্টিসহ ৯ দল। সব দলের বৈঠকে আলোচনা করে জাতীয় সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশে পরিবর্তনের যে হাওয়া বইছিল, সম্প্রতি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চূড়ান্ত হওয়া ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তৈরি হওয়া মতানৈক্য সেই পরিবেশকে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
বিএনপি বলছে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির এখতিয়ার সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। একইসঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটকে অযৌক্তিক বলছে দলটি। তাই জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট কোনোভাবেই মেনে নেবে না তারা।
অন্যদিকে জামায়াত বলছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির পর জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজন করতে হবে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে এনসিপির ‘আইনি ভিত্তি’ নিশ্চিত করার কঠোর অবস্থান। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও গণভোটের সময়সূচি নিয়ে প্রধান দুটি পক্ষ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বিপরীত মেরুতে অবস্থান নেয়ায় রাজনৈতিক পরিবেশ ঘোলাটে হয়ে উঠছে। এর মধ্যে ১১ নভেম্বর ঢাকায় গণভোট ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে মহাসমাবেশ ডেকেছে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি। এতে নতুন করে উত্তাপ শুরু হয়েছে। তবে চেষ্টা চলছে সমঝোতারও।
চলমান রাজনৈতিক উত্তাপ প্রসঙ্গে জামায়াতের নায়েবে আমির ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “কয়েক দিনে আগে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি একটি সংলাপের আহ্বান করেছিলাম এবং উপদেষ্টা পরিষদ সেটাকে গ্রহণ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে। আমি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফোন করে বসার কথা অনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছি। তিনি আগ্রহের সাথে কথা বলেছেন। মির্জা ফখরুল বলেছেন, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের সাথে পরামর্শ করে আমাদেরকে জানাবেন।”
ডাঃ তাহের আরও বলেন, যদি বিএনপি ইতিবাচক সাড়া দেয়, তাহলে আমরা সরাসরি বিএনপির সাথে বসার আশা রাখি। এছাড়া এখন ৯ দল মাঝেমধ্যে বৈঠক করছে। তাদের একজন প্রতিনিধি আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন। আমাদের সাথে তারা বসতে চায়। তারা এতে আগ্রহী। আমরা চেষ্টা করছি, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতি ঠিক করা যায় কিনা। পরিস্থিতি ঠিক হলে সকল দলই নির্বাচনের রাস্তায় ঝাঁপিয়ে পড়বে। যখন নির্বাচন এসে যাবে, তখন সিট বণ্টন থেকে শুরু করে আসন সমঝোতা শুরু হবে।”
নায়েবে আমির বলেন, “আমি মনে করি, দ্রুত আলোচনা শুরু হওয়া উচিত। আমরা প্রতিদিনই একটু একটু করে এগোচ্ছি। পরে সময়টাও একটা বড় বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। নির্বাচনের আগে সময়ও একটা জটিলতা তৈরি করবে।
এদিকে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট প্রশ্নে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব ঘোচাতে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে ৯টি রাজনৈতিক দল। এ উদ্যোগে গণতন্ত্র মঞ্চের ছয়টি দলের সঙ্গে আছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও গণ অধিকার পরিষদ। গণতন্ত্র মঞ্চভূক্ত ছয় দল হলো গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জেএসডি ও ভাসানী জনশক্তি পার্টি। এর সঙ্গে এনসিপি, এবি পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদের নেতারা গতকাল দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান কার্যালয়ে দেড় ঘণ্টা ধরে আলোচনা করেছেন।
খুলনা গেজেট/এনএম

