খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপািত এড. শফিকুল আলম মনা বলেছেন, খুলনার অন্যতম ব্যস্ত সড়ক রূপসা ট্রাফিক মোড় থেকে খানজাহান আলী (রূপসা) সেতু পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ ১২ বছরেও সংস্কার না হওয়ায় বড় বড় গর্ত, উঁচু-নিচু ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উদাসিনতায় দীর্ঘ এক যুগ ধরে রাস্তা মেরামতের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে না। বুধবার (৩০ জুলাই) সকালে বিএনপি ৩০ ও ৩১নং ওয়ার্ড বিএনপির উদ্যোগে সড়ক নির্মাণের দীর্ঘসূত্রতার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূটিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রতিদিন স্কুলগামী শিক্ষার্থী, গর্ভবতী নারী, কর্মজীবী মানুষ, শ্রমিক-সবার জন্য চলাচল রীতিমতো এক যুদ্ধ। বৃষ্টিতে ডুবে যাওয়া গর্তে যানবাহন উল্টে যায়, ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়কটি খুলনা সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত হলেও ২০১০ সালে চার লেনে উন্নয়নের জন্য প্রকল্প নেয় খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)। প্রকল্পের নাম ‘খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প’।
মনা বলেন, ২০১৩ সালে একনেক সভায় অনুমোদিত এই প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৫ সালে। বারবার মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৫ সালেও কাজ শেষ হয়নি। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৯৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫৯ কোটি ২১ লাখ টাকায়। তা-ও এখনও কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও খুলনা-২ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী শফিকুল আলম তুহিন বলেছেন, সিটি করপোরেশন দাবি করছে, সড়কটি কেডিএর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে তাদের কিছু করার নেই। অন্যদিকে কেডিএ বলছে, প্রকল্পে কেবল চার লেনের কাজ অন্তর্ভুক্ত; সংস্কারের বরাদ্দ নেই, তাই তারা কিছু করতে পারছে না। ফলে উভয় পক্ষ হাত গুটিয়ে বসে থাকলেও জনদুর্ভোগ ক্রমেই বেড়েছে। এই সড়ক দিয়ে শহরে প্রবেশ করে বান্দাবাজার, চানমারী, শিপইয়ার্ড এলাকা, দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, আধুনিক রাইস মিল ও চিংড়ি প্রসেসিং জোনের কয়েক হাজার শ্রমিক। রয়েছে বাসস্থান ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত। অথচ প্রায় প্রতিদিন কেউ না কেউ সড়কের গর্তে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
তারা আরো বলেন, মাহবুব ব্রাদার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং কেডিএ প্রশাসনের দীর্ঘমেয়াদি অবহেলার কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি এখন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে জনদুর্ভোগ। রাস্তাটি খুলনা শহরের প্রবেশপথ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়রা পত্রপত্রিকায় লেখালেখি ও সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ করেও সুফল পাচ্ছেন না। বরং উন্নয়নের নামে চলছে শুধুই টালবাহানা। এই অবস্থায় দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু না হলে আগামী রবিবার কেডিএ ঘেরাও করার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
মানববন্ধনে ৩০নং ওয়ার্ডের উপস্থিত ছিলেন- মীর কবির হোসেন, কে.এম আব্দুল জলিল, সওগাতুল ইসলাম সগীর, মেহেদী হাসান লিটন, জাহান আলী, রবিউল ইসলাম রবি, নাজমুল হক, সাঈদুল ইসলাম, মামুন, জালাল, কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ, মহিলা দলের নেতৃবৃন্দ, শ্রমিক দলের নেতৃবৃন্দ, ৩০ নং ওয়ার্ডের মাদ্রাসা ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল, প্রাইমারি স্কুল এর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এছাড়া ৩১ নং ওয়ার্ডে গাজী আফসার উদ্দিন, মো. আমিন আহম্মেদ, বাবুল রানা, শহিদ খান, হুমায়ুন কবির চৌধুরী, আসাদ, কিরণ, মোকলেস, জাকির হোসেন, রিয়াজ, সালাম, দুলাল, টুকু, ইয়াকুব,মিজান, সায়েম, রিপন, তুহিন, রাইস মিল মালিক সমিতির পক্ষে মনির, নাসির, বান্দা বাজার মালিক সমিতির পক্ষে সিরাজ, ইলিয়াস, মুক্ত বাজার মালিক সমিতির পক্ষে বাবু, ফারুক, হঠাৎ বাজার মালিক সমিতির পক্ষে কামাল, রফিকুল, শিক্ষক সমিতির পক্ষে জাকির হোসেন, সেভেন রিং সিমেন্ট পক্ষে কোম্পানির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীবৃন্দ।
খুলনা গেজেট/এএজে