বৃহস্পতিবার । ২রা অক্টোবর, ২০২৫ । ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩২
সতর্ক করলেন রাশেদ খান

এনসিপি-গণঅধিকার একীভূত হচ্ছে, চলছে দর কষাকষি

গেজেট প্রতিবেদন

তারুণ্য নির্ভর রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে একীভূত হচ্ছে গণঅধিকার পরিষদ। আসতে পারে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশও (আপ বাংলাদেশ)। ইতোমধ্যে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এ ব্যাপারে দল তিনটির মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা শেষ হয়েছে। তবে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কাকে কোন পদ দেওয়া হবে, সে বিষয়ে এখন দর-কষাকষি চলছে।

এখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। অন্যদিকে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর এবং সাধারণ সম্পাদক হলেন রাশেদ খান। আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ এবং সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ হিজবুল্লাহ।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি। একইভাবে ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পথ ধরে গড়ে ওঠা গণঅধিকার পরিষদ ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। অন্যদিকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের নিয়ে চলতি বছরের ৯ মে গঠিত হয় ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)। আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস ও আদর্শিক মিল থাকায় তিন দলের মধ্যে বহু দিন ধরেই একীভূতের আলোচনা চলছিল।

দলগুলোর নেতাদের লক্ষ্য- তরুণ প্রজন্মের জন্য বিকল্প রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সাম্প্রতিক সময়ে তারা সাংগঠনিকভাবে একাধিক বৈঠক ও মতবিনিময় করেছেন। একীভূতের প্রক্রিয়া নিয়ে যদিও উভয় পক্ষ আশাবাদী, তবে বড় জটিলতা তৈরি হয়েছে দলীয় নাম, কাঠামো ও নেতৃত্বের প্রশ্নে। কারা থাকবেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বে, কোন কাঠামোয় দল পরিচালিত হবে এবং নাম কী রাখা হবে- এসব প্রশ্ন এখনো অমীমাংসিত। তবে গত শনিবার এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ জানান, একীভূত হলেও এনসিপির নাম পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা নেই। তার ভাষায়, ‘আমরা চাই অন্যান্য দল এনসিপির সঙ্গে যুক্ত হোক। তবে নাম পরিবর্তনের কোনো ইচ্ছা আপাতত নেই।’

সূত্র জানায়, দলগুলো একীভূত হলে এর প্রধান হিসেবে এনসিপির নাহিদ ইসলামই থাকছেন। অন্যদিকে গণঅধিকার পরিষদের শীর্ষ নেতা নুরুল হক নুরকে রাখা হতে পারে দলের দ্বিতীয় অবস্থানে অথবা একটি সম্মানজনক পদে রাখার আলোচনা আছে। তিন দলের আলোচনায় প্রস্তাব এসেছে শীর্ষ নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি পর্ষদ গঠনের। এর মধ্যে গণঅধিকার পরিষদ থেকে ৫ জন এবং এনসিপি থেকে ৫ জন অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারেন। এ পর্ষদ নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেবে এবং একীভূত দলের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবে।

গত শুক্রবার রাজধানীর একটি কনভেনশন সেন্টারে প্রথমবারের মতো সারা দেশের নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেছে এনসিপি। দিনব্যাপী এই আয়োজনে অংশ নেন জেলা-উপজেলার সমন্বয়ক কমিটির প্রতিনিধি, এনসিপির যুব উইং যুব শক্তি, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংগঠনসহ দলটির অঙ্গসংগঠনের প্রতিনিধিরা।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সাংগঠনিক কার্যক্রম বেগবান করতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেনের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেন দলটির তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। এনসিপির রাজনৈতিক আদর্শ কেমন হবে, কীভাবে চলবে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম তা দলীয় নেতাদের কাছে তুলে ধরেন নাহিদ ইসলাম-আখতার হোসেনরা।

এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও গণঅধিকার পরিষদ একীভূত হওয়ার ইতিবাচক আলোচনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এমনটি জানান।

রাশেদ খান লিখেছেন, গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপি একীভূত হওয়ার ইতিবাচক আলোচনা হচ্ছে। তবে পুরো প্রক্রিয়া ভেস্তে দেওয়ার প্রচেষ্টাও থেমে নেই। তারুণ্য ঐক্যবদ্ধ হলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন শক্তির নবজন্ম হবে। এই উপলব্ধিবোধ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে থাকা উচিত। প্রণয় হয় উভয় পক্ষের কাছাকাছি আসা ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে। এরপর একে অন্যকে ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে সেই সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে হয়।

তিনি আরও লেখেন, দুটি দলের মধ্যে যে সম্পর্ক তৈরি হতে চলেছে, এটাকে বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদ উভয় দলের নেতাকর্মীদের। সব পক্ষ দায়িত্বশীল আচরণ না করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বহু মানুষের স্বপ্ন। এনসিপি গঠনের আগেও ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে প্রচেষ্টা ছিল। নতুনভাবে সেটি আবার আলোচনায়। এবার বাস্তবায়ন না হলে জনগণ আমাদের সব পক্ষকে ধোঁকাবাজ মনে করবে।

তার ভাষায়, ন্যায্য ও সাম্যতার ভিত্তিতে একীভূত হওয়ার বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদ অত্যন্ত ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে। এ ক্ষেত্রে দল ও অঙ্গসংগঠনের সবাইকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করার বিষয়ে সচেতন থাকার অনুরোধ করেন সাবেক এই ছাত্রনেতা।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন