Edit Content
খুলনা বাংলাদেশ
বুধবার । ২৩শে জুলাই, ২০২৫ । ৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২

ই-পেপার

Edit Content

মেটিকুলাস মেলোডি এর অর্থ

রুশাইদ আহমেদ

ক্লাস শুরু হওয়ার নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট আগেই বিশাল গ্যালারি রুমে এসে ঢুকলো জাভেদ। একে একে বেঞ্চের সারিগুলো পেরিয়ে শেষের দিকের একটি বেঞ্চে গিয়ে বসে পড়লো সে। নিয়মিত সে ওই বেঞ্চটাতেই বসে।

ঈদের ছুটি শেষে ক্যাম্পাস খোলার পর পরই পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ক্লাসরুমগুলো পরিষ্কার করার অভিযান চালিয়েছে। তবু জাভেদ যেই বেঞ্চটিতে গিয়ে বসেছে, সেটিতে ছুটির সময়ে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির স্মৃতি হিসেবে এখনও কিছু ধুলো জমে আছে।

নির্ধারিত সময়ের মিনিট বিশেক পরে ক্লাস শুরু হলো। ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে চোখের চেকআপ শেষে খামারবাড়ি সিগন্যালে ৪৫ মিনিট জ্যামে আটকে থাকায় অধ্যাপক ড. মাকসুদ আলমের এই বিলম্বে ক্লাসে আসা। ততক্ষণে ক্লাসের সকলেই চলে এসেছে।

ক্লাসে ঢুকেই ড. মাকসুদ ডেইল রিটারের বই থেকে জিওমরফিক সিস্টেম নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করলেন। গুরুগম্ভীর রসকষহীন কণ্ঠে ড. মাকসুদ লেকচার দেওয়া শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই কেউ কেউ নোটডাউন করতে ব্যস্ত হয়ে গেল। তারা অবশ্য সামনের সারির বেঞ্চগুলোতে বসা। মাঝামাঝি সারির বেঞ্চে বসা শিক্ষার্থীরাও লেকচারের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোর দুয়েকটা কি-ওয়ার্ড লিখে নিচ্ছে সঙ্গে আনা খাতা কিংবা নোটপ্যাডে। কেউ কেউ আবার ডেস্কের নিচে ফোন রেখে লুকিয়ে লুকিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।

কিন্তু এরই মধ্যে নিজের খাতায় ড. মাকসুদের লেকচারের সারাংশ নোটডাউন করতে করতে ক্লান্তিকর নিদ্রায় মুদে এসেছে এক শিক্ষার্থীর চোখ। চলতি সেমিস্টারে যতবারই বিকেল তিনটার জিওমরফোলজির ক্লাসে মো. জাভেদ খন্দকার নামের এই শিক্ষার্থী ঢুকেছে, ততবারই এমনটা হয়েছে তার সঙ্গে।

দশ মিনিট ডেস্কের ওপর খোলা খাতায় মাথা রেখে ঘুমানোর পর স্বয়ং ড. মাকসুদ আলমের ডাকে ঘুম ভাঙলো জাভেদের। রুক্ষ স্বরে ড. মাকসুদ বললেন, আপনি তো গত চার ক্লাস ধরেই আমার লেকচার দেওয়ার সময় ঘুমাচ্ছেন, খন্দকার। এভাবে আর কত? জাভেদ আরেকটু সজাগ হতে হতে টিউশনির চাপের কথা বলে অজুহাত দেখাতে চাইলো।

তবে শেষ রক্ষা হলো না। টানা তৃতীয়দিনের মতো ড. মাকসুদের ক্লাসে ঘুমানোর দায়ে গ্যালারি রুম থেকে নির্ধারিত সময়ের আগেই বেরিয়ে যেতে হলো জাভেদকে।

অগত্যা করিডোরে চার-পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে ডিপার্টমেন্ট ভবনের দোতলা থেকে নেমে সোজা সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চের দিকে পা বাড়ালো জাভেদ। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে এই জায়গাটিতেই তাঁকে অপেক্ষা করতে বলেছিল দর্শনের ছাত্রী মেহজাবীন লোটাস ডিনা। জাভেদ সংক্ষেপে মজা করে ডাকে ‘মেলোডি’ বলে।

ক্লাস থাকায় আসতে দেরি হতে পারে বলে মেলোডিকে আগে থেকেই আভাস দিয়ে রেখেছিল সে। কিন্তু জিওমরফোলজি ক্লাসে ‘ঘুমকাণ্ড’- এর কারণে আগেই মুক্তমঞ্চে চলে এসেছে জাভেদ। মুক্তমঞ্চে তখন আরও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে শুরু করেছেন বসে আড্ডা দেওয়ার জন্য। আধঘণ্টা পার হওয়ার পরও মেলোডি না আসায় জাভেদ ফোন করলো তাকে।

– হ্যালো। মেলোডি, কোথায় আছিস?
– গানের ভেতর!
– ধ্যাৎ! সবসময় মশকরা ভালো লাগে না। এমনিতেই মাকসুদ স্যার ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছেন আজকেও। মেজাজটা বিগড়ে আছে।
– আজও ক্লাসে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সোহাকে স্বপ্নে দেখছিলি নাকি?
– আবার!
– আচ্ছা, আচ্ছা… বটতলার দিকে আছি। যাচ্ছি মঞ্চের দিকে।

হাসতে হাসতে ফোন রাখলো মেলোডি। তবে ১ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ফোনালাপে সে প্রাক্তন সোহা খানমের প্রসঙ্গ তোলায় স্মৃতিকাতর হয়ে ওঠে জাভেদ।

খুলনার বিএল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময়ে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে প্রায়ই তারের পুকুর এলাকার পার্কসাইড ক্যাফেতে গিয়ে বসে থাকতো তারা। নগরীর রূপসা নদীর কোলঘেঁষা সাত নম্বর ঘাট আর পুরোনো রেলস্টেশনও ছিল তাদের ঘুরে বেড়ানোর পছন্দের জায়গার তালিকায়।

ভর্তি পরীক্ষার পর দূরত্ব বাড়ে জাভেদ আর সোহার মধ্যে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে চান্স পায় জাভেদ। আর সোহা বছরখানেক পর ভর্তি হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। জাভেদ দ্বিতীয় বর্ষে ওঠার কয়েকদিন আগে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে পাস করা জুবায়ের খালিদ নামের এক সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায় সোহার।

এসব রোমন্থন করতে করতেই জাভেদের সামনে এসে দাঁড়ায় মেলোডি। দেরি হওয়ার কারণ জানতে চায় জাভেদ। মেলোডি জানায়, আগামী সপ্তাহে জাতীয় বিতর্ক উৎসব শুরু হচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি ডিবেট অর্গানাইজেশনের হয়ে সেই ইভেন্টে অংশ নেওয়ার জন্যই কিছু স্ক্রিপ্ট তৈরি করছিল সে। সেজন্যেই দেরি।

এ কথা শুনে মুক্তমঞ্চের লালচে সিরামিকের আচ্ছাদনবিশিষ্ট ইট নির্মিত আসনে বসতে বসতে ভ্রু কুঁচকে জাভেদ বলল, দল বেঁধে ঝগড়া করার প্রতিযোগিতা করে তোরা যে কী মজা পাইস— আল্লাহ মা’লুম! শুধু তাই নয়; তোদের ঝগড়া দেখার জন্য আবার মানুষও জোটে এসে কাতারে কাতারে!

জাভেদের গা ঘেঁষে বসতে বসতেই মেলোডি জবাব দিলো, বিতর্কের তুই কী বুঝিস? সারাদিন তো পড়ে পড়ে ঘুমাস ক্লাস আর ক্লাসের বাইরে। স্কুল লাইফে নাহয় গান লিখতি। এখন কী কী আধ্যাত্মিক মার্কা কবিতা লিখিস শুধু। সঙ্গে সন্ধ্যার পর আদিম ‘ছ্যাঁকাখোর’- এর মতো বাঁশি বাজাস বটতলা কিংবা ভাসানী হলের পুকুরঘাটে বসে।

জাভেদ ভেংচি কেটে বলে, আমি নাহয় তা-ও কবিতা লিখি আর বাঁশি বাজাই। তোদের মতো প্রকাশ্যে ঝগড়া করি না। কী আছে তোর মধ্যে যে, তোর ঝগড়া শোনার জন্য মানুষ ভিড় করে? পাল্টা আক্রমণ করে জাভেদ। এক কথায় প্রত্যুত্তর পায় সে: “মেলোডি!” উচ্চ হাসিতে ফেটে পড়তে পড়তে মেলোডি বলে, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় শুধু দু’দলের তর্কযুদ্ধ দেখতে নারী-পুরুষরা আসে না, বাছাধন! কেউ কেউ আসে সুপুরুষ বিতার্কিকদের দৃঢ় কণ্ঠে তর্কবাণী শুনে শিহরিত হতে। আবার কেউ আসে সুন্দরী নারী বিতার্কিকদের দৈহিক গঠনপল্লব আর মোহনীয় কণ্ঠের উন্মাদনায় ভেসে যেতে! আবারও ভেংচি কেটে আড়চোখে একবার মেলোডিকে দেখে নেয় জাভেদ।

বেলা প্রায় পড়ে এসেছে। শ্রাবণ মাসের মেঘেরাও একটু-আধটু উঁকি দিচ্ছে আকাশের দূর সীমানায়। মেলোডি বলে, তোকে তো একটা সুখবর দেওয়াই হলো না। ফোন স্ক্রলিং করতে করতেই জাভেদ নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল, বলে ফেল। শুনি।

জাভেদের কানের কাছে নিটোল ঠোঁট এনে উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে মেলোডি বলল, আগে না জানানোর জন্য দুঃখিত! ইউকের গ্ল্যাসগো ইউনিভার্সিটির ফিলোসোফি ডিপার্টমেন্টে স্কলারশিপের জন্য আবেদন করেছিলাম। সেখান থেকে অফার লেটার পেয়েছি কাল। এই মাসে ফাইনাল এক্সামগুলো শেষ হলেই চলে যাচ্ছি।

মেলোডির হঠাৎ দেওয়া সুখবরটা শুনে আকাশ থেকে পড়ে জাভেদ। বলে, বেআদব, তলে তলে এতকিছু প্ল্যান করে রেখে এখন আমাকে এসে সুখবর দেওয়া হচ্ছে? রেগে জাভেদ উঠে চলে যাচ্ছিলো। কিন্তু মেলোডি তাঁর হাত শক্ত করে ধরে বলে, রাগ করিস না। রাতে আমার বাসায় খাবি। মা নিয়ে যেতে বলেছে তোকে।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত বটতলায় বসে থাকার পর মেলোডিদের রিং রোডের অ্যাপার্টমেন্টের উদ্দেশে রওনা হলো তারা দুজনে। সাভারের জাবি ক্যাম্পাস থেকে সন্ধ্যায় রাজধানীর বিরক্তিকর জ্যাম ঠেলে গন্তব্যে পৌঁছানো সহজ কোনো বিষয় নয়। তবু শেষ পর্যন্ত রাত সাড়ে নয়টার দিকে রিং রোডের ১/এ সড়কের সামনে সিএনজি থেকে নামলো জাভেদ আর মেলোডি। কিন্তু সরু পথ ধরে জারা টাওয়ারের দিকে হাঁটা শুরু করার আগেই বাঁধলো বিপত্তি।

তাদেরকে নামিয়ে ভাড়া নিয়ে সিএনজি ড্রাইভার চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এলো শ্রাবণের বৃষ্টির হঠাৎ তোড়। অগত্যা ভিজতে ভিজতে এক দৌঁড়ে জারা টাওয়ারের স্টিলের মেইন গেট পেরিয়ে লিফটের কাছে পৌঁছালো জাভেদ ও মেলোডি। বৃষ্টিতে দুজনেরই চুল আর পোশাকের অধিকাংশ ভিজে গেছে। ঠাণ্ডায় কাঁপছে তাদের কাঁধ, বুক, চিবুক আর ঠোঁট। লিফটে উঠে একেবারে গা ঘেঁষে দাঁড়ায় দুজন। যেন উভয়ের শরীর থেকে উষ্ণ রশ্মি বিকিরিত হয়ে ঠাণ্ডার হাত থেকে রেহাই দেবে তাদেরকে। দৌঁড়ে আসার কারণে ঘন ঘন নিঃশ্বাসও পড়ছে তাদের।

লিফট ওপরের দিকে ওঠা শুরু করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মেলোডির ফোনে কল এলো। তার মা তুনাজ্জিনা হায়দার ফোন করে জানালেন, জরুরি কাজে তিনি গুলশানে গেছেন। ফিরতে আরেকটু সময় লাগতে পারে। ডাইনিং টেবিলে খাবার গুছিয়ে রাখা আছে। জাভেদ আর মেলোডি যেন খেতে বসে যায়।

মেলোডি তার হিমশীতল আঙুলগুলো দিয়ে জাভেদের বাহু আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে লিফটে। জাভেদের কণ্ঠ নীরব। তার মনে তখন হঠাৎ খুলনার সাত নম্বর ঘাটে সোহার সঙ্গে বসে বসে অস্তায়মান সূর্যের লালিমা দেখার দৃশ্য চলচ্চিত্রায়িত হচ্ছে। লিফটের ধাতব দেয়ালের ওপর প্রতিফলিত হওয়া মেলোডির সফেদ গলা-কাঁধের ঝাপসা প্রতিবিম্বও একবার পরখ করলো সে।

লিফট থেকে নেমে ছয়তলার বাসায় ঢুকার পর মেলোডি তাড়াহুড়ো করে টাওয়েল আর একটা ট্রাউজার এনে দিলো জাভেদকে। তারপর নিজের পোশাক বদলাতে চলে গেলো পাশের ঘরে।

পোশাক পাল্টে মেলোডির প্রবাসী বড়ভাই ইব্রাহিমের একটা ট্রাউজার পরে আয়নার সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে জাভেদ। ঘরের ফ্যানের হাওয়ায় শার্টটা প্রায় শুকিয়ে যাওয়ার পর সেটাও পরে নেয় সে। এরপর পা বাড়ায় ডাইনিং রুমের দিকে।

মেলোডিও সাদা সালোয়ার কামিজ পরে নিজের কক্ষ থেকে বের হয়। চুল তার টাওয়েলে মোড়া। চেহারার ওপরের মেকআপও তুলে ফেলেছে সে। জাভেদের শার্ট থেকে এখনও কিছুটা সোঁদা ঘ্রাণ ব্যাপ্ত হচ্ছে। এরই মধ্যে চলে যায় বিদ্যুৎ। ভবনের জেনারেটর নষ্ট থাকায় মুহূর্তেই অন্ধকারে ছেঁয়ে যায় গোটা অ্যাপার্টমেন্ট।

ফোনের ফ্ল্যাশলাইট অন করে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসে জাভেদ আর মেলোডি। আঁধার দূর করতে মোমবাতিও জ্বেলে নেয় তারা। বন্ধ করে ফোনের ফ্ল্যাশ। ক্ষয়িষ্ণু মোমের আলোয় তাদের মুখের ছায়া পড়ে দেয়ালে। কিছুক্ষণ সেই ছায়ার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে জাভেদ। যেন মানুষ নয়, দুটি চলমান ভাস্কর্য তারা। শ্রাবণের অঝোর ধারার ছন্দে একে অপরের মধ্যে শুধুই গলে যাওয়ার, মিশে যাওয়ার, উবে যাওয়ার এক অন্তিম প্রেরণা যেন অঙ্কিত হচ্ছে ছায়ারেখাগুলোর ওপর।

জাভেদের পাতে ভাত আর পাবদা মাছ ভুনা তুলে দেওয়ার ফাঁকে মেলোডি হঠাৎ বলে ওঠে:
– তুই চাইলে আজ রাতে থাকতে পারিস এখানে।
– আমি থেকে কী করব?
– সেটা তুই ভালো বলতে পারবি!
– অতকিছু বলতে ভালো লাগে না। খিদে পেয়েছে। খেতে দে। আন্টি কখন আসবে?
– আসবে। কাজ শেষ হলেই আসবে।

তাদের খাওয়া শেষ হওয়ার মিনিট দশেক পর ইলেকট্রিসিটি ফিরে আসে। কিন্তু ডাইনিং টেবিলের মোমবাতিটা নেভানোর কথা ভুলে যায় তারা। ড্রয়িং রুমের সোফায় গিয়ে বসে মেলোডি। জাভেদ জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে শ্রাবণের অব্যাহত বারিপাতের দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। মেলোডি ডাক দেয় তাকে।

– বৃষ্টি জীবনে দেখিসনি?
– হুম। দেখেছি, দেখছি এবং দেখব।
– অত দেখতে হবে না! এমন ভাব নিচ্ছিস যেন রাত ১১টার খবরে আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়ে রিপোর্ট করবি। ওসব ছাড়। আয়, সোফায় বোস্।

কোনো জবাব না দিয়ে জাভেদ ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় সোফার দিকে। অতি সন্তর্পণে বসে মেলোডির থেকে আধা হাত দূরত্বে। মেলোডির চোখে চোখ রেখে বলে, কী বলবি, বল। আমি বের হবো এখনই।

মেলোডি বলে, রাতটা না হয় এখানেই থাকলি। মা আসার আগপর্যন্ত অন্তত থাক। থাকলে তুই আর যুক্তরাজ্যে যাবি না? প্রশ্ন করে জাভেদ। এই প্রশ্নের উত্তর তো তুই জানিসই। কিন্তু আমাকে তুই বল— সোহার পর আর কোনো নারীকে তোর ভালো লেগেছে কি-না? পাল্টা প্রশ্ন করে মেলোডি।

প্রশ্নটা শুনেই জাভেদ আন্দোলিত হয়ে নিজের দুই মুঠোয় মেলোডির নরম বাঁ হাতটা নিয়ে এসে শক্ত করে ধরে এক নিঃশ্বাসে বলে, ভার্সিটি লাইফের প্রথম থেকেই তুই আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড। আমার লাইফের সবকিছুকে খোলা বইয়ের মতো তোর সামনে আমি মেলে ধরেছি সময়ে-অসময়ে। অথচ তুই তোর স্কলারশিপ নিয়ে বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা কখনোই বলিসনি আমাকে। বলিসনি তোর লক্ষ্য কী। এমনকি তুই নিজেই তোর পছন্দ-অপছন্দের দুয়েকটা কাজ বা জিনিসের কথা বাদে কোনো ভালো লাগার মানুষের কথা সেভাবে বলিসনি কখনও আমাকে। তাই এখন এসব বিভ্রান্তিকর প্রশ্ন করে তুই আমাকে মেটিকুলাসলি ডেস্ট্রয় করার চেষ্টা করিস না প্লিজ, মেলোডি!

জাভেদের অবস্থা দেখে হেসে ফেলে মেলোডি। বলে, ভীতু কোথাকার! তুই যখন এখনই বের হবি; তাহলে চল লিফট পর্যন্ত তোকে এগিয়ে দিয়ে আসি। লিফটে করে আর নিচে নামতে পারব না। তুই লিফটে উঠে আমার দিকে সরাসরি মেটিকুলাসলি তাকাতে পারবি না এমনিতেও!

 

খুলনা গেজেট/এএজে




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন